রাজধানীর সড়কে চলা মোটরসাইকেলগুলোকে সংকেত বা বাধা দিয়ে আটকে রাখা দায়।
ফাঁকা পেলেই বেপরোয়া গতি, যখন-তখন ওভারটেকিং, হেলমেট না পরা, ফুটপাত ব্যবহার, তিনজন আরোহী নিয়ে চলা, অন্য পরিবহনের সঙ্গে রেষারেষি- এই হল মোটরসাইকেল চলাচলের বৈশিষ্ট্য। ফলে সবসময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যায়।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায় মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া চলাচল। ব্যস্ততম সড়ক কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারা মোড়ে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে দেখা যায় মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া চলাচলের চিত্র।
ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যালে যখন সব ধরনের গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়, তখন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে হেঁচকা টান দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে কোনো মোটরসাইকেল আরোহী। দ্রুত গন্তব্যে যেতেই তারা এ কৌশলের আশ্রয় নেন।
একই অবস্থা রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে। সেখানে ট্রাফিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঝে মাঝে দড়ি টানিয়ে দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। একটু দেরি হলে মোটরসাইকেল চালকরা হাত দিয়ে দড়ি উঁচু করে বের হয়ে যান। আবার সিগন্যাল ছেড়ে দিলে কে কার আগে যাবেন এ নিয়ে পাল্লায় মেতে ওঠেন। শাহবাগ মোড়েও দেখা যায় একই অবস্থা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হওয়ায় এখানে মোটরসাইকেলের আধিপত্য অন্য এলাকার চেয়ে বেশি। এই মোড়ে গত দশ দিনে বেশ কয়েকবার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। চালকদের বেপরোয়া আচরণ রাজধানীজুড়েই। পুলিশ জানায়, অন্য পরিবহনগুলোর চালকরা নিয়ম-কানুন কিছুটা মানতে চাইলেও মানতে চান না মোটরসাইকেল চালকরা।
মৎস্য ভবন মোড়ে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মাজহারুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, যখন সিগন্যালে অন্য পরিবহনগুলো দাঁড়িয়ে যায়, তখন মোটরসাইকেল চালকদের অনেকে হুট-হাট করে এদিক সেদিক দিয়ে দ্রুত চালিয়ে যেতে চান। ফুটপাত দিয়ে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে ঘটে দুর্ঘটনা। তিনি জানান, যারা সিগন্যালে দাঁড়ান তারা একটু দেরি হলেই হর্ন বাজাতে শুরু করেন।
গণপরিবহনের অপ্রতুলতা ও যানজট এড়িয়ে চলতে গত কয়েক বছর ধরে মোটরসাইকেলে ঝুঁকছেন যাত্রীরা। প্রতিদিন দেশে গড়ে ১,০৩৫টি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নেয়া হচ্ছে। তবে মোটরসাইকেল চালকদের একটি বড় অংশের লাইসেন্স নেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, নিয়ম ভঙ্গের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে মোটরসাইকেল চালকরা। তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই কঠিন। তবুও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এর ফলাফলও পাওয়া যাচ্ছে।
এখন ৯৫ শতাংশের বেশি চালক ও পেছনের যাত্রী হেলমেট পরছেন। তিনি আরও জানান, ঢাকা শহরে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের দায়ে যে পরিমাণ মামলা হয় তার বেশির ভাগই মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে।