আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নারীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, বিবাহিতা ও অজ্ঞাত এক নারীর সঙ্গে তিনি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করেছিলেন। ২০০৫ সালে ধারণ করা ভিডিওতে তার এমন মন্তব্যের ফুটেজ এখন দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের হাতে। তা প্রচার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
শুধু তা-ই নয়। তিনি টিভি উপস্থাপক বিলি বুশকে বলেন, যখন আপনি একজন তারকা হয়ে যাবেন তখন নারীদের বাগিয়ে নেয়া খুব সহজ। তাদেরকে নিয়ে যা খুুশি তা-ই করতে পারেন। ওই ফুটেজে ডনাল্ড ট্রাম্পকে আপত্তিকর, অশালীন, অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করতে শোনা যায়।
তিনি বলেন, সুন্দরী নারীদের প্রতি তিনি অটোমেটিক্যালি আকর্ষণ বোধ করেন এবং তাদেরকে চুমু দেয়া শুরু করেন। বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে বিয়ের মাত্র কয়েক মাস আগে ডনাল্ড ট্রাম্প ওই মন্তব্য করেন।
এই ভিডিও ফুটেজটি এখন প্রচার করা হচ্ছে সিএনএন সহ বিভিন্ন মিডিয়ায়। শুক্রবার থেকে তা প্রচার শুরু হয়েছে। এর আগে এ ভিডিও ফুটেজ প্রচার হয় নি। এতে ‘এক্সেস হলিউডে’র একটি অংশ ধারণ করা হয়।
এ সময় অফ-ক্যামেরায় ধারণ করা হয় তাকে। সঙ্গে দেখা যায় একজন নারী ও অন্য এক পুরুষকে। তখন ট্রাম্প আপত্তিকর ওইসব মন্ত্রব্য করেন। পুরুষ তারকাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যখন তুমি একজন তারকা হয়ে যাবে তখন তুমি তাদেরকে…(অকথ্য শব্দের ব্যবহার হয়েছে এখানে) ধরে আঁকড়ে ধরতে পারো। তুমি তাদেরকে নিয়ে যা খুশি তাই করতে পার। তার এ মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রবাসীর মুখ হা হয়ে গেছে। তারা একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর এমন মন্তব্যে স্তম্ভিত।
তার এ মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পল রায়ান। তিনিই শুক্রবার রাতে ঘোষণা দিয়েছেন রিপাবলিকান দলের উইসকনসিনে রিপাবলিকানদের আয়োজিত ইভেন্টে আর অংশ নিচ্ছেন না ট্রাম্প। সেখানে একটি অনুষ্ঠানে পল রায়ানের সঙ্গে ট্রাম্পের উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
বিভিন্ন সূত্র বলেছে, ওই অনুষ্ঠানে পল রায়ানের সঙ্গে ট্রাম্পকে উপস্থিত হতে বারণ করা হয়েছে। এ কথা ট্রাম্পকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন ডেমোক্রেট হিলারি ক্লিনটন ও তার প্রচারণা শিবির।
তারা বলেছেন, ট্রাম্প নারীদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করেন, তিনি নারীদের খাটো করে দেখেন এটা তারই প্রমাণ। এ কারণে তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন অনেক জাঁদরেল রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তারা দাবি করেছেন, তিনি যেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তার পরিবর্তে রিপাবলিকান দল থেকে রানিংমেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী মাইক পেন্সকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করা হোক। এমন দাবিতে তোলপাড় হচ্ছে আমেরিকার রাজনীতি।
এসব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তোলপাড় চলছে। এমন অবস্থায় ডনাল্ড ট্রাম্প শিবির ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যদি আমার ওই মন্তব্যে কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন তাহলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে ওই ভিডিও টেপটি প্রচার হওয়ার পর পরই ডনাল্ড ট্রাম্প তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ওটা ছিল লকার রুমের পরিহাস। এর চেয়ে তো বিল ক্লিনটন আরও খারাপ কথা বলেছেন আমাকে। বিল ক্লিনটন প্রকৃতপক্ষেই নারীদের নির্যাতন করেছেন। তার নির্যাতনের শিকার নারীদের আক্রমণ করেছেন, লজ্জিত করেছেন, ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন হিলারি ক্লিনটন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল রাত ৯টার পর (বাংলাদেশের স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ৭টা) সিএনএন টেলিভিশনে এ নিয়ে টানা বিতর্ক চলতে দেখা যায়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন তার এমন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। নিন্দা জানিয়েছেন এর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের সাবেক প্রার্থী মিট রমনী। বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করছেন।
এর ফলে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পল রায়ান জানিয়ে দিয়েছেন, আগামীকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রে যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী দ্বিতীয় দফার বিতর্ক তাতে উপস্থিত থাকবেন না ডনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ট্রাম্পের প্রতিনিধিত্ব করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মাইক পেন্স। ট্রাম্পের মন্তব্যকে সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিট ম্যাককনেল আপত্তিকর বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি বলেছেন, এমন মন্তব্যের কারণে ডনাল্ড ট্রাম্পের উচিত প্রতিটি নারী ও বালিকার কাছে সরাসরি ক্ষমা প্রার্থনা করা। রিপাবলিকান দলের নেতা, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের সাবেক প্রার্থী জন ম্যাককেইন তো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ট্রাম্পের বক্তব্যকে আক্রমণাত্মক ও অবমাননাকর বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, এ অপরাধের কোন ক্ষমা হয় না।