Monday , 23 December 2024
নিউজ টপ লাইন
আইনি জটিলতায় নবীগঞ্জে ৪৬ বছরের পুরনো বিদ্যালয়

আইনি জটিলতায় নবীগঞ্জে ৪৬ বছরের পুরনো বিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: নবীগঞ্জের লোগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৪৬ বছরেও পরিচয় শনাক্ত হয়নি। গজনাইপুর ইউনিয়নের পাহাড়বেষ্টিত অঞ্চলে এর অবস্থান। পরিচয় সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার দুই জেলায় চলছে এর কার্যক্রম। অহেতুক আইনি জটিলতায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। শিক্ষক সংকট, দুর্নীতি, অনুপস্থিতি এবং উপবৃত্তির টাকা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও পরিচয় সংকটে নানাবিধ জটিলতার সমাধান হচ্ছে না। সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ২০-২৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। শিক্ষা অফিস ও বিদ্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নে ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ওই বিদ্যালয়। এর অফিসিয়াল সকল কার্যক্রম মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন। ভৌগোলিক অবস্থান হবিগঞ্জ হওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার শিক্ষকরা এখানে আসতে চান না। আবার অফিসিয়াল কার্যক্রম মৌলভীবাজার অফিসের আওতাধীন হওয়ায় হবিগঞ্জ জেলার শিক্ষকদের এখানে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন টানাপড়েনে বিদ্যালয়টির নাভিশ্বাস চলছে। ভিন্ন জেলা থেকে অনিয়মিত উপস্থিতি ছাড়াও সময়মতো শিক্ষকদের ক্লাস নেয়া সম্ভব হয় না। তিনজন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও রুটিন করে আসেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী গেলেও অনেক সময় শিক্ষকের খবর থাকে না। ৫ম শ্রেণির ছাত্র ইমন জানায়, “স্যাররা আমারে (আমাকে) স্কুলের চাবি দিয়া গেছইন (দিয়ে গেছেন)। স্যার কইছইন (বলছেন) তারা আওয়ার (আসার) আগ পর্যন্ত আমি ওয়ান-টু’র ছাত্র ছাত্রীরে ক্লাস করাইতাম। শিক্ষকরা আসার আগ পর্যন্ত ইমন-ই যেন শিক্ষক! বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রিপন চন্দ্র পাল বলেন, অনেক দূর থেকে খারাপ রাস্তা দিয়ে আসতে গিয়ে অনেক সময় বিলম্ব হয়। ঠিক সময়ে হাজির হওয়া সম্ভব হয় না। একই কথা জানালেন প্রধান শিক্ষক সাচ্ছু মিয়া। এভাবেই চলছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। গ্রামের বাসিন্দা জালাল মিয়া ও রাখাল বৈদ্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতার চার যুগ অতিক্রম হলেও জটিলতা অবসানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাথা ব্যথা নেই। তরুণ সমাজসেবক সবুজ আখঞ্জি বলেন, মৌলভীবাজার থেকে শিক্ষকরা এখানে আসতে চান না। শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়টি নবীগঞ্জ শিক্ষা অফিসের অধীনে নিয়ে আসা অতীব জরুরি। বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য সোহেল রানা বলেন, বিদ্যালয়ে নানা দুর্নীতি হচ্ছে। শিক্ষকরা প্রতিদিন আসেন না। এলেও ছুটি দিয়ে চলে যান। তারা মনে হয় স্কুল ছুটি দেয়ার জন্যই আসেন। গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের গোলাপ বলেন, বিদ্যালয়টিকে হবিগঞ্জ জেলার অধীনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনেক দৌড়ঝাঁপ হয়েছে।
এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে জটিলতা নিরসনে মন্ত্রণালয়ে লিখিত দিয়েছেন। এ বিষয়টি বর্তমানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দিনারপুর পাহাড়ি অঞ্চলের ওই এলাকায় তৎকালীন সময়ে দুটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাশাপাশি দুটি বিদ্যালয় হবিগঞ্জ জেলার আওতায় সরকারিকরণের সুযোগ না থাকায় কৌশলে লোগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই থেকে বিদ্যালয়টি নিয়ে চলছে টানাপড়েন। এতে বিদ্যালয়টিতে শুধু শিক্ষক সংকটই চলছে না। প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীরা প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার দূরবর্তী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাগাবলা ইউনিয়নের মিলনপুর উচ্চবিদ্যালয়ে যেতে হয়।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

August 2016
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
Scroll To Top