Monday , 23 December 2024
নিউজ টপ লাইন
সমস্যা জর্জরিত মেহেরপুর হাসপাতাল

সমস্যা জর্জরিত মেহেরপুর হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক :  

প্রয়োজনীয় ডাক্তার, ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও শয্যা না থাকায় মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের ।

তার ওপর পরিচ্ছন্ন কর্মীর অভাবে হাসপাতালের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। পাশাপাশি দালাল চক্রের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন রোগি ও স্বজনরা।

১০০ শয্যার মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালটি ২০১৩ সালে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু ২৫০ শয্যার সুযোগ-সুবিধা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন না হওয়ায় আগের কাঠামোতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে হাসপাতালটির কার্যক্রম।

হাসপাতালের প্রধান সহকারী মো. হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, হাসপাতালটিতে ৪১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১১ জন। নেই আবাসিক মেডিকেল অফিসার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১২টি পদের মধ্যে অর্ধেকই শূন্য। মেডিকেল অফিসারের ১৮টি পদের মধ্যে কর্মরত মাত্র দুজন। সার্জিক্যাল, চক্ষু, চর্ম ও যৌনসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো ডাক্তার নেই। অ্যানেস্থেটিস্ট ও ডেপুটি নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।

প্রতিনিয়ত হাসপাতালে আসেন সহ¯্রাধিক রোগি। যাদের মধ্যে গড়ে প্রায় ২০০ রোগিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকতে হয়। তবে সময়মতো ডাক্তার ও ওষুধ না পেয়ে বাধ্য হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে আশপাশের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হতে হয় রোগিদের। এক্ষেত্রে দালালরা পালন করে থাকে মুখ্য ভূমিকা। দালালের মাধ্যমে হাসপাতালের রোগিকে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে সেবা দিচ্ছেন ওই হাসপাতালেরই কোনো কোনো ডাক্তার। তারপরও জরুরি বিভাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হয় অনেক রোগিকে।

হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগের অবস্থা আরো করুণ। সেখানে টাকা না দিলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। এমন সব তথ্য জানালেন হাসপাতালে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ওয়ার্ড বয়।

হাসপাতালের পাঁচটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ২৪ ঘণ্টার চালু থাকার কথা থাকলেও ডাক্তার ও নার্স সংকটে চালু রয়েছে মাত্র দুটি। হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় রোগির চাপে অনেক রোগিকে হাসপাতালে বারান্দায় পড়ে থাকতে হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার বন্দর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন জানান, লোকবলের অভাবে হাসপাতালটিতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। বোতলের ভাঙা কাচ, রক্তমাখা গজ, ওষুধের ঠোঙ্গা ও ফলের খোসায় হাসপাতাল ময়লার স্তূপে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধে হাসপাতালে টিকে থাকা কষ্টকর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের ৩৫ লাখ টাকার সেন্ট্রাল ভ্যাকুয়াম প্লান্টটি অচল হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ইকো-কার্ডিও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি মেশিন দুটি সরবরাহকাল থেকেই অলস পড়ে রয়েছে। তিনটি স্টিম স্টেরিলাইজার অটোক্লেভ মেশিন, দুটি চক্ষু অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ ও দুটি স্প্রিট ল্যাম্প থাকলেও এগুলো চালানোয় দক্ষ কেউ না থাকায় কোনো কাজে আসছে না। এছাড়া দুটি প্যাথলজি মাইক্রোস্কোপ ও দুটি ডি-ফ্রেরিলেটর মেশিন থাকলেও কাজে আসছে না। সর্বোপরি অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে স্বয়ংক্রিয় বিদ্যুৎ সরবরাহের জেনারেটরটি জ্বালানি বাজেট ও অপারেটর না থাকায় তা এখনও চালু করা যায়নি।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি বিভাগের প্রধান ডা. তাপস কুমার জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক লেখালেখির পর ইতিমধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি চালানো সম্ভব হয়েছে। বাকিগুলোও চালানো গেলে আধুনিক অনেক চিকিৎসা মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে করা সম্ভব হবে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, এত অল্প লোকবল আর এত অল্প রসদ দিয়ে এত বড় একটি হাসপাতাল পরিচালনা করা খুব কঠিন কাজ। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনীয় জনবল ও রসদ চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

October 2016
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Scroll To Top