নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: জিএমজি এয়ারলাইন্সের নামে সোনালী ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় নিলামে উঠছে ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ধানমন্ডির বাড়ি। ১২ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয় সোনালী ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে চলতি বছরের ৩০ মে পর্যন্ত জিএমজির কাছে ব্যাংকের মোট পাওনা ২২৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আগামী ৩ আগস্ট ব্যাংকের লোকাল অফিস ৩৫-৪২ মতিঝিলে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।
সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের মহাব্যবস্থাপক ফনীন্দ্র ত্রিবেদী বলেন, নিলাম ডাকার আগে পাওনা আদায়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে চূড়ান্ত তাগাদা এবং উকিল নোটিশসহ যা যা করার সবই করা হয়েছে। কিন্তু তারা টাকা না দেয়ায় শেষ পর্যন্ত বন্ধকি সম্পত্তি নিলাম করে টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তিনি বলেন, এর পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে তারা অর্থঋণ আদালতে মামলা করবেন। আর মামলার ভিত্তি হল দুটি। প্রথমত, নিলামে জমি বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণের পুরো টাকা পাওয়া না গেলে অথবা বিডিংয়ে কেউ অংশ না নিলে। এই দুই অবস্থায় সাধারণত অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়। এরপর আদালতের রায়ের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে।
ব্যাংকের নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করায় জিএমজি এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, পিতা মরহুম ফজলুর রহমান, মাতা মরহুমা সৈয়দা ফাতিনা রহমানের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ধানমণ্ডির ২ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর প্লটের (নতুন) ১ বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমি ও তার ওপরের ভবন এবং নির্মাণাদিসহ নিলামে তোলা হবে। আগামী ৩ আগস্ট বুধবার এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। অর্থঋণ আদালত আইন-২০০৩ এর ১২ (৩)-এর বিধান অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৩০ মে পর্যন্ত জিএমজি এয়ারলাইন্সের কাছে অনারোপিত সুদসহ ব্যাংকের পাওনা ২২৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ২০০৬ সালে এ ঋণ নেয়া হয়। ওই সময়ে ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬৫ কোটি টাকা। পরবর্তীকালে সুদ ও ঋণের স্থিতি বেড়ে যায়।
এদিকে ঋণখেলাপি হয়েও আইন লংঘন করে সম্প্রতি বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে পুনর্র্নিবাচিত হয়েছেন সালমান এফ রহমান।
১৪ জুলাই আইএফআইসি ব্যাংকের ৩৯তম বোর্ডসভায় তাকে চেয়ারম্যান পদে পুনর্র্নিবাচিত করা হয়। কিন্তু ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর (সংশোধিত ২০১৩) ১৫ ধারা ৬ উপধারার (ঊ) বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি তাহার নিজের কিংবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হইতে গৃহীত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ বা খেলাপি হলে ব্যাংক-কোম্পানি কর্তৃক পরিচালক নিযুক্ত হওয়ার যোগ্য হইবেন না।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, আইন অনুসারে কোনো ঋণখেলাপি ব্যাংকের পরিচালক বা চেয়ারম্যান হতে পারেন না। তার মতে, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তার দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, পাওনা আদায়ে নিলাম ডেকেছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে সোনালী ব্যাংক থেকে খেলাপি ঋণের যে তথ্য পাঠানো হয়েছে তাতে সালমান এফ রহমানের নাম নেই। আর সোনালী ব্যাংক তথ্য না দিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার নেই।