তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের জামিন আবেদন নাকচ করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েস এই আদেশ দেন। গতকাল সোমবার হাইকোর্ট শহিদুল আলমের আবেদন আজকের মধ্যে নিম্ন আদালতে নিষ্পত্তি করার আদেশ দেন।
জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘শহিদুল আলম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়া উচিত। নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। জঘন্য অপরাধ করেছেন শহিদুল আলম।’
শহিদুল আলমের জামিনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন আইনজীবী সারা হোসেন, এহসানুল হক ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। আদালতে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন এ সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে বলে আদালতে মন্তব্য করেন তাঁর আইনজীবী এহসানুল হক। তিনি বলেন, বিশ্বের বরেণ্য ব্যক্তিরা শহিদুল আলমের মুক্তি চেয়েছেন। জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না কিংবা সাক্ষীদের কোনোভাবে প্রভাবিত করবেন না।
আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, শহিদুল আলম একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী। তিনি এমন ছবি তুলেছেন, যার জন্য বাংলাদেশ অনেক সুনাম অর্জন করেছে। এক মাসের বেশি সময় তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। তাঁকে জামিন দিলে মামলার কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। তিনি সমাজের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি।
জামিনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে যে-কেউ সমালোচনা করতে পারেন। এটা তাঁর সাংবিধানিক অধিকার।
উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের জামিন আবেদন নাকচ করে দেন আদালত। পরে তাঁর আইনজীবী সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মহানগর দায়রা আদালতে শহিদুল আলমের জামিন নাকচ হওয়ায় এখন উচ্চ আদালতে জামিন চাওয়া হবে।
জামিন শুনানির সময় শহিদুল আলমের স্ত্রী রেহনুমা আহমেদসহ তাঁর স্বজনেরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শহিদুল আলম হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের এক বিচারপতি বিব্রত বোধ করেন। বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের একজন বিচারপতি বিব্রত বোধ করেছেন জানিয়ে আদালত বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর প্রধান বিচারপতি এই বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুনানি হয়।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ প্রচারের অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় গত ৬ আগস্ট শহিদুল আলমকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এর আগের দিন রাতে ধানমন্ডির বাসা থেকে তাঁকে তুলে নেয় ডিবি। সাত দিনের রিমান্ড শেষে গত ১২ আগস্ট শহিদুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন নিম্ন আদালত।
ওই মামলায় গত ৬ আগস্ট ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম শহিদুল আলমের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। ১৪ আগস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করা হলে ১১ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য রাখেন। এরপর ১৯ আগস্ট শুনানির তারিখ এগোনোর জন্য আবেদন করা হলে তা গ্রহণ করা হয়নি। ২৬ আগস্ট শহিদুল আলমের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চাইলে ওই আদালত শুনানির জন্য তা গ্রহণ করেননি। এ অবস্থায় ২৮ আগস্ট হাইকোর্টে তাঁর জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। ২৯ আগস্ট আবেদনটি শুনানির জন্য আরজি জানানো হয়। ৪ সেপ্টেম্বর আবেদনটির ওপর শুনানিতে হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চের একজন বিচারপতি বিব্রতবোধ করেন।