Friday , 23 May 2025
নিউজ টপ লাইন
হাসনাতের ৮, তাহমিদের ৬ দিনের রিমান্ড

হাসনাতের ৮, তাহমিদের ৬ দিনের রিমান্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই ঘটনায় তাহমিদ হাসিব খানেরও ফের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে ৬ দিনের।

শুনানি শেষে শনিবার ঢাকা মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক হাসনাতের ৮ দিন এবং আরেক মহানগর হাকিম মো. গোলাম নবী তাহমিদের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হাসনাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার দুপুরে আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক  হুমায়ুন কবির।

অপরদিকে তাহমিদকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন ঢাকা মহানগর কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার শহিদুর রহমান। তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে ফের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। তাহমিদের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন এবং ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে হাসনাতের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ১ জুলাই হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিদের হামলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান নিহত হন। রাতের বিভিন্ন সময় তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জন জিম্মিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। এই ভয়াবহ হামলার সময় জঙ্গিদের সঙ্গে হোটেলের মধ্যে উক্ত আসামি সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করেছিলো এবং জঙ্গিদের সঙ্গে সখ্য করেছিল। আসামি হাসনাত নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটির প্রাক্তন শিক্ষক। এর আগে নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল। হাসনাত ও ওই ঘটনায় জড়িত অপর আসামিরা দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। ওই ঘটনায় কে বা কারা জড়িত তা উদঘাটনের লক্ষ্যে এই আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।

হাসনাতের আইনজীবী মাহবুবুল আলম দুলাল রিমান্ড বাতিলপূর্বক তার জামিনের প্রার্থণা জানান।

আর রাষ্ট্রপক্ষে হেমায়েত উদ্দিন খান (হিরণ) বলেন, ‘এই আসামি যে ওই ঘটনায় জড়িত তার ভিডিও চিত্র আছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।’

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত হাসনাতের জামিন নামঞ্জুর করে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত ৪ আগস্ট হাসনাত করিম এবং তাহমিদ হাসিব খানকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তাদের ৮ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, ৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে গুলশানে আড়ং এর সামনে থেকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক হাসনাত করিমকে এবং তার দেওয়া তথ্য মতে ওই দিনই সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি-ব্লক থেকে কানাডার টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে পুলিশ।

তাহমিদ হাসিব খান আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে। তিনি কানাডার স্থায়ী নাগরিক। ১ জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলার দিনই দুপুরে ঢাকায় আসেন তাহমিদ।

হাসনাত বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের দ্বৈত নাগরিক। সম্প্রতি তিনি দেশে এসে বাবার প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিভিন্ন সূত্র বলেছে, ঘটনার দিন মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে তিনি হলি আর্টিজানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন।

এদিকে ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৯ জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরা হলেন, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ক্যাশিয়ার আল-আমিন চৌধুরী সিজান, ওই রেস্তোরাঁর স্টাফ মিরাজ হোসেন, রাসেল মাসুদ, বাবুর্চি মো. শাহিন, শাহরিয়ার, তুহিন, শিশির ও মেট্রোরেল প্রকল্পের ড্রাইভার বাসেদ সরদার এবং রেস্তোরাঁয় খেতে আসা ভারতীয় নাগরিক সত্য প্রকাশ।

এর আগে এই ঘটনায় মিরপুর এলাকার আরিফাবাদ হাউজিংয়ের তত্ত্বাবধায়ক দাউদ পাটোয়ারী, জঙ্গিদেরকে ভাড়া দেওয়া বাড়ীর মালিক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন আহসান, জঙ্গিদের ভাড়া করা বাড়ীর ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান তুহিন ও রাজধানীর শেওড়া পাড়ায় জঙ্গিদের ভাড়া বাড়ীর মালিক মো. নুরুল ইসলামকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে তারা কারাগারে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে কূটনৈতিক এলাকা গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারী জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে। এ সময় অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান নিহত হন। রাতের বিভিন্ন সময় তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জন জিম্মিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরদিন সকালে যৌথ বাহিনী কমান্ডো অভিযান চালায়। এতে ৫ হামলাকারী নিহত এবং একজন গ্রেপ্তার হয়। জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জিম্মিকে।

এই ঘটনায় নিহত জঙ্গিরা হলেন মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও সফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল।

রেস্টুরেন্টে হামলার পর গত ৪ জুলাই রাতে গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

May 2025
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
Scroll To Top