নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা দেশের অকল্যাণ করে তারা যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, তার দল আর কাউকেই এদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী, অর্থ পাচারকারী এবং এতিমের টাকা আত্মসাৎকারীরা কোনোভাবেই যেন আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে, এজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তারা ক্ষমতায় এলে আবারো এসব অপকর্ম ঘটাবে।’
পুনরায় আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বক্তৃতা করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল উপস্থিত ছিলেন।
গত সাধারণ নির্বাচনের আগে ও পরে এবং ২০১৫ সালের বিএনপি-জামায়াতের সীমাহীন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা বহু মানুষকে সে সময় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রী, অন্তঃসত্ত্বা নারী, বাস এবং সিএনজি অটোরিকশা চালক- কেউই তাদের সন্ত্রাসের হাত থেকে রেহাই পায়নি।
আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়া নিজেই নিজেকে তার গুলশান কার্যালয়ে আবদ্ধ রাখেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি প্রধান সে সময় ৯২ দিন তার কার্যালয়ে অবস্থান করে বিরিয়ানি খেয়েছেন আর তার ক্যাডারবাহিনী সন্ত্রাসী হামলা করে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের সেই মানুষ পুড়িয়ে হত্যার আন্দোলনে কেউ সাড়া দেয়নি। দেশের জনগণ কখনোই মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকারী এবং এতিমের টাকা মেরে খাওয়া লোকজনের কথা শুনবে না।
এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশপ্রেমিক এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের দেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, তা ভুলে গেলে চলবে না।’ তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিলাসবহুল জীবন যাপনে অভ্যস্ত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘যদি সব সময় উপরের দিকেই দৃষ্টি থাকে তাহলে চরিত্রের দৃঢ়তা এবং সততা থাকে না।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে অশিক্ষিতের মাঝে শিক্ষার আলো বিস্তারে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি আর কোনো ছেলে-মেয়েই যেন ভুল করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং মাদকাসক্তির পথে পা না বাড়ায় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিপথগামীদের বোঝাতে হবে যে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকে হত্যা করে কখনো বেহেশতে যাওয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলায় তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা তা পারবো। প্রধানমন্ত্রী দেশের হতদরিদ্রদের পুনর্বাসনে তার সরকার নির্দেশিত স্ব-স্ব এলাকার হতদরিদ্রদের তালিকা প্রস্তুতিতেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এদিন বৃষ্টির মধ্যেও লনে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তন্ময় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শোনেন এবং তাদের মুহুর্মুহু করতালিতে পুরো গণভবন এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
পরে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে পুনরায় সর্বসম্মতিক্রমে দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানান।