আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পদস্থ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিনিধি দল বর্তমানে আফ্রিকার কয়েকটি দেশ সফর করছে। জাওয়াদ জারিফ প্রথমে নাইজেরিয়া সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট, স্পিকার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এসব সাক্ষাতে তারা দ্বিপক্ষীয় বিষয় ছাড়াও উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর পর ঘানা সফরে যান এবং আজ তিনি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনিতে পৌঁছেছেন।
জাওয়াদ জারিফ ঘানায় বসবাসকারী ইরানি নাগরিকদের সঙ্গে সাক্ষাতে পরমাণু সমঝোতার পর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিস্তারে ইরানের আগ্রহের নানা দিক নিয়ে কথাবার্তা বলেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা বিশ্বে ইরান আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তারপরও দখলদার ইসরাইল এবং সৌদি আরব ইরানকে কোণঠাসা করার জন্য ষড়যন্ত্র ও প্রচুর অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইরানে ইসলামী বিপ্লবের ৩৭ বছর পর সারা বিশ্বের মানুষ আজ ইরানের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং ওয়াহাবি সালাফিদের বিপদের ব্যাপারেও তারা সচেতন। জারিফ বলেন, সন্ত্রাসীদের সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে কয়েকটি দেশের ভূমিকা এখন সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে পড়েছে।
আলে সৌদি পরিবার মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য এবং নিজ গোত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বিশ্বের মধ্যে সৌদি আরব চতুর্থ বৃহৎ অস্ত্র ক্রেতার দেশ হলেও তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তারপরও গত তিন বছরে সৌদি আরব নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। সৌদি সরকার দেশের অভ্যন্তরে যেমন ব্যাপক রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে তেমনি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় তাদের দাম্ভিকতা ও অন্যদের অপবাদ দেয়ার দিন শেষ হয়ে আসছে।
ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের বিপুল অর্থ ব্যয় এবং ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশ সন্ত্রাসীদের প্রতি রিয়াদের প্রকাশ সমর্থন সত্বেও সৌদি আরবের মধ্যপ্রাচ্য নীতি কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। সৌদি সরকার এখন এ জন্য আতঙ্কিত যে ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতার পর আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘটনায় আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে কিন্তু তারপরও পরমাণু সমঝোতায় সৌদি আরব উদ্বেগ ও খুবই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যেখানে জোরালো কথা বলা দরকার সেখানে সৌদি আরব নীরব রয়েছে এবং বাস্তবতাকে অস্বীকার করে ইরান আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে ইসরাইল সৌদি আরবকে সমর্থন করছে। ইরানের অগ্রগতিতে ইসরাইল ও সৌদি আরব খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক সমাজের নিন্দা ও সমালোচনা উপেক্ষা করে সৌদি আরব একদিকে বাহরাইনের প্রতিবাদী জনতাকে নির্মমভাবে দমন করছে অন্যদিকে ইয়েমেনের জনগণের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। এরপরও সৌদি আরব নিজেদেরকে শান্তিকামী হিসেবে তুলে ধরছে অন্যদিকে ইরানের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জাতিসংঘ, মার্কিন কংগ্রেস ও ইহুদিবাদী লবির বৈঠকে দেয়া ভাষণে নিজের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। সৌদি আরব ও ইসরাইলের ইরান বিরোধী কর্মকাণ্ড সফল হয়নি। এ কারণে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইসরাইল ও সৌদি আরব একে অপরের সহযোগী এবং এটা এখন আর গোপন নেই।