আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যে স্বপ্ন নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন ছিটমহলের বাসিন্দারা তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয় নি। ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতি। ভারতে কর্মসংস্থান হচ্ছে না তাদের। পাচ্ছেন না অন্য সুযোগ সুবিধা।
তাই ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণের এক বছরের মাথায় এসব মানুষের অনেকেই বাংলাদেশে ফিরে আসতে চান। স্বরাষ্ট্র বিষয়ক ভারতীয় পার্লামেন্টের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য এ কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেছেন, ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করা এসব মানুষের অনেকেই এখন বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। প্রদীপ ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের নিসিয়র একজন এমপি। এ খবর দিয়েছে ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই। আর তা প্রকাশ করেছে অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
এতে বলা হয়েছে, গত বছর ১লা আগস্ট বিলুপ্ত ছিটমহলের আগ্রহী বাসিন্দারা ভারতে চলে যান। প্রদীপ ভট্টাচার্য পিটিআইকে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব ছিটমহলবাসী ভারতে এসেছেন এবং এখানে বসতি স্থাপন করেছেন তাদের বিষয়ে আমি রিপোর্ট পেয়েছি। ভারতে কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে এবং মৌলিক আরো কিছু সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে বলে তারা এখন বাংলাদেশে ফিরতে চান।
এটা একটি গুরুত্বর উদ্বেগের বিষয়। আমি এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তদন্ত করে দেখবো। তিনি বলেছেন, কর্মসংস্থানের সুবিধা ছাড়াও এসব ভারতীয় অভিযোগ করেছেন যে, তারা সরকারি অন্যান্য স্কিমের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১লা আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়। এর মধ্য দিয়ে সীমান্ত সংক্রান্ত বিশ্বের অন্যতম একটি জটিল সমস্যার ইতি ঘটে। এ সমস্যাটি জিইয়ে ছিল সাত দশক ধরে। ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ভারতের ১১১টি ছিটমহল যুক্ত হয় বাংলাদেশের সঙ্গে। এর আয়তন ১৭১৬০ একর।
অন্যদিকে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল, যার আয়তন ৭১১০ একর, পরিণত হয় ভারতীয় ভূখন্ডে। ভারতীয় ছিটমহলগুলোর সবই পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায়। ৫১টি সাবেক ছিটমহল ছড়িয়ে আসে দিনহাটা, মেকলিগঞ্জ, সিতাই, শীতলকুচি ও তুফানগঞ্জ সংসদীয় আসনে।
গত বছর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভারতের ভিতরে থাকা বাংলাদেশী ৫১টি ছিটমহলের ১৪ হাজার ৮৬৪ জন অধিবাসী ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের ভিতরে থাকা ভারতীয় ছিটমহলের ৯২১ জন অধিবাসী ভারতের অংশে চলে আসেন।
এসব মানুষের অধিকার ও তাদের জীবন ধারণ নিয়ে কাজ করছেন ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি ও সিটিজেনস রাইটস কোঅর্ডিনেশন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত।
তিনি বলেছেন, যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছেন তারা এখনও ভাল কাজ পান নি। তাই তারা ফিরে যেতে চান বাংলাদেশে। বাংলাদেশের ভিতরে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহল থেকে যারা ভারতে গিয়েছেন তারা অস্বস্তি বোধ করছেন। তাদের কোন কাজের সুযোগ নেই। নেই আয়ের কোন সুযোগ। দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, এসব মানুষ কিভাবে তাদের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবেন? তাই তারা মনে করছেন, তাদের ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশেই ফিরে যাওয়া হচ্ছে তাদের সবচেয়ে ভাল উপায়।
তিনি স্বীকার করেন, বিলুপ্ত ছিটমহলের ভারতীয় এসব বাসিন্দাদের যেসব চাহিদা রয়েছে তার বেশির ভাগই রয়েছে অপূর্ণ। তিনি বলেন, ভারতীয় অংশ ও বাংলাদেশ থেকে আসা এসব মানুষদের সবচেয়ে বড় চাওয়া দুটি। একটি হলো তাদের জন্য সংরক্ষিত কর্মসংস্থান ও ভূমি রেকর্ড ও সেটেলমেন্ট বিষয়ক আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি। কিন্তু এ দুটি দাবির কোনটিই এখনও পূরণ হয় নি। ভূমি ও বসবাসের যথাযথ দলিল ছাড়া একজন মানুষ কি করতে পারেন?
তার এ কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে ছিটমহল থেকে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদের কণ্ঠে। তাদেরকে রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে অপ্রাপ্তির হতাশা বিরাজ করছে। সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা ওসমান গণি এমনই একজন মানুষ।
তিনি বলেছেন, আমরা এখনও উপযুক্ত কোন কাজ পাই নি। ভারতের চেয়ে আমরা বাংলাদেশেই বেশি ভাল ছিলাম। যদি ভারতে আমাদের অবস্থার উন্নতি না ঘটে তাহলে আমরা বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাই।
এ বিষয়ে কোচবিহার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উলাঙ্গাথান বলেন, সাবেক এসব ছিটমহলবাসীকে ‘জব কার্ড’ দেয়া হয়েছে। সুযোগ সুবিধার অভাবে কেউ বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাইছেন এমন কোন রিপোর্ট আমি পাই নি।
দিনহাটার স্থানীয় বিধায়ক ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা উদয়ন গুহ খুব কাছ থেকে ছিটমহলের সমস্যাগুলো কয়েক দশক ধরে পর্যবেক্ষণ করেছেন। যেসব নাগরিক ঘরে বসে থাকতে চান ও কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ না করেন তাদের সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, প্রথম দু’মাসে সরকার তাদেরকে রান্না করা খাবার সরবরাহ করেছে। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, তারা ঘরে বসে থাকতে চান। তারা চান তাদের বাকি জীবন চলবে সরকারের সাহায্যে। বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে এসেছেন তাদেরকে কিছু কলকারখানায় চাকরি দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু তারা সে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাহলে সরকার কি করবে? কিছু মহল তাদেরকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে। তাই তাদের কেউ কেউ বলছেন, তারা বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান। তিনি আরও বলেন, ভূমি বরাদ্দ বিষয়ক সমস্যা প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। শিগগিরই এসব ভূমি তাদের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে।