এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকির পানি কমতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে হাওরে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ লুটের যেন মহোৎসব শুরু হয়েছে। চলতি বছর অবৈধ জাল আটকে বড় ধরনের কোনো অভিযান না হওয়ায় মাছ লুটেরার অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠানো এ ব্যাপারে প্রশাসন রহস্যময় কারণে নির্বিকার।
সরেজমিন হাকালুকি হাওরে গেলে চোখে পড়ে মাছ শিকারের দৃশ্য। যে দিকে চোখ যায় সাদা জলে জাল টানার দৃশ্যই বেশি চোখে পড়ে। প্রভাবশালীরা গ্রুপবদ্ধ হয়ে টানছে বেড়জাল। ৪-৫ হাজার ফুট প্রশস্থ এসব জালে ছোট পুঁটি মাছ থেকে শুরু করে সব ধরনের বড় মাছ ধরা পড়ে।
ছোট নৌকায় গরিব জেলেরা কারেন্ট জাল আর কাপড়ি জাল দিয়ে নিজেদের সাধ্যমত ছোট মাছ শিকার করে। কেউ কেউ চাই (এক ধরনের মাছ শিকারের ফাঁদ) দিয়ে টেংরা মাছ শিকার করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। আরেকটি চক্র আস্তে আস্তে নৌকায় দাঁড়িয়ে চিংড়ি মাছ শিকার করছেন। বেড়জাল দিয়ে মাছ শিকারিদের ছবি তুলতে গেলে নিষেধ করে জাল টানতে থাকা জেলেরা।
ঝুঁকি নিয়েই তুলতে হয় এসব অবৈধভাবে জাল টানা মাছ শিকারিদের। জানা যায়, হাকালুকি হাওর তীরে কয়েকটি সংঘবদ্ধ লুটেরা চক্র রয়েছে। যাদের কাছে রয়েছে ২ থেকে ৫ হাজার ফুট দীর্ঘ একেকটি বেড় জাল। এসব বেড় জালে বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানা চলে অবিরাম। একেকটি বেড় জাল টানতে ৩০-৪০ জনের জেলে লাগে।
এসব বেড় জালের কারণে হাওরে মাছের বংশ ধংস হচ্ছে নিরবংশ হচ্ছে। এমনকি হাওরে জলজ উদ্ভিদ কিংবা শেওলাও জন্ম নিতে পারে না। রাত নেই দিন নেই সমানতালে চলে জাল টানা। হাওর থেকে অবৈধভাবে শিকার করা এসব মাছ পিক আপ ভ্যান যোগে দেশের বিভিন্ন হাট বাজারে নিয়ে যাচ্ছে বিক্রেতারা।
পুলিশ এসব ভ্যান থেকে মাসোহারা পেয়ে থাকে বলে জানা গেছে। ফলে তাদের মাছ নির্বিঘ্নে নিয়ে যেতে কেউ কোনো বাঁধা দেয় না। হাওর তীরের জুড়ী উপজেলার বেলাগাঁও গ্রামের আবদুর রব, ছবির মিয়া, জলিল, কাজলের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ চক্র হাকালুকি হাওরে চাতলা বিল এলাকা এবং কুলাউড়া উপজেলার সাদিপুর এলাকার নজম উদ্দিন, বাহুল উদ্দিন, মুস্তাকিন আলী ও আহছান উল্লাহর নেতৃত্বে চকিয়া বিল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, ১২ সেপ্টেম্বর তিনি হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে কিছু এলাকায় অবৈধ জাল আটক করেন। তবে হাওর তীরবর্তী সব উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে হাকালুকি হাওরে এবার কোনো অভিযান হয়নি। একা মৎস্য বিভাগের পক্ষে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভবও না।