Friday , 16 May 2025
নিউজ টপ লাইন
রামপাল আন্দোলন কি ভারত বিরোধিতায় মোড় নিচ্ছে?

রামপাল আন্দোলন কি ভারত বিরোধিতায় মোড় নিচ্ছে?

 সুন্দরবনের কাছে রামপালে ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হতে যাচ্ছে সেটি বিরুদ্ধে আন্দোলন অনেক দিন ধরেই চলছে। কিন্তু সম্প্রতি এই প্রকল্পের বিরোধিতা করতে গিয়ে ভারত বিরোধিতার মাত্রা জোরালো হচ্ছে। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে রাস্তার আন্দোলন জোরালো না হলেও ফেসবুকে অনেকে নানাভাবে ভারতের সমালোচনায় মুখর।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রথমে আন্দোলন শুরু করে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নামের একটি বাম ঘরানার সংগঠন। এ সংগঠনটি ঢাকার রাস্তায় বিক্ষোভ এবং রামপাল অভিমুখে ‘রোড মার্চ কর্মসূচী’ করেছে। কিন্তু এসব আয়োজনে মানুষের অংশগ্রহণ ছিল হাতে গোনা। প্রথম দিকে তাদের এই আন্দোলনকে অনেকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি।

রাস্তার আন্দোলনে অংশ না নিলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনেকেই ফেসবুকে রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু এসব লেখালেখিতে অনেকেই স্পষ্টত ভারত বিরোধিতায় সোচ্চার।

প্রকল্পের স্থানটি সুন্দরবনের মধ্যে হওয়ায় এর বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই আন্দোলন চলছে

কেন এমন হচ্ছে? রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প কি বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতার প্লাটফর্ম হয়ে উঠছে?

রামপাল প্রকল্প বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তাদের শুরু করা আন্দোলন কি ভারত-বিরোধী প্লাটফর্ম হয়ে উঠছে?

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মনে করেন, সেরকম যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টির জন্য বাংলাদেশ ও ভারত সরকার দায়ী। তিনি মনে করেন রামপাল প্রকল্প দু’দেশের জন্য একটি ‘চিরস্থায়ী শত্রুতা’ সৃষ্টির মাধ্যম হয়ে দাঁড়াবে। এ বিষয়টিতে অনেকে সুযোগ নিতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “ সে কারণেই আমরা বলেছি যে, ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে এমন প্রকল্প নিয়ে ভারতের অগ্রসর হওয়া উচিত না এবং বাংলাদেশেরও সেটা গ্রহণ করা উচিত না – যেটা দু’দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ককে ব্যাহত করবে।”

যারা রামপাল প্রকল্প বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তাদের যুক্তি ছিল এ প্রকল্প সুন্দরবন ধ্বংস করবে। কিন্তু ধীরে –ধীরে এর সাথে ভারত বিরোধিতার শ্লোগানও যুক্ত করেন অনেকে।

সম্প্রতি ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে সেখানে কিছু ছাত্র-ছাত্রী তার গাড়ির সামনে নজিরবিহীন বিক্ষোভ করেছে। সেখানে ‘Go back India বা ভারত ফিরে যাও’ এবং সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে পোস্টার বহন করা হয়।

ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে রামপাল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে

ভারত বিরোধিতার এসব শ্লোগান সরকারের প্রতিপক্ষ কিছু রাজনৈতিক দলের মাঠ পর্যায়ের সমর্থকরা সমর্থন করছেন। যদিও মূল রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে একবারেই নীরব।

শনিবার দেশের বিভিন্ন শহীদ মিনারে রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে ‘তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।’ কিন্তু সেসব সমাবেশে যোগ দেবার জন্য সরকারের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের মাঠ পর্যায়ের সমর্থকরা ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছে।

তাহলে বিষয়টি কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? জিজ্ঞেস করেছিলাম ফারহান শাহরিয়ার পুলককে। যিনি কয়েকদিন আগে ভারতীয় হাই কমিশনারের গাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেছেন।

মি: পুলক বলেন, তাদের আন্দোলনের সাথে ভারত বিরোধিতার কোন সম্পর্ক নেই। তারা শুধু সুন্দরবন রক্ষার জন্যই রাস্তায় নেমেছেন।

“হয়তো কিছু-কিছু মানুষ বা কিছু-কিছু রাজনৈতিক দল তাদের স্বার্থের জন্য এসব কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু আমরা সেটা সমর্থন করিনা,” বলছিলেন মি: পুলক।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছে দুই দেশ।

রামপাল প্রকল্প নিয়ে বিরোধিতা যেমন আছে, তেমনি এর পক্ষেও মানুষ আছে। এর পক্ষে অনেকেই মনে করেন, এ প্রকল্প বন্ধ করার জন্য অনেকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভারত বিরোধিতাকে উসকে দিচ্ছে।

বাংলাদেশের জ্বালানী এবং বিদ্যুৎ খাতের একটি ম্যাগাজিন ‘এনার্জি ও পাওয়ার’ । এর সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন বলেন রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই একটি প্রচারণা আছে যে , ভারতীয় অংশে সুন্দরবনের কাছে প্রকল্পটি করতে না পেরে বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

মি: হোসেন বলেন, “ অনেকে মনে করছেন ইন্ডিয়ান গর্ভমেন্ট চাইলেই এটি বন্ধ হয়ে যাবে।যেহেতু বাংলাদেশের সরকারের কাছ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা, সেজন্য প্রকল্পের বিরোধিতা কারীরা এটাকে এন্টি ইন্ডিয়ান সেন্টিমেন্ট (ভারত বিরোধী মনোভাব) হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।”

মোল্লা আমজাদ হোসেন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত সবসময় একটি স্পর্শকাতর বিষয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থন প্রকাশ্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ নজরুল মনে করেন রামপাল প্রকল্পকে কেন্দ্র করে ভারতের যে সমালোচনা করা হচ্ছে, তার সাথে ভারত-বিরোধিতার কোন সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন যারা এ প্রকল্পের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের অনেকেই ভারত ও সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

অধ্যাপক নজরুল বলেন, “ বর্তমান সরকারের সাথে ভারতে এমন একটি সম্পর্ক, বহু মানুষ বিশ্বাস করে, ভারতের পক্ষে বর্তমান সরকারকে কনভিন্স কের এমন কিছু করা সম্ভব যেটা অন্য কোন দেশের পক্ষে সম্ভব নয়।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ নজরুল মনে করেন, রামপাল প্রকল্পকে কেন্দ্র করে ভারতের যে সমালোচনা করা হচ্ছে, তার সাথে ভারত-বিরোধিতার কোন সম্পর্ক নেই

অধ্যাপক নজরুলের বর্ণনায়, অনেকে মনে করেন এ প্রকল্পটি বাংলাদেশের ইচ্ছায় হচ্ছে না। কেউ-কেউ এমনও ভাবেন, এটা হয়তো ভারতের চাপে বা ভারত কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

এ প্রকল্পের সাথে পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশ জড়িত থাকলে সে দেশ বিরোধী একটি সেন্টিমেন্টও বাংলাদেশে গড়ে উঠতো বলে অধ্যাপক নজরুল উল্লেখ করেন।

তথ্যসূত্র : বিবিসি অনলাইন।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

May 2025
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
Scroll To Top