নিজস্ব প্রতিবেদক:
সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এবং মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় আক্রান্ত উত্তরের জেলাসমূহের দুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ব্রহ্মপূত্র, যমুনা, পদ্মা ও শাখা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বাড়ছে জনদুর্ভোগ।
বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ তাদের পরিবার পরিজন, গবাদি পশু ও সংসারের মালামাল নিয়ে সড়ক ও বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, বিভিন্ন এলাকায় সরকারি ত্রাণ সাহায্য পৌঁছাতে শুরু করলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি ত্রাণ সহায়তা এখনো সবার কাছে পৌঁছেনি। বেসরকারি উদ্যোগেও কেউ ত্রাণ সহায়তা নিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ায়নি। ফলে যেকোনো সময় দুর্গত এলাকায় মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। চরাঞ্চলের বন্যা দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি। দুর্গম এলাকা হবার কারণে অনেক এলাকার দুর্গত মানুষের খবরও প্রশাসনের কাছে সময়মত পৌঁছেনি। ফলে তাদের কষ্টের কথাও রয়ে গেছে অজানা।
সরকারি হিসেবে কেবলমাত্র বগুড়া জেলায় বন্যাকবলিত ১ লাখ ১২ হাজার ৭’শ মানুষের জন্য এপর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা। এ হিসেবে জনপ্রতি বরাদ্দ জুটেছে মাত্র ৪৪ পয়সা।
বগুড়ার জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা শাহারুল ইসলাম জানান, সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১ লাখ ১২ হাজার ৭’শ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার্তদের জন্য ১ লাখ ২০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই বরাদ্দের মধ্যে জুন মাসে আগাম সতর্কতা হিসেবে ৯০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। সেই চাল এখন বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। নতুন করে ৩০ মেট্রিক টন চাল শুধুমাত্র সারিয়াকান্দি উপজেলার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়ও সারিয়াকান্দিতে ২০০ প্যাকট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে বন্যাবকলিত নীলফামারীর জেলা প্রশাসনের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা রেডিও তেহরানকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সাহায়্য পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেবার কারণে সিভিল সার্জনের অফিস থেকে টিম গিয়ে দুর্গত এলাকায় কাজ করছে।
এদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আজ সচিবালয়ে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে বক্তৃতাকালে জানিয়েছেন, সরকার বন্যা কবলিত ১১টি জেলার জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা প্রেরণ করেছে।
মন্ত্রী জানান, বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে ৬ হাজার মেট্রিক টন চাল ও নগদ সাড়ে ৫ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে। এর বাইরে মন্ত্রণালয় থেকে শুকনা খাবারসহ বন্যায় কাজে লাগে এমন সরঞ্জামাদির ৪ হাজার কার্টুন উপদ্রুত জেলায় পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বন্যাসহ যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য সরকারের কাছে রয়েছে। চাহিদার পূর্বেই সরকার জেলা প্রশাসক বরাবর সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় খাবার বরাদ্দ দিয়ে রেখেছে। খাদ্য সহায়তার অপ্রতুলতার বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদন সরকারের নজরে এসেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের নিজ নিজ জেলার খাদ্য ও আর্থিক সহায়তার তথ্যাদি সংবাদকর্মীদের অবহিত রাখলে সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা আরও বাড়বে।