Monday , 23 December 2024
নিউজ টপ লাইন
ভোটযুদ্ধে চট্টগ্রাম বিভাগের একমাত্র দম্পতি

ভোটযুদ্ধে চট্টগ্রাম বিভাগের একমাত্র দম্পতি

সাবিনা খাতুন ও মোহাম্মদ এমদাদুল হক।

সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুজনই নির্বাচন করছেন চট্টগ্রাম নগরের দুটি আসন থেকে। কাকতালীয় হলেও দুজনই লড়ছেন সিংহ প্রতীক নিয়ে। নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৮টি আসনের মধ্যে এই দুজনই একমাত্র ‘নির্বাচনী জুটি’। আগ্রাবাদের হাজিপাড়ার পীর বাড়ি থেকে একসাথেই বের হন নির্বাচনী প্রচারে। তবে দুজন চলে যান দুদিকে। সাবিনা খাতুনের নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-পাহাড়তলী) আসন এবং এমদাদুল লড়ছেন চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে।

দুটি ভিন্ন আসন থেকে নির্বাচন করা চট্টগ্রাম বিভাগের একমাত্র দম্পতি জুটি হলেও চমকপ্রদ তথ্যটি জানে না নির্বাচন কমিশনও। কারণ দুজনই মনোনয়নপত্র থেকে শুরু করে হলফনামার কোথাও এ বিষয়ের অবতারণা করেননি। নির্বাচনী হলফনামায় দুজনই পরস্পরের আয়, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির বিষয়টি গোপন করেছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও দুজনই ‘ইনসানিয়াত বিপ্লব’ নামে একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা। এমদাদ ইনসানিয়াত বিপ্লব চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য সচিব। আর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন এ দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং দলের মহিলা শাখার চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক। আগ্রাবাদের হাজিপাড়ার শাহসুফি সাইফুর রহমান নিজামীর খানকা শরীফকে ইনসানিয়াত বিপ্লবের চট্টগ্রামের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে এমদাদুল হক বলেন, ‘ইনসানিয়াত বিপ্লব বিশ্ব সুন্নি আন্দোলনের একটি অংশ। দলের নিবন্ধনের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছি। কিন্তু তাঁরা আমাদের আবেদন বাতিল করেছেন। আমরা হাইকোর্টে রিট করেছি দলের নিবন্ধন চেয়েছি।’

ইনসানিয়াত বিপ্লবের ৪ জন নেতা চট্টগ্রামের ৪টি আসন থেকে নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরসহ জমা দেওয়া মনোনয়নে স্বামী-স্ত্রী টিকে গেলেও দলের বাকী দুই প্রার্থী চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই থেকে রেজাউল করিম এবং চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনে মোহাম্মদ আবু তালেব হেলালীর স্বাক্ষর জটিলতায় মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা হয়। তবে আবু তালেব হেলালী গতকাল হাইকোর্ট থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছেন এমদাদুল হক।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের বৈতরণী পার হতে গিয়ে কঠিন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁদের। এ প্রসঙ্গে সাবিনা খাতুন বলেন, ‘অনেকে বলেছেন স্বাক্ষর নিলে ভোট নিয়ে নেবেন। এমনও বলেছে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা তাঁদের জমিজমা নিয়ে নেব। তারপরেও আমাদের সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বাছাইয়ে স্বাক্ষরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছি।’

তবে দুজনই হলফনামায় পরস্পরের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। আলাদা আলাদাভাবে স্বামী ও স্ত্রীর আয়, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন শিক্ষায় স্নাতকোত্তর এই দম্পতি। কর্ণফুলী ইপিজেডের কোরিয়ান মালিকানাধীন এইচকেডি আউটডোর কারখানায় চাকরিরত এমদাদুল হক তাঁর হলফনামায় নিজের বাৎসরিক আয় উল্লেখ করেছেন ৯ লাখ ৯৬ হাজার ১৯২ টাকা। নগদ টাকা দেখিয়েছেন ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৯ টাকা। কিন্তু হলফনামায় স্ত্রীর ঘরে কোনো তথ্য দেননি।

আবার স্ত্রী সাবিনা খাতুন তাঁর হলফনামায় এস এ বেভারেজে চাকরির সুবাদে বাৎসরিক আয় উল্লেখ করেছেন ৬ লাখ ৬০০ টাকা এবং হাতে নগদ টাকার পরিমাণ দেখিয়েছেন ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪২১ টাকা। তিনিও হলফনামায় স্বামীর আয় কিংবা স্থাবর-অস্থাবর কোনো তথ্য দেননি। কিন্তু হলফনামার তথ্য অনুযায়ী দুজনের আলাদা আলাদা আয় রোজগার রয়েছে। দুজনই মনোনয়নের সাথে ফরম-২০ কাগজে নির্বাচনী ব্যয় হিসেবে ১৫ লাখ টাকা খরচ করবেন বলে জানান।

এ প্রসঙ্গে এমদাদুল হক বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হলফনামায় তথ্য দেওয়া হয়নি।’

হলফনামায় তথ্য গোপনের ব্যাপারে চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুনির হোসাইন খান বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী প্রার্থী আছে তা আমার জানা ছিল না। হলফনামায় তথ্য গোপনের বিষয়ে বাছাইয়ে কেউ আপত্তি তোলেননি। সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি কিছু না বলে তাহলে আসলে কিছু করার থাকে না। তবে বিধি অনুযায়ী হলফনামায় তথ্যগোপনের বিষয়ে নির্বাচনের পরেও ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

December 2018
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Scroll To Top