নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নতুন ওয়ার্কিং কমিটির আংশিক ঘোষণা করা হয়েছে। ৮১টি পদের মধ্যে ৪৩টি পদে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি রয়েছে আরো ৩৮টি পদ। ঘোষিত এই ৪৩ নেতানেত্রীর ৩ জন রয়েছেন চিরকুমারী। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে গিয়ে বিয়েটাও করা হয়ে উঠেনি তাদের। প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা চিরকুমারীই রয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটিতে সাহারা খাতুন এবং ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরার সঙ্গে চিরকুমারী দলে নাম লেখালেন শামসুন নাহার চাঁপা।
অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বাংলাদেশের সাবেক প্রথম মহিলা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত কমিটি থেকেই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। রাজনীতির পাশাপাশি আইন পেশায়ও সফল তিনি। বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাহারা খাতুন ১৯৬৭ সাল থেকে পুরোদমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। একই সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। তৎকালীন আইন ছাত্রদের মধ্যে একটি নির্বাচনে তিনি ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে জয় লাভ করেন। সেটি ছিল জীবনের প্রথম নির্বাচন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এত বেশি জড়িয়ে পড়েন যে, আর সময় মতো ল’পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ১৯৭৫ সনের ৩ নভেম্বর জেলখানায় চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী ও এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামানকে হত্যা করা হয় এবং ৪ নভেম্বর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩২নং ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পর্যন্ত মিছিল করেছিলেন।
ষাটের উত্তাল রাজনীতি থেকে ১৯৬৯ সালে গঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জাতীয় নেতা মরহুম তাজউদ্দিন আহমেদ আওয়ামী লীগের মহিলা শাখা গঠন করে দিয়েছিলেন। তখন থেকেই মিটিং মিছিল সবকিছুতেই অংশগ্রহণ করেছেন। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দিনও তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখনকার ছাত্রলীগ নেত্রীর সঙ্গে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে আওয়ামী লীগের এই নেত্রী চিরকুমারী।
এদিকে, আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে এবারও স্বপদে বহাল রয়েছেন ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা। রাজনীতি করতে গিয়ে বিয়ের কথা ভুলে যাওয়া এই নেত্রী আগের কমিটিতেও মহিলা ও শিশুবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরার রাজনীতির শুরুটাও ছাত্রলীগ দিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার চুল ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মতো বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই থেকে নিজের নামের সঙ্গে ইন্দিরা নামটিও যোগ হয়ে যায়। আপন ভাই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়ার পর তিনি রাজনীতিতে আরো বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলেন। ৮১ সালে শেখ হাসিনা ফিরলে তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আওয়ামী লীগের একজন ফুলটাইম রাজনীতিবিদ হিসেবে দলকে সময় দিতে শুরু করেন। বর্তমানে তিনি মুন্সীগঞ্জ সদর থেকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হিসেবেও তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
এছাড়া নতুন কমিটতে ঠাঁই পাওয়া শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপার বড় ভাই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন। ড. আব্দুর রাজ্জাকের ছোট বোন চাঁপার রাজনীতি শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগে অধ্যয়নের সময় থেকেই। তিনি শামসুন্নাহার হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ফেরার সময় তিনি ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন তিনি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও তার ভূমিকা ছিল।
এরপর সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর এই কৃতী সন্তান। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা হিসেবে গত বছর অবসরে যান শামসুন নাহার চাঁপা। অবসর থেকে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া চাঁপা ব্যক্তিগত জীবনে চিরকুমারী।