আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবারো আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আজ জুবায়ের মৌরিতানিয়ায় আরব লীগের বৈঠকে দেয়া ভাষণে মধ্যপ্রাচ্যে রক্তপাত ও সন্ত্রাসীদের প্রতি সৌদি সমর্থন এবং দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে উল্টো এ অঞ্চলে উগ্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেয়ার জন্য ইরানকে দায়ী করেছেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন, আরব লীগের প্রধান দায়িত্ব কর্তব্যের মধ্যে সব সময়ই ফিলিস্তিন প্রধান ইস্যু হয়ে আছে। অথচ সৌদি কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মূল কারণ উপেক্ষা করায় দখলদার ইসরাইল আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে পড়েছে এবং এ অঞ্চল আরো বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। আর সৌদি আরবই ইসরাইলকে এ সুযোগ করে দিয়েছে।
বাস্তবতা হচ্ছে সৌদি আরব কখনই ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের কোনো চেষ্টা করেনি। বরং সৌদি আরব যদি কখনো আপোষ প্রস্তাব তুলে ধরে তার প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে এ অঞ্চলে ইসরাইলের অবস্থান শক্তিশালী করা এবং ফিলিস্তিনিদেরকে ধ্বংস করা। ইসরাইলের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য সৌদি আরব সিরিয়ায়ও গোলযোগ বাধিয়ে রেখেছে। যখনই শান্তিপূর্ণ উপায়ে সিরিয়া সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে তখনই সৌদি আরব তাতে বাধা দিয়েছে। অর্থাৎ এ অঞ্চলে ইসরাইল বিরোধী যত প্রতিরোধ শক্তি রয়েছে তাদের সবাইকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে সৌদি আরব।
আরব লীগ কিংবা পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ বা পিজিসিসি’র মতো বৈঠকে সৌদি আরব সবসময়ই মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মূল কারণ অনুসন্ধান না করে ভুল পথে হাটছে। তারা কখনো লেবাননের ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করছে, কখনো সিরিয়ার নির্বাচিত বৈধ সরকার উৎখাতের জন্য ষড়যন্ত্র করছে, কখনো মধ্যপ্রাচ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য ইরানের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে। মৌরিতানিয়ায় আরব লীগের বৈঠকেও ইরানের বিরুদ্ধে বিষেদাগার করা হয়েছে। বৈঠকে বাহরাইনের প্রতিনিধি এবং সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরানকে এ অঞ্চলের জন্য হুমকি ও বিরাজমান সংকটের মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন।
বৈঠকে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আজ জুবায়ের দাবি করেছেন, ইরান এ অঞ্চলের দেশগুলোতে বিপ্লব রপ্তানি করার চেষ্টা করছে যা কিনা আন্তর্জাতিক ও সুপ্রতিবেশী সুলভ নীতির পরিপন্থী এবং এর ফলে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাহরাইনের প্রধানমন্ত্রী ইরানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে ইরান সমর্থকদের মোকাবেলার কথা বলেন।
সৌদি আরব সন্ত্রাসীদের দমনের কথা বলে আরব দেশগুলোকে নিয়ে লোক দেখানো সামরিক কোয়ালিশন গঠন করেছে। তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ইয়েমেনের বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে, বিরামহীন বোমা বর্ষণ করে দেশটির অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিচ্ছে। উগ্র ওয়াহাবি সালাফি মতবাদের বিস্তার ঘটিয়ে সৌদি আরব ধর্মের নামে সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দিয়েছে। অথচ পবিত্র ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদ কিংবা সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। তাদের প্রতিটি কার্যক্রম মুসলিম স্বার্থের বিরুদ্ধে এবং বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয়। সৌদি আরবের অযৌক্তিক ও অন্যায় আচরণের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে কেবল উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সৌদি কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক উস্কানীমূলক বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তারা যে সংকট তৈরি করেছে তা থেকে এখন উদ্ধার পেতে চায়। কিন্তু তারপরও তারা নিজেদের সংশোধনের পরিবর্তে ভুল নীতি অব্যাহত রেখেছে। তাদের ভুলের মাত্রা এতটাই বেশি যে এমন কি আরব নেতারা নিজেদের মধ্যেই ঐক্য ধরে রাখতে পারেনি। এ কারণে দুদিন ধরে আরব লীগের বৈঠক চলার কথা থাকলেও তা একদিনেই শেষ হয়ে গেছে।