Saturday , 24 May 2025
নিউজ টপ লাইন
বিপিএল-৩ চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

বিপিএল-৩ চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

স্পোর্টস ডেস্ক: ২৩ দিনের জমজমাট লড়াইয়ের পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) তৃতীয় আসরের ফাইনালে জয় পেল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। দম বন্ধ করা ম্যাচের শেষ ওভারের শেষ বলে জয় তুলে নেয় ভিক্টোরিয়ান্স। বরিশাল বুলসকে ৩ উইকেটে হারাতে জয়সূচক রানটি করেন অলোক কাপালি। তৃতীয় বারের মতো শিরোপা হাতে তুললেন মাশরাফি।

মাহামুদুল্লাহ রিয়াদের বরিশাল বুলস মাশরাফি বিন মর্তুজার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে সংগ্রহ করে ১৫৬ রান। ৪ উইকেট হারানো বুলসের হয়ে ব্যাট হাতে সফল হন দলপতি মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ, শাহরিয়ার নাফিস আর সেকুজে প্রসন্ন। বরিশালের ছুঁড়ে দেওয়া ১৫৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৭ উইকেট হারিয়ে শেষ বলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়।

স্কোর: বরিশাল বুলস: ১৫৬/৪ (২০ ওভার)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৫৭/৭ (২০ ওভার)
ফল: কুমিল্লা ৩ উইকেটে জয়ী

কুমিল্লা-বরিশালের মধ্যকার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হয়। হাইভোল্টেজ এ ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং নেন কুমিল্লার দলপতি মাশরাফি। ব্যাট হাতে বরিশালের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন মেহেদি মারুফ এবং সেকুজে প্রসন্ন।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে বুলসের ওপেনার মেহেদি মারুফ এলবির ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন। আসহার জাইদির বলে সাজঘরে ফেরেন মারুফ। আউট হওয়ার আগে ১৩ বলে একটি ছক্কায় ১১ রান করেন মারুফ।

দলীয় ১৯ রানের মাথায় ওপেনার মেহেদি মারুফ ফিরে গেলে ব্যাট হাতে নামেন টাইগার ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান। আরেক ওপেনার সেকুজে প্রসন্নের সঙ্গে জুটি বাধেন রানে ফেরা সাব্বির। তবে, ইনিংসের অষ্টম ওভারে বিদায় নেন প্রসন্ন। ব্যাটে দারুণ ঝড় তুলে স্টিভেন্সের বলে বোল্ড হওয়ার আগে লঙ্কান তারকা প্রসন্ন ১৯ বলে দুটি করে চার ও ছক্কায় ৩৩ রান করেন।

বরিশাল প্রথম ওভার শেষে ২ উইকেট হারিয়ে তোলে ৬৭ রান।

বরিশালের সমর্থকদের আরেকটি বড় ইনিংসের দাবী পূরণ করতে পারেননি সাব্বির। গত দুই ম্যাচের মতো ফাইনালের মঞ্চে হাসেনি তার ব্যাট। মাশরাফির করা ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বোল্ড হন সাব্বির (৯)। দলকে কিছুটা পিছিয়ে রেখে সাব্বির বল মোকাবেলা করেন ১৯টি। তার বিদায়ে ব্যাট হাতে আসেন দলপতি মাহামুদুল্লাহ।

টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে দলীয় ৬৮ রানের মাথায় হারায় বরিশাল বুলস। এরপর বড় জুটির ইঙ্গিত দিয়ে খেলতে থাকেন দুই টাইগার ব্যাটসম্যান মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ এবং শাহরিয়ার নাফিস। ২৭ বলে তারা দু’জন স্কোবোর্ডে আরও ৫০ রান যোগ করেন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৯৭ ম্যাচ খেলা মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ এ ম্যাচের মধ্যদিয়ে দেড় হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।

শেষ ওভারে বিদায় নেন বরিশাল দলপতি মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ। কুলাসেকারার বলে বোল্ড হওয়ার আগে তিনি ৩৬ বলে ৪৮ রান করেন। অর্ধশতক থেকে দুই রান দূরে থাকতে আউট হলেও তার ব্যাট থেকে আসে ছয়টি চার আর একটি ছক্কা।

শাহরিয়ার নাফিস ৩১ বলে ৪৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। তার ইনিংসে ছিল ২টি চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কার মার। কেভিন কুপার দুটি বল মোকাবেলা করে ৭ রান অপরাজিত থাকেন।

কুমিল্লার হয়ে ৪ ওভার বল করে মাশরাফি ২৮ রান খরচায় তুলে নেন একটি উইকেট। ৪ ওভারে জাইদির খরচ হয় ২৬ রান, দখল করেন একটি উইকেট। ৪ ওভারে ৩৫ রানের বিনিময়ে কোনো উইকেট তুলে নিতে পারেননি আবু হায়দার। স্টিভেন্স ৩ ওভারে ১৯ ও নাঈম জুনিয়র এক ওভারে ৯ রান দিয়ে থাকেন উইকেট শূন্য। লঙ্কান পেসার কুলাসেকারা ৪ ওভারে ৩৭ রান খরচ করে একটি উইকেট তুলে নেন।

কুমিল্লার হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন লিটন দাস এবং ইমরুল কায়েস। প্রথম দুই ওভারে কুমিল্লার দুই ওপেনার তুলে নেন ২১ রান। প্রথম দুই ওভারে দারুণ খেললেও ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ফিরে যান লিটন দাস। পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ সামি নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়ে দেন ৩ রান করা লিটনকে।

পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভারে এক উইকেট হারিয়ে কুমিল্লা তুলে নেয় ৪৯ রান। ১০ ওভার শেষে এ সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭৭ রান।

দলীয় ২৩ রানের মাথায় ওপেনার লিটন দাস ফিরে গেলে রানের চাকা ঘোরানোর দায়িত্ব পালন করেন আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েস এবং পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান আহমেদ শেহজাদ।

দশম ওভারেরে শেষ বলে বিদায় নেন আহমেদ শেহজাদ। মাহামুদুল্লাহর বলে এমরিতের তালুবন্দি হওয়ার আগে পাকিস্তানি এ ব্যাটসম্যান করেন ৩০ রান। তার ২৪ বলের ইনিংসে ছিল তিনটি বাউন্ডারি। কায়েসের সঙ্গে ৩৭ বলে ৫০ রান তোলা শেহজাদ ৫৪ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন।

১২তম ওভারে বিদায় নেন ইমরুল কায়েস। অর্ধশতক হাঁকিয়ে দলকে ভালো অবস্থানে রাখতে বাঁ-হাতি এ ব্যাটসম্যান খেলেন ৫৩ রানের ইনিংস। তার ৩৭ বলের ইনিংসে ছিল ছয়টি চার আর তিনটি ছক্কা। দলীয় ৯২ রানের মাথায় মাহামুদুল্লাহ রিয়াদের বলে সাব্বিরের হাতে ধরা পড়েন ইমরুল।

১৬তম ওভারে রানআউট হয়ে ফেরেন জাইদি। তার ব্যাট থেকে আসে ১৬ রান। জাইদির ছোট ইনিংসে ছিল একটি করে চার ও ছক্কার মার।  ১৯তম ওভারে কেভিন কুপার আক্রমণে এসে স্টিভেন্স (৮) আর মাশরাফিকে (০) ফিরিয়ে দিলে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে কুমিল্লা।

শেষ ওভারে কুমিল্লার প্রয়োজন হয় ১৩ রান। মোহাম্মদ সামির প্রথম বলে দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হন শুভাগত হোম (১)। দ্বিতীয় বলে লেগবাই হলে এক রান কমে কুমিল্লার। তৃতীয় বলে অলোক কাপালি চার হাঁকিয়ে দেন। চতুর্থ বলেও চার হাঁকান কাপালি। পঞ্চম বলে দুই রান নেন কাপালি। শেষ বলে প্রয়োজন হয় এক রান। কাপালি সেটিও তুলে নিলে শেষ বলে জয় পায় কুমিল্লা।

অলোক কাপালি ২৮ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চারের মার।

বরিশালের হয়ে আল আমিন, এমরিত আর প্রসন্ন কোনো উইকেট তুলে নিতে পারেননি। ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে রিয়াদ নেন দুটি উইকেট। কেভিন কুপার ৪ ওভারে ৩১ রানের বিনিময়ে নেন দুটি উইকেট। মোহাম্মদ সামি ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে ২৪ রানে নেন একটি উইকেট।

এর আগে ১০ ম্যাচের ৭টি জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে নেট রানরেটে এগিয়ে থেকে টেবিলের শীর্ষস্থান নিয়ে প্রথম দল হিসেবে মাশরাফির কুমিল্লা উঠে যায় শেষ চারে। শেষ চারেও সেই একই ঝলক অব্যাহত থাকে মাশরাফিদের। প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে রংপুরকে ৭২ রানে হারিয়ে উঠে যায় স্বপ্নের ফাইনালে। অপরদিকে কুমিল্লার সমান ১০ ম্যাচের ৭টিতে জয় নিয়ে ১৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করলেও নেট রানরেটে পিছিয়ে থেকে শেষ চার নিশ্চিত করে রিয়াদের বুরিশাল। এলিমিনিটর ম্যাচে ঢাকাকে আর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে রংপুরকে হারিয়ে কুমিল্লার সঙ্গী হয় বরিশাল।

বরিশাল একাদশ: মাহামুদুল্লাহ, সাব্বির রহমান, আল আমিন হোসেন, শাহরিয়ার নাফিস, মেহেদি মারুফ, নাদিফ চৌধুরি, রনি তালুকদার, সেকুজে প্রসন্ন, মোহাম্মদ সামি, কেভিন কুপার এবং রায়াদ এমরিত।

কুমিল্লা একাদশ: মাশরাফি, লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, শুভাগত হোম, নাঈম ইসলাম (জুনিয়র), আবু হায়দার, অলোক কাপালি, স্টিভেন্স, আসহার জাইদি, আহমেদ শেহজাদ এবং কুলাসেকারা।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

May 2025
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
Scroll To Top