৬৫ বছর আগে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান আমলে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের বহরে আসে জিএম বি১২ মডেলের ৪০টি ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ)। এরপর পাকিস্তান ভেঙে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু ৬৬ বছরের সেই পুরোনো ইঞ্জিন এখনো এ দেশের রেলপথে চলছে। চলছে বলতে চালানো হচ্ছে। কারণ, বেশির ভাগ ইঞ্জিনের মেয়াদ চলে গেছে। মেরামত করে জোড়াতালি দিয়ে বুড়ো সেসব ইঞ্জিন দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
রেলের এক প্রকৌশলীর ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মোটরসের তৈরি এই ধরনের ইঞ্জিন বিশ্বের বহু দেশে এখন জাদুঘরে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই ইঞ্জিন মালামাল পরিবহনের কাজ দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে যাত্রী বহনও করতে হয়। এর বাইরেও এ রকম অর্ধশত বছরের পুরোনো ইঞ্জিন দিয়ে যাত্রী পরিবহনের কাজ চলছে। পুরোনো হওয়ায় এগুলো প্রায়ই বিকল হয়ে যায়। সেগুলোর যন্ত্রাংশও সহজে পাওয়া যায় না।
রেল কর্তৃপক্ষের মতে, একটি ইঞ্জিনের ইকোনমিক লাইফ বা কার্যক্ষমতা থাকে ২০ বছর। ১৯৭৩ সালে কার্যক্ষমতা চলে গেলেও ৪৬ বছর ধরে চলছে এসব ইঞ্জিন। কেবল বি১২ মডেলের ইঞ্জিন নয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে বহরে মোট ২৭৩টি ইঞ্জিনের মধ্যে ১৯৫টি ইঞ্জিন এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। মাত্র ৭৮টি ইঞ্জিনের মেয়াদ আছে।
ইঞ্জিনসংকটে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না। তিনি বলেন, ‘আপনি টেলিফোন করেছেন, জানতে চাইছেন, আমি কথা বলব না—এ কথা লিখে দেন।’
তবে রেলমন্ত্রী জবাব না দিলেও বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, রেলবহরে ১৪০টি নতুন ইঞ্জিন ২০২০ সালের পর থেকে আসা শুরু হবে। এসব নতুন ইঞ্জিন চলে এলে সংকট কেটে যাবে। তিনি আরও বলেন, ১০টি নতুন ইঞ্জিন ২০২০ সালের শুরুর দিকে আসা শুরু হবে। আরও ৭০টি ইঞ্জিন কেনার বিষয় মন্ত্রিপরিষদ সভায় পাস হয়েছে। সেগুলো ২০২১ সাল থেকে আসা শুরু হবে। আরও ২০টি ইঞ্জিন কেনার জন্য ঋণচুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া ৪০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনার জন্য দরপত্র হয়ে গেছে।
রেলের ভরসা ৭৮টি ইঞ্জিন
ব্রডগেজ ও মিটারগেজ মিলিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েতে বর্তমানে রয়েছে ২৭৩টি লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন। এর মধ্যে ব্রডগেজ ইঞ্জিন রয়েছে ৯৪টি। বাকি ১৭৯টি রয়েছে মিটারগেজ ইঞ্জিন। মিটারগেজ ইঞ্জিনের মধ্যে ৪৫টি ইঞ্জিনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর, ৩১টি ইঞ্জিনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর এবং ৬৪টি ইঞ্জিনের বয়স ৪১ বছর থেকে ৬০ বছরের বেশি। সব মিলিয়ে ১৭৯টি মিটারগেজ ইঞ্জিনের মধ্যে ১৪০টি মেয়াদোত্তীর্ণ। আর ৯৪টি ব্রজগেজ ইঞ্জিনের মধ্যে ২৪টির বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। ৩১টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন ৪১ বা তারও বেশি বছর পার হয়ে গেছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ব্রডগেজ ও মিটারগেজ মিলিয়ে ৭২ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে চলছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মিটারগেজ ও ব্রডগেজের ৩৯টি করে মোট ৭৮টি ইঞ্জিনের কার্যদক্ষতা রয়েছে।
ইঞ্জিন কমছে
কয়লাচালিত ইঞ্জিনের পাশাপাশি ১৯৫৩ সালে তৎকালীন ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলবহরে প্রথমবারের মতো আসে ডিজেলচালিত জিএম বি১২ মডেলের ৪০টি ইঞ্জিন। এসব ইঞ্জিন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল মোটরস। সড়কপথে যোগাযোগব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় ট্রেনই ছিল এ দেশে মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। যাত্রী চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেলবহরে ইঞ্জিনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের আগে ১৯৬৯-৭০ অর্থবছরে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়েতে ছিল ৪৮৬টি ইঞ্জিন। এর মধ্যে কয়লাচালিত ইঞ্জিন ছিল ৩৪৩টি, ডিজেল ইঞ্জিন ছিল ১৪৩টি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ রেলওয়েতে কয়লাচালিত ইঞ্জিন কমতে কমতে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু কয়লাচালিত ইঞ্জিন বিলুপ্ত হওয়ার পর সে অনুপাতে সেই স্থানে যুক্ত করা হয়নি ডিজেলচালিত ইঞ্জিন। যাত্রীর চাপ অনুসারে ডিজেলচালিত ইঞ্জিনের সংখ্যা বাড়েনি। বরং একটি পর্যায়ে এসে কমেছে। গত ১০ বছরে রেলে প্রায় দুই কোটিরও বেশি যাত্রী বাড়লেও সেই অনুসারে বাড়েনি ইঞ্জিন। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ইঞ্জিন ছিল ২৮৬টি। ওই বছর রেলে যাত্রীসংখ্যা ছিল পাঁচ কোটি ৩৮ লাখ ১৬ হাজার। ২০০৯-১০ পর্যন্ত ইঞ্জিনসংখ্যা একই ছিল। ২০১০-১১ অর্থবছরে রেলে ইঞ্জিনসংখ্যা কমে হয় ২৫৯। ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩৬টি নতুন ইঞ্জিন যুক্ত হয়ে ইঞ্জিনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৫। তবে পরের ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৭টি পুরোনো ইঞ্জিন বাতিল করা হলে ইঞ্জিনসংখ্যা দাঁড়ায় ২৫৮। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নতুন আরও ৩৫টি ইঞ্জিন যুক্ত হয়ে রেলওয়েতে ইঞ্জিনসংখ্যা হয় ২৮২টি। এর পরের দুটি অর্থবছরে রেলওয়েতে ইঞ্জিন কমতে থাকে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৭৮টি এবং সবশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেলওয়েতে ইঞ্জিনসংখ্যা কমে হয় ২৭৩।
যাত্রীসংখ্যা ওঠানামা করছে
যাত্রীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে ইঞ্জিনের মতো রেলের কোচ বা বগির সংখ্যা সে অনুযায়ী বাড়েনি। ১৯৬৯-৭০ সালে রেলে কোচ ছিল ১১৬৫টি এবং যাত্রী ছিল ৭ কোটি ২৮ লাখ ৮৫ হাজার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৭৬টি কোচে ৬ কোটি ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৭৪টি কোচে ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৪২ হাজার যাত্রী ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন। ২০১৫-১৭ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেলে কোচের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ২১৮ ও ১ হাজার ৩৮১টি। ওই দুই বছর রেলে যাত্রীসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৮ লাখ ৩১ হাজার এবং ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭ হাজার।
জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের সাত নম্বর প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে পূর্ব প্রান্তে রয়েছে ঢাকা রেলওয়ের লোকোশেড। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই সেখানে আসা-যাওয়া করে ট্রেনের অসংখ্য ইঞ্জিন। লোহালক্কড় নড়াচড়া আর ইঞ্জিনে হুইসিলের শব্দে মাথায় যেন সব সময় ধাক্কা দেয়। ১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে এই লোকোশেড এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা যায়। লোকোশেডের ভেতরে যেতে চোখে পড়ল ১৩টি ইঞ্জিন। ১৯৫৩ সালের ইঞ্জিন থেকে শুরু করে ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা নতুন ইঞ্জিনগুলোরও রক্ষণাবেক্ষণ তখন চলছিল। শ্রমিক-কর্মচারী সবাই ব্যস্ত। হাতে, নাকে, মুখে পোড়া মোবিলের দাগ। তাঁদের শরীর থেকে ছড়াচ্ছিল ঘাম আর ডিজেলের গন্ধ। কথা বলার সময় একদমই তাঁদের নেই। কারণ, সন্ধ্যাবেলার জন্য ইঞ্জিনগুলোকে প্রস্তুত করে দিতে হবে। একটু দেরি হলেই শিডিউল ঠিক রাখা যাবে না। কিছু সময় অপেক্ষার পর কয়েকজনের কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা জানান, ঢাকা রেলওয়ে লোকোশেডের অধীনে ৫১টি ইঞ্জিন রয়েছে। প্রতিদিন এসব ইঞ্জিনকে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। কারণ ইঞ্জিনসংকট। এ জন্য কোনো ইঞ্জিনকে বসিয়ে রাখা সম্ভব নয়। লোকোশেডের এক প্রকৌশলী বলেন, প্রতিদিন চার-পাঁচটি ইঞ্জিন ত্রুটি নিয়ে আসছে। এতটাই সংকট যে কোনো ইঞ্জিনকেই বসিয়ে রাখা যায় না। এগুলোর বিশ্রাম নেই। বিশ্রাম পেলে ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা ভালো থাকে। কিন্তু সেই উপায় নেই।
লোকোশেডের আরেক প্রকৌশলী নিয়ে গেলেন জিএম বি১২ মডেলের একটি ইঞ্জিনের কাছে। পুরোনো প্রায় মরচে ধরা ইঞ্জিনটি দেখিয়ে তিনি বলেন, জেনারেল মোটরসের এই ধরনের ইঞ্জিন বিশ্বের বহু দেশে এখন জাদুঘরে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই ইঞ্জিন মালামাল পরিবহনের কাজ দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে যাত্রী বহনও করতে হয়। একসময় বি১২ মডেলের ইঞ্জিনের গতি ছিল ৬৫ থেকে ৭৫ কিলোমিটার। এখন এর গতি ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটারের বেশি ওঠানো যায় না। এসব ইঞ্জিনের জ্বালানি খরচও বেশি।
ঢাকা লোকোশেডের আরেক প্রকৌশলী বলেন, বি১২ মডেলের ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ এখন কোথাও পাওয়া যায় না। রেলওয়ে বহরে এ ধরনের ইঞ্জিন ৪০ থেকে কমে এখন ১১টি রয়েছে। নষ্ট ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ খুলে ১১টি ইঞ্জিন সচল রাখা হচ্ছে। সদ্য যোগ হওয়া ভারতীয় ইঞ্জিনগুলো নিয়েও বিপাকে পড়তে হচ্ছে বলে রেলওয়ের এই প্রকৌশলী জানান। তিনি বলেন, ভারতীয় রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিনগুলো পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টির শর্তে বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে আনা হয়। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন এসব ইঞ্জিনেরও যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এ দেশে ট্রেনের ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা না হলে সমস্যা কাটবে না।
ঘাটতি ১০০ ইঞ্জিনের?
বাংলাদেশ রেলওয়েতে ইঞ্জিনসংকট কটি রয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাঁরা কেউ সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি। তবে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে রেলের ইঞ্জিনসংকটের কথা জানান রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। গত ১৭ মে রেল ভবনে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেমের সঙ্গে ১০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কেনার চুক্তি সই হয়। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে লোকোমোটিভ সংকটে ভুগছে। বহরের বেশির ভাগ ইঞ্জিনই মেয়াদোত্তীর্ণ। কাজেই এ চুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে যত দ্রুত সম্ভব ইঞ্জিনের একটি চালান সরবরাহের অনুরোধ জানান মন্ত্রী।
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা সূত্রে জানা গেছে, ভারতে প্রতি ৫০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পরপর একটি করে লোকোশেড রয়েছে। প্রতিটি লোকোশেডে ১০টি করে ইঞ্জিন রাখা হয়। বিকল হলে এসব ইঞ্জিন দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশ পার্বতীপুর, পাহাড়তলী, ঢাকা, কেলকাতে চারটি লোকশেড রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, বহরের ১০ শতাংশ ইঞ্জিন জরুরি প্রয়োজনে প্রস্তুত করে রাখতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়েতে সেটি নেই।
কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ২৭ থেকে ৩০টি ইঞ্জিন সব সময় সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখতে হয়। কিন্তু দেশে চাহিদার তুলনায় ইঞ্জিনসংকট রয়েছে ১০০টি। এর মধ্যে ৬০টি মিটারগেজ ও ৪০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিনের সংকট রয়েছে।
লোকোমোটিভ কারখানা সূত্রে জানা গেছে, একটি নতুন ইঞ্জিনকে তিনটি ধাপে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, যাকে বলে থ্রি টায়ার্স মেইনটেন্যান্স। প্রথম ধাপে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় ইঞ্জিনের পরিবহন কাজ শুরুর দেড় বছর পর। দ্বিতীয় ধাপের কাজ করা হয় তিন বছর পর এবং তৃতীয় ধাপের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় সাড়ে চার বছর পর। একটি নতুন ইঞ্জিনের বয়স ছয় বছর পেরিয়ে গেলে সেটিকে পার্বতীপুরে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় পাঠানো হয়। সেখানে ইঞ্জিনটির সব যন্ত্রাংশ খুলে মান যাচাই করা হয়। এ ছাড়া একটি ইঞ্জিনের বয়স ১৬ বছর হয়ে গেলে এর সব যন্ত্রাংশ বদলে ফেলা হয়।
রেললাইন স্থাপনে প্রকল্প বেশি
রেল সূত্রে জানা গেছে, রেলের উন্নয়নে এখন ৪৮টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩টি প্রকল্প রেললাইন স্থাপন, সংস্কার, নতুন লাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইসংক্রান্ত। বাকি পাঁচ প্রকল্পে ইঞ্জিন কেনাসহ অন্যান্য উন্নয়নকাজ অন্তর্ভুক্ত।
২০১১-১৫ রেলওয়ের ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৪৩ হাজার ৫৯৯ কোটি ৮১ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় মূলত ঢাকা-মাওয়া-জাজিরা-ভাঙা রুটে ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ, এর সঙ্গে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রুটে মিটারগেজ রেললাইন এবং ফৌজদারহাট-চট্টগ্রাম বন্দরে ডবল লাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে জন্য। এ ছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইন পুনর্বাসন প্রকল্প, পার্বতীপুর-কাঞ্চন-পঞ্চগড় এবং কাঞ্চন-বরাই রুটে রেললাইন নির্মাণ এবং বিরল স্টেশন থেকে বিরল সীমান্ত পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণকাজে এই অর্থ বরাদ্দ করা হয়। সেখানে ইঞ্জিন কেনার পরিকল্পনা প্রাথমিকভাবে ছিল না। পরে ওই পরিকল্পনায় ইঞ্জিন কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা দিয়ে ৫৬টি ইঞ্জিন কেনা হয়।
২০১৬-২০ সাল পর্যন্ত সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ৬৬ হাজার ৩৩৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ১৪০টি নতুন ইঞ্জিন কেনা হবে। সূত্রমতে, একেকটি ইঞ্জিনের দাম ২৫ থেকে ৩০ কোটির টাকার মধ্য হবে। এর মধ্যে কেবল দক্ষিণ কোরিয়ার ১০টি নতুন মিটারগেজ ইঞ্জিন রেলবহরে যুক্ত হবে দুই বছর পর ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে। বাকি ১১০টি ইঞ্জিনের মধ্যে ৪০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনার দরপত্র খোলা হয়েছে। এর কারিগরি দিক মূল্যায়নের কাজ চলছে। রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইঞ্জিনগুলো কেনার সম্ভাবনা বেশি।
বাকি ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনা হবে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই কোম্পানি থেকে। বিনিয়োগকারীর সঙ্গে এ বছরের মধ্যেই চুক্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বছর চুক্তি হলে ২০২০ সালের শেষ দিকে ৭০ ইঞ্জিন আসবে।