Tuesday , 27 May 2025
নিউজ টপ লাইন
বাংলাদেশের বধির শিশুদের পাশে থাকা এক নারী

বাংলাদেশের বধির শিশুদের পাশে থাকা এক নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বধির হয়ে জন্ম নেয়া এক নারী ৩৯ বছর বয়সে প্রথম কানে শুনতে পান। কছলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট অপারেশনের মাধ্যমে তিনি প্রথম কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন। এটা তার কাছে একেবারেই নতুন একটা অনুভূতি। নিজে বধির হয়ে জন্মানোয় তিনি খুব ভালো করেই বধিরদের কষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন। যার কথা এতক্ষণ বলছিলাম তিনি জো মিলনে।

যেদিন জো কানে শুনতে পেলেন সেদিন পুরো বিষয়টি ইউটিউবে ভিডিও আকারে প্রচার করা হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ জোর জীবনের ওই নতুন অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন।

কানে শুনতে পাওয়ার পর থেকেই তিনি অন্যদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। একারণে তিনি বাংলাদেশে এসে শত শত বধির শিশুর পাশে দাঁড়ালেন।

jo-milone

জোর একজন ভালো বন্ধু ছিলেন আমিনা। যখন আমিনার ১৬ বছর তখন তার বিয়ে হয়ে যায় এবং সে বাংলাদেশে চলে আসে। তখন থেকেই জোর সঙ্গে আমিনার আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

আমিনা জানান, তাদের বন্ধুত্বের পেছনে একটা গল্প আছে। আমিনারা যেখানে থাকতেন সেখানে আমিনার পরিবারের লোকজনই একমাত্র এশিয়ান ছিলেন। আর জো ছিলেন বধির। অন্যদের সঙ্গে খুব একটা মিশতেন না আমিনা। আর জো কানে শুনতে পারতেন না বলে তার অন্যদের সঙ্গে খুব একটা সখ্যতা ছিল না। তবে তাদের দুজনের মধ্যে অল্প কয়েকদিনেই খুব ভাব জমে উঠেছিল।

তিনি বলেন, আমরা যে কতটা ঘনিষ্ঠ ছিলাম তা আমরা নিজেরাও জানতাম না। আমাদের খুব সুন্দর ছোট একটা জগৎ তৈরি হয়েছিল। আমরা আমাদের ভবিষ্যত নিয়েও অনেক পরিকল্পনা করতাম। আমরা যখন বড় হতে শুরু করলাম তখন আমরা সব সময় এটা চিন্তা করতাম যে একদিন আমরা বাংলাদেশের দরিদ্র লোকদের সাহায্য করব।

jo-milone

সেসময় দ্য অসমন্ডস নামের একটি ব্যান্ড দলের ছয় ভাই তাদের বধির বড় ভাইয়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছিল। তারা জোর ওই ভিডিওটি দেখেছিলেন। তারা ব্রিটেনে তাদের দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিয়ারিং ফান্ডের প্রতিনিধি হতে জোকে অনুরোধ করলেন।

জো তাদের কাছে নিজের সম্মতির কথা জানালেন এবং তিনি এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বধির শিশুদের সহায়তা করার বিষয়টি তুলে ধরলেন। জো জানালেন, বাংলাদেশের ৫ ভাগ শিশুই বধির। অর্থাৎ ১২ লাখ শিশু কানে শুনতে পায় না। এরপর ওই ফান্ডের উদ্যোগে দুই দিনে প্রায় ৫শ শিশুকে কানে শোনার যন্ত্র দেয়া হয়েছিল।

আসলে কোছলিয়ার ইমপ্ল্যান্টের চেয়ে এসব যন্ত্র বেশি ভালো। এসব ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস মস্তিষ্কে বিভিন্ন শব্দের সিগন্যাল পাঠায়। যার ফলে শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।

jo-milone

জো বলেন, প্রথমবার কোনো শব্দ শুনতে পাওয়ার অভিজ্ঞতা সত্যিই খুব অদ্ভূত। যন্ত্রের সাহায্যে প্রথমবারের মত কানে শুনতে পেয়েছে এমন অনেককেই আপনি দেখবেন তারা আনন্দে কেঁদে ফেলছেন। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই যন্ত্রগুলো সবার ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। বিশেষ করে জন্মগতভাবে বধির শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় এই যন্ত্র কাজ করে না।

রোকেয়া বেগম নামের এক নারীর দুই ছেলে এবং এক মেয়ে কানে শুনতে পেত না। কিন্তু কানে যন্ত্র লাগানোর পর তারা এখন শুনতে পাচ্ছে। তিনি বলেন, তারা আমার কথা শুনতে পাচ্ছে, আমার সঙ্গে কথা বলতে পারছে এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কি হতে পারে?

জো এবং আমিনা বলেন, আমিনার নিজের দেশে শিশুদের সাহায্য করার যে স্বপ্ন তারা দেখছিল তা সত্যি হয়েছে। তবে জো বলছেন, তার একার পক্ষে হয়তো এটা কখনোই সম্ভব হতো না। এ কাজে যারা তাদের সহায়তা করছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন তিনি।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

May 2025
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
Scroll To Top