ব্রাজিলের দক্ষিণের একটি রাজ্য রিও গ্রানেদে দো সু। সেখানকার ছোট্ট সুন্দর শহর কানদিদো গোদাই। এখানে মাত্র সাত হাজার মানুষ বাস করে। তবে এখানে ঢুকলে অবাক হতে হয়। কারণ, একটু পরপরই দেখতে এক রকম দুজন মানুষ হেঁটে যাচ্ছেন বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত আছেন। প্রথমে চোখের ভ্রম মনে হলেও খোঁজখবরে বেরিয়ে আসে মজার তথ্য। এটা আসলে যমজদের শহর!
পুরো ব্রাজিলে যমজের জন্মহার ১ দশমিক ৮, আর কানদিদো গোদাই শহরে তা ১০। তবে কেন এমনটা হয়, তার কারণ জানা যায়নি।
কারণটা খুঁজে বের করতে একদল জিনবিজ্ঞানী বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন। তাঁরা দম্পতিদের ব্যাপারে নানা তথ্য সংগ্রহ করছেন, ডিএনএ পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালাচ্ছেন। রহস্যভেদের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও কোনো ফল পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত।
যমজদের একজন লুসিয়া বলেন, যমজ বাচ্চা এখানে সাধারণ ঘটনা। ছোটবেলা থেকেই তাঁদের অনেক যমজ বন্ধু। বরং যমজ না দেখাটাই এখানে অস্বাভাবিক। বোনের এ কথার সঙ্গে হেসে সম্মতি জানান যমজের আরেকজন লুসিয়ানে।
গল্পে গল্পে লুসিয়া বলেন, কেউ কেউ বলেন, এখানকার পানিতে বিশেষ কিছু আছে, যে কারণে এমন হয়। তবে তিনি ও লুসিয়ানে তা বিশ্বাস করেন না। গল্পটা শুনতে ভালো, তবে সত্য মনে হয় না। যমজ হওয়ায় নানা মজার ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় তাঁদের। যেমন ছোটবেলায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাঁদের গুলিয়ে ফেলতেন। অন্য যমজদের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটে। শুধু তা-ই নয়, তাঁদের ছেলেবন্ধুরা তাঁদের নিয়ে গোলমাল পাকিয়ে ফেলেন! পাউলো নামের এক প্রবীণ ব্যক্তি জানালেন, তিনি ও তাঁর ভাই পেদ্রো যমজ। তাঁদের পরিবারে এখন পর্যন্ত চার জোড়া যমজ।
স্থানীয় ইতিহাসবিদ পাউলো লিরিও সাউথিয়ার এ ব্যাপারে বলেন, এ অঞ্চল একসময় জার্মানির উপনিবেশ ছিল। এখানকার ৮০ শতাংশ জার্মান, ১৩ শতাংশ পোলিশ আর বাকি ৭ শতাংশ অন্য জাতিগোষ্ঠীর। এখানকার মানুষ নামেই ব্রাজিলের নাগরিক, রক্তে বইছে ইউরোপের ধারা। আর অনেক আগে থেকেই যমজের জন্ম হয় এখানে। লোকসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যমজের সংখ্যাটাও বাড়ছে।
আন্তসম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে যমজ সন্তানের ধারা অব্যাহত আছে বলে রিও গ্রানেদে দো সুর মেয়র ভালদি লুইস গোল্ডস্কেমিড মন্তব্য করেন।