Friday , 23 May 2025
নিউজ টপ লাইন
তামিমের এই ত্যাগ চোখে জল এনে দেয়

তামিমের এই ত্যাগ চোখে জল এনে দেয়

এক হাতেই ব্যাটিং করলেন তামিম। ছবি টিভি থেকে নেওয়াচারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়েছে, শুধু এ ম্যাচ নয়, তামিম ইকবালের এশিয়া কাপই শেষ! বাঁ-হাতি ওপেনারকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া-আসার মধ্যে দুবাই থেকে মুঠোফোনে দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ প্রথম আলোকে অবশ্য নিশ্চিত করতে পারেননি তামিমের টুর্নামেন্ট শেষ কি না। তবে তিনিও জানালেন, এই ম্যাচে আর খেলা হচ্ছে না বাঁ-হাতি ওপেনারের।

হাসপাতাল থেকে ফিরে বিষণ্ন মুখে বসে ছিলেন ড্রেসিংরুমে। হয়তো ভাবছিলেন, ‘ইশ্‌! আবার যদি ব্যাট হাতে নামতে পারতাম…।’ কল্পচোখেও যদি দেখেন, তামিমের ভাবনায় বিদ্যুচ্চমকের মতো তখন কী খেলে গেছে, সেটি পড়ে ফেলা কঠিন কিছু নয়। মুশফিকুর রহিম উইকেট থিতু হয়ে গেছেন। লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই করে সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। মুশফিকের শুধু একজন সঙ্গী দরকার, যাঁর শুধু অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকলেই চলবে। বাকিটা মুশফিকই করে নেবেন।

সাহস, ভীষণ সাহস শুধু দেখাননি, এ তো রীতিমতো পাগলামো! ৪৭তম ওভারের এক বল বাকি থাকতে সুরঙ্গা লাকমলের বলে মোস্তাফিজুর রহমান ফিরে যেতে বাংলাদেশের স্কোর হয়ে গেল ৯ উইকেটে ২২৯। বাংলাদেশের স্কোর ওখানেই থেমে যেতে পারত। থামতে দেননি তামিম। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে সবাইকে অবাক করে যে দৃশ্যের অবতারণা হলো, সেটি শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেট কেন, ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সুন্দর দৃশ্য। সাহসের অনন্য উদাহরণ হয়ে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিম নামলেন। বাঁ-হাতি ওপেনারের এই সাহস, এই ত্যাগ চোখে জল এনে দিতে বাধ্য! দেশের জন্য, জাতীয় দলের জন্য তীব্র ব্যথাও তাঁর কাছে তুচ্ছ।

তামিম বড় ত্যাগস্বীকার করেছেন আজ। ফাইল ছবিতামিম বড় ত্যাগস্বীকার করেছেন আজ। ফাইল ছবি

বাঁ-হাতটা ঝুলিয়ে রেখেছেন, যে হাত তাঁর মূল শক্তি! আরেকবার যদি বল লাগে আঘাত পাওয়া জায়গাটায়, এই টুর্নামেন্ট কেন পুরো ক্যারিয়ারটাই তাঁর পড়ে যাবে হুমকিতে। এবার বাঁ-হাতি ওপেনারের ভাগ্যটাই খারাপ। ভিসা বিড়ম্বনায় আরব আমিরাতে যেতে কত ঝক্কি পোহাতে হয়েছে। গেছেনও ডান হাতের আঙুলের চোট নিয়ে। কপাল তাঁর এতই খারাপ, আজ আবারও সেই চোট। এবার বাঁ-হাতের কবজিতে। সব জেনে-বুঝেই শেষে আবার তামিম নামলেন। লাকমল করলেন কী, যে শর্ট বলে বাংলাদেশ ওপেনারকে মাঠছাড়া করতে বাধ্য করেছিলেন, তামিমকে সেই হাত বরাবর আবারও শর্ট বল।

বাঁ-হাতটা কোনোভাবে সামলে, এক হাতেই বলটা খেললেন তামিম। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের উদ্দেশ্যে তিনি নামেননি। বাংলাদেশের হাতে ১৯ বল আছে। মুশফিককে যদি এ সময়টা সঙ্গ দেওয়া যায়, স্কোরটা অনায়াসে চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায় প্রতিপক্ষের কাছে। এ পরিকল্পনা মেনেই মুশফিক চালিয়ে গেছেন, তামিম চোট পাওয়া হাত নিয়ে অন্য প্রান্তে সঙ্গ দিয়ে গেছেন। আর তাতেই দুজনের শেষ উইকেটে ১৬ বলে ৩২ রানের অতিমূল্যবান জুটি হয়েছে। বাংলাদেশ পেয়েছে ২৬১ রানের লড়াইয়ের স্কোর।

স্কোর, সংখ্যা, ম্যাচ, জয়, পরাজয়—সব তুচ্ছ হয়ে যায় তামিমের এই সাহসিকতা আর উদার মানসিকতার কাছে। মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রায় বলেন, এটা শুধুই খেলা, যুদ্ধ তো আর নয়! অধিনায়কের কথায় যুক্তি আছে অবশ্যই। তবে এটিও লড়াই। এ যে দেশের সম্মান-গৌরব বয়ে আনার লড়াই। আর এ লড়াইয়ে কখনো কখনো নিজেকে যে ঝুঁকির মধ্যে অনায়াসে ফেলে দেওয়া যায়, তামিম সেটিই আজ প্রমাণ করলেন।

দলের প্রয়োজনে তামিম বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তবে দিন শেষে চিকিৎসাবিদ্যাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। তামিমের চোট এতটাই গুরুতর, এশিয়া কাপ আসলেই শেষ কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। থাকুক। তামিম যদি আর না-ও খেলতে পারেন, আজ যে সুন্দরতম দৃশ্য উপহার দিয়েছেন, সেটি এই এশিয়া কাপ কেন, হৃদয়ে গেঁথে থাকবে বহুদিন। সময়ের তীব্র স্রোতও অনিন্দ্যসুন্দর এই দৃশ্য মুছতে পারবে না নিশ্চিত।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

May 2025
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
Scroll To Top