আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাঝেমধ্যেই শোনা যায়, বুক জোড়া লাগা কিংবা মাথা জোড়া লাগা যমজ শিশু জন্মগ্রহণের খবর। যা বেশ আলোচনার সৃষ্টি করে।
এটি একটি বিশেষ ধরনের সমস্যা, যেটাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ক্রানিওপেগাস। এই জটিল সমস্যাতে শিশুরা তাদের খুলি এবং মগজ শেয়ার করে থাকে একে অপরের সঙ্গে।
ফলে জাডোন ও অ্যানিয়াস নামক এই যমজ শিশু দুটি জন্মের পর থেকেই শুরু হয় বেঁচে থাকার মরণপণ লড়াই। শরীরের বৃদ্ধির সঙ্গে তাদের জোড়া লাগা মস্তিষ্কের আকার বাড়তে থাকে। চিকিৎসকরা ঝুঁকি নেন বিরলতম অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু দুটির মাথা আলাদা করার। কারণ এ ধরনের ক্ষেত্রে বাঁচার আশা একেবারে ক্ষীণ।
১৪ অক্টোবর নিউ ইয়র্কের মন্তেফিওর শিশু হাসপাতালে টানা ২০ ঘণ্টা নিরলস পরিশ্রমে মাথা সংযুক্ত এই শিশু দুটিকে সফলভাবে পৃথক করতে সক্ষম হয়েছেন চিকিৎসকরা। এই অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন হয়েছিল ৪০ জন দক্ষ চিকিৎসকের। এই সফল অস্ত্রোপচারে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি হলেন পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জন ডা. জেমস গুডরিচ। তিনি সিএনএনকে বলেছেন, ‘সুখবর, আমরা এটা করতে পেরেছি।’
যা হোক, হাফিংটন পোস্ট তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই বিষয়ে অনেকে অনেক থিওরি দিয়েছেন যে, কেন এই ধরনের শিশুরা জন্মগ্রহণ করে।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টারের মতে, ‘কনজয়েন্ট টোয়াইন’ তাদের বলা হয় যারা শারীরিকভাবে একসঙ্গে সংযুক্ত থাকে। যে সকল টোয়াইনস আলাদাভাবে জন্মগ্রহণ করে তাদের ভ্রূণ তৈরি হওয়ার সময়ই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি আলাদা ভিন্ন ভিন্ন ভ্রূণ তৈরি হয়। আর যেসব ভ্রূণ জন্মগ্রহণের সময় পৃথক হতে গিয়ে সম্পূর্ণরূপে হতে পারে না, তারাই পরবর্তী সময়ে কনজয়েন্ট টোয়াইন হিসেবে জন্মগ্রহণ করে।
মায়ো ক্লিনিকের মতে, একটা ভ্রূণ জন্মগ্রহণের আট থেকে বার দিনের মধ্যে আইডেন্টিক্যাল টোয়াইন আলাদা হতে শুরু করে। এটা ধারণা করা হয় যদি এই প্রক্রিয়াটি ভ্রূণ গঠনের পরে আরো দেরি করে শুরু হয় আনুমানিক ১৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তাহলেই সম্ভবত কনজয়েন্ট টোয়াইনের জন্ম হয়।
সিটেল চিলড্রেন হসপিটালের মতে, ‘কনজয়েন্ট টোয়াইনের ডিম্বাণু আগে থেকেই বিভক্ত হয়ে থাকে এবং পরে সেটা একত্র হয়ে পরে ভ্রূণ তৈরি করে।’
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড বলেছে, আনুমানিক দুই লাখ নবজাতক শিশুর মধ্যে মাত্র একটি শিশু কনজয়েন্ট টোয়াইন হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। তবে এর মধ্যে বেশির ভাগ শিশুই প্রথম দিনেই মারা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আনুমানিক চল্লিশ থেকে ষাট শতাংশ পর্যন্ত জোড়া লাগা শিশুরা মৃত অবস্থায় জন্মায়।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের মতে, ক্রানিওপেগাস টোয়াইনরা খুবই বিরল হয়ে থাকে। সারা বছর যতগুলো টোয়াইন জন্মগ্রহণ করে এর মধ্যে ৩ শতাংশ ক্রানিওপেগাস টোয়াইন হিসেবে জন্মগ্রহণ করে।
যা হোক, মন্তেফিওর শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাথা আলাদা করা জাডোন ও অ্যানিয়াস শিশু দুটিকে পুনরায় সুস্থ ও সবল হতে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
এই যমজ সন্তানের মা নিকোল ম্যাকডোনাল্ড তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আমরা এমন একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, যা পুরোটাই অনিশ্চয়তা দিয়ে ঘেরা। সামনের কয়েক মাস তাদের অনেক ধরনের ক্রিটিক্যাল সময় পার করতে হবে তাদের পুনরায় সুস্থ হওয়ার লক্ষ্যে, আমরা আসলে এখনো জানি না অ্যানিয়াস ও জাডোনের কত সপ্তাহ লাগবে পুরোপুরি সুস্থ হতে।’