পাবনা প্রতিবেদক :
এবার পাবনায় ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রায় দেড় লাখষাঁড় গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। যা দিয়ে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাংসের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
অন্যদিকে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় এবার লাভের মুখ দেখার আশা করছেন পাবনার খামারিরা। আর অসাধু উপায়ে গরু মোটাতাজা রুখতে খামারিদের সচেতন করার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ-পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানায় প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
শুক্রবার জেলার চাটমোহর উপজেলার বেশ কয়েকটি গরুর খামার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে ষাঁড় গরু লালন-পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাবনার ছোট-বড় খামারিরা। কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে লাভের আশায় ষাঁড় গরুকে মোটাতাজা করেন খামারিরা।
গত কয়েক বছরে অসাধু উপায়ে গরু মোটাতাজা কররে ক্ষতির মুখে পড়েন অনেকে। স্টেরয়েড ও রাসায়নিক দিয়ে গরু মোটাতাজা করার ক্ষতিকর দিক গণমাধ্যমে উঠে আসায় সচেতন হয়ে ওঠেন খামারিরা। চাহিদা বাড়ে দেশি গরুর। তাই লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে এবার বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন খামারিরা। তাদের আশা, ভারতীয় গরু আমদানি না হলে লাভের মুখ দেখবেন তারা।
চাটমোহর উপজেলার কুমারগাড়া গ্রামের খামারি ইউসুফ আলী জানান, এবারের কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে আমি ৬টি গরু কিনে আমার খামারে গত প্রায় এক বছর ধরে লালন-পালন করছি। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শে দেশীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করেছি। আশা করছি ঈদের হাটে ভাল দাম পাবো।
একই উপজেলার মহেলা গ্রামের খামারি টিপু হোসেন জানান, আমরা আগে ভারতীয় স্টেরয়েড ট্যাবলেট-ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজা করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। সেসবের ক্ষতিকর দিক গণমাধ্যমে প্রচারের পর আমরা এখন সচেতন। এখন আমরা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে দেশি খাবার দিয়ে গরু মোটাতাজা করা হয়। এতে মাংস ভাল পাওয়া যায়, লাভও হয়।
এদিকে ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ষাঁড় গরু মোটাতাজা করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। চাটমোহর উপজেলার ইছাখালী গ্রামে প্রজ্ঞা এগ্রো এন্টারপ্রাইজ নামের একটি খামারে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৭০টি ষাঁড় গরু মোটাতাজা করা হয়েছে।
কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকাসহ বিভিন্ন হাটে সেগুলো বিক্রি করা হবে। খামারের ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান, আমরা খড়, ভূষি, লালি গুড়, খুদের ভাত, ঘাসসহ বিভিন্ন দেশি খাবার দিয়ে ষাঁড় গরু মোটাতাজা করছি। এর মধ্যে কোনো ধরনের ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করা হয়নি। ভারতীয় গরু আমদানি না হলে আমরা ভাল দাম পাবো।
খামারের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. শামসুল আলম বিডি কন্ঠকে জানান, আমাদের খামার থেকে উৎপাদিত গরু দিয়ে দেশের মাংসের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। ক্রেতাদের কাছে এখন দেশি গরুর চাহিদাও ব্যাপক। প্রাণিসম্পদ বিভাগের তদারকিতে এবার কোথাও অসাধু উপায়ে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।
পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল গফুর বিডি কন্ঠকে জানান, খামারিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। যার সুফলও মিলেছে এবার। আর অসাধু উপায়ে যদি কেউ গরু মোটাতাজা করে প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, কোরবানির হাটে এসব পশু চিহ্নিত করতে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম থাকবে।