জলবায়ু জীব বৈচিত্র সংরক্ষন ও ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উন্নয়নে
ঝিনাইদহে ব্যতিক্রমী নানা আয়োজন
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ,
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রামনগর-কুমড়াবাড়িয়া সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয় মাঠে জলবায়ু, জীববৈচিত্র সংরক্ষন ও ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উন্নয়নে ব্যতিক্রমী নানা প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে এ আয়োজন করেন এলাকার গাছপ্রেমী নামে পরিচিত জহির রায়হান নামের এক যুবক। অনুষ্ঠানে কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দার আলী এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদ প্রশাসক এ্যাড, আব্দুল ওয়াহেদ জোয়ার্দ্দার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকার নায়ন, ঝিনাইদহ জজ কোর্টের বিশেষ পি পি (নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল) এ্যাডঃ আঃ রশিদ, স্বাধীন জীবনের নির্বাহী পরিচালক আঃ রাজ্জাক নাছিমসহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন শিক্ষানুরাগী আমজাদ হোসেন। প্রতিযোগীতার মধ্যে ছিল, তৈলাক্ত কলাগাছ বেয়ে উপরে ওঠা, গলায় লাউ বেধে ফুটবল খেলা, বাই-সাইকেল রেসসহ নানা প্রতিযোগীতা। আলোচনা সভা শেষে খেলায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এ সময় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, জহির রায়হান এর মতো সাদা মনের মানুষ দেশের প্রতিটি এলাকায় থাকা খুবই প্রয়োজন। তার মতো দেশ প্রেমিক মানুষ আজ এলাকার ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়ণ, পাখিদের আবাস স্থল তৈরি রাস্তায় গাছ লাগানোসহ নানা ধরণের কর্মসূচী হাতে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমি আজ থেকে তার পাশে থেকে সকল প্রকার সহযোগীতা করতে চায়। পাশাপাশি তিনি জহির রায়হানের এ কাজে সহযোগীতার জন্য এলাকা বাসীর সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগর বাথান বাজারে ঢুকে জানা গেল জীববৈচিত্র রক্ষায় পাখির নিরাপদ আবাস সৃষ্টির লক্ষ্যে জহির রায়হান-ই গাছে-গাছে মাটির কলস বেঁধেছেন। শুধু জীব বৈচিত্র রক্ষা-ই নয়, তিনি অসহায় দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার খরচ বহন করেন রাস্তার দু’ধারে সবুজ গাছের সারি, ক্লান্ত পথিকের একটু স্বস্তির জন্য রাস্তার পাশে বেশ কয়েকটি ইটের তৈরী বসার স্থান, এলাকার বিভিন্ন স্কুল মাদরাসা ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষের বাড়ির আঙিনায় গাছের চারা রোপন, চাষিদের তৃষ্ণা লাঘবে মাঠের মধ্যে টিউবওয়েল স্থাপন, দরিদ্র শ্রেণির আমিষের চাহিদা মেটাতে বিলে মাছ অবমূক্ত করাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত তিনি। জহির পেশায় একজন রঙ মিস্ত্রি। এ পেশায় তার যা আয় হয় তার অর্ধেক ব্যয় করেন সামাজিক কাজে। আর্থিক অনঠনে প্রাইমারীতে দুই তিন মাসের বেশি পড়াশুনা তার কপালে জোটেনি। তবে নৈশ বিদ্যালয়ে কিছুটা পড়ালেখা শিখেছেন। জহিরের স্ত্রী তার সকল ভালো কাজে সাহায্য করেন এবং উৎসাহ দেন।
ঝিনাইদহে গুম হওয়া গৃহবধু
৪ বছরেও ফেরেনি !
জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহ,
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার দখলপুর গ্রামের মনোয়ারা খাতুন (৩০) নামে এক গৃহবধু চার বছর ধরে গুম হয়ে আছেন। কোথায় আছেন, নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে মনোয়ারা খাতুনের স্বামীসহ ওই পরিবারটির কাছে কোন তথ্য নেই। এ নিয়ে হরিণাকুন্ডু থানায় একটি জিডি করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। গুম হওয়া গৃহবধূ মনোয়ারা খাতুন (৩০) হরিণাকুন্ডু উপজেলার দখলপুর গ্রামের কুটি মন্ডলের মেয়ে এবং আকরাম হোসেন মন্টু মিয়ার স্ত্রী। মনোয়ারা খাতুনের স্বামী আকরাম হোসেন মন্টু জানান, ২০১২ সালের ৭ মার্চ থেকে মনোয়ারাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, একই গ্রামের মৃত ইমান আলী সরদারের ছেলে আব্দুস সাত্তারের কাছে ৪৬ শতক জমি এক লাখ টাকায় বন্ধক রাখেন তার স্ত্রী। এ ঘটনার পর থেকেই মনোয়ারা খাতুন লাপাত্তা। তার ধারণা বন্ধকি জমি হাতিয়ে নিতেই মনোয়ারাকে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়েছে। আকরাম হোসেন মন্টু আরো জানান, হরিণাকুন্ডু থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের জমির বন্ধক গ্রহিতা আব্দুস সাত্তারকে সে সময় ৫ দিনের মধ্যে মনোয়ারাকে হাজির করার জন্য সময় বেধে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ আর বেশিদুর এগোয়নি। তদন্ত থেমে গেছে। জমির বন্ধক গ্রহীতা আব্দুস ছাত্তার টাকা ওয়লা মানুষ। তিনি টাকা দিয়ে পুলিশকে থামিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মন্টু। তিনি বলেন, কাজের জন্য তিনি সব সময় বাইরে থাকেন। এই সুযোগে তার স্ত্রীকে গুম করে প্রতিবেশি সাত্তার তার শ্বাশুড়ির ৪৬ শতক মুল্যবান জমি বন্ধক রাখার কথা প্রচার করনে। আব্দুস সাত্তার দেড়শ টাকার স্ট্যাম্পে একটি বন্ধকী চুক্তিনামাও দেখাচ্ছেন, যাতে কোন সাক্ষি নেই। ভূয়া বন্ধক নামার মাধ্যমে জমি দখলের জন্য আমার স্ত্রীকে গুম করা হয়েছে বলেও মন্টু অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় শালিস বৈঠক হওয়ায়র পর সাত্তার মন্টুর শ্বাশুড়ি ও তাকেও হুমকী দিয়েছিলেন। মন্টু অভিযোগ করেন, এ ঘটনার পর ২০১২ সালের ২৭ জুন শৈলকুপার কেসমত মাইলমারী গ্রামের ওহিমুদ্দির বাড়ির সেফটি ট্যাংকীতে অজ্ঞাত এক গৃহবধুর লাশ পাওয়া যায়। লাশটি দেখতে তার স্ত্রীর মতো মনে হলেও পচেগলে যাওয়ার কারণে ঠিকমতো সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। অজ্ঞাত ওই গৃহবধুর পরিচয় ও ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হলে মনোয়ারা গুমের রহস্য পাওয়া যেত বলে তিনি মনে করেন। তিনি বিষয়টি তদন্তের জন্য সিআইডির হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ ব্যাপারে হরিণাকুন্ডুর দখলপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার জানান, মন্টুর মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। এই গুম হওয়ার সঙ্গে তিনি মোটেও জড়িত নয়। বিষয়টি নিয়ে হরিণাকুন্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাতাব উদ্দীন জানান, আমি নতুন এসেছি। আর বিয়টি ৪ বছর পার হয়ে গেছে। নতুন করে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখো যেতে পারে।