Monday , 23 December 2024
নিউজ টপ লাইন
যৌনকর্মীদের গল্প : আটকে গেল মান্নার সিনেমা

যৌনকর্মীদের গল্প : আটকে গেল মান্নার সিনেমা

বিনোদন ডেস্ক : সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়ে থাকে। যে কারণে চলচ্চিত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। সকল ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণি-পেশার মানুষ যেমন চলচ্চিত্রের বিষয় হয়ে উঠতে পারে, একইভাবে সবাই হতে পারে এর দর্শক।

সমাজে উপেক্ষিত কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণির বিশেষ কোনো অবদান হতে পারে চলচ্চিত্রের বিষয়। এসব নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে। সবই ঠিক আছে। কিন্তু বিপত্তিটা বেধেছে যৌনকর্মীদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান চলচ্চিত্রে তুলে ধরায়। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা, পক্ষে-বিপক্ষে কথা উঠেছে। কেউ বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় জুড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। আবার এও সঠিক যে, সবার সম্মিলিত জীবনবাজির ফসল আমাদের স্বাধীনতা।

দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় একাত্তরে চাষি, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, কৃষক, ডাক্তার, রাজনীতিবিদসহ সকল শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। সেই যুদ্ধে সমাজ-উপেক্ষিত যৌনকর্মীরাও এই ভয়াবহতার বাইরে ছিল না। তাদেরও ছিল সমান অংশগ্রহণ। এটিই ‘লীলামন্থন’ চলচ্চিত্রের বিষয়। জাহিদ হোসেন পরিচালিত এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্না, মৌসুমী, পপি, শাহনূর, মুক্তি, দীঘি, বাপ্পারাজ, আলীরাজ, আনোয়ারা, শহিদুল আলম সাচ্চু, মিশা সওদাগর প্রমুখ।

চিত্রনায়ক মান্না সিনেমাটি অসমাপ্ত রেখে গত আট বছর আগে না ফেরার দেশে চলে যান। মান্নার মৃত্যুর পর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে সিনেমাটি। মান্না সিনেমাটির ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করেছিলেন।  বাকি ১০ শতাংশ কাজ পরিচালক ডামি চরিত্র ব্যবহার করে ২০১১ সালে এ সিনেমার কাজ শেষ করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সিনেমাটিতে যৌনকর্মীদের কথা বলা হয়েছে। যে কারণে এই সিনেমা প্রদর্শনের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা। ইতিমধ্যে দুবার নিষেধের গণ্ডি পেরোতে হয়েছে পরিচালককে। তবু শেষরক্ষা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে পরিচালক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘লীলামন্থন সিনেমাটি প্রথমে সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা হওয়ায় বোর্ড মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আগে প্রদর্শন করার নির্দেশ দেয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিনেমাটি দেখে ছোট ছোট দুটি দৃশ্য পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী সংশোধন করে সিনেমাটি সেন্সরে জমা দেওয়া হয়। এর মাঝে আবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে চিঠি পাঠানো হয় সেন্সর বোর্ডে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- সিনেমাটিতে যৌনকর্মীদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান দেখানো হয়েছে। তাই সিনেমাটি প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে না। এর কারণ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ব্যাখ্যা দিয়েছে- যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ একটি পবিত্র বিষয়, তাই এতে যৌনকর্মীদের অবদান ফুটিয়ে তুললে মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করা হবে। তাই এটা প্রদর্শনের অযোগ্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘এরপর আপিল বোর্ডে যাই। আপিল বোর্ড সিনেমাটি দেখেন। দেখার পরে তারা বলেন, সমাজে এত বিষয় রেখে যৌনকর্মীদের নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেছেন কেন? তখন তাদের বলি, যৌনকর্মীদের অবদান মুক্তিযুদ্ধে ছিল। এটা বাস্তবতা। এটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারপরও আপিল বোর্ড মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্দেশ বজায় রেখেছেন।’

‘এখন আমাদের একটাই রাস্তা- আইনের আশ্রয় নেওয়া। সিনেমাটি বড় আয়োজনের মাধ্যমে নির্মাণ করেছি। এখানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পীরা অভিনয় করেছেন,’ বলেন নির্মাতা জাহিদ হোসেন।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

October 2016
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Scroll To Top