বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছে। গত কয়েক দিন ধরে চলা আন্দোলন সহিংস রূপ নেওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী সব গণমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে এই বিষয়ে খবর পরিবেশন করছে।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে কয়েক দিন ধরেই প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বিবিসি, আল জাজিরাসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম। আন্দোলনের শুরুর দিকে গত ১১ জুন ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরি সংরক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি।
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের সরকারি চাকরিকে উচ্চ-বেতন এবং সুযোগ-সুবিধার চাকরি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর এই চাকরির নিয়োগে কোনো বৈষম্য যেন না হয় সেই দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন বলেও জানানো হয়।
মঙ্গলবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি চলমান ছাত্র আন্দোলনের বিষয়ে ‘বাংলাদেশে চাকরি কোটা নিয়ে বিক্ষোভে নিহত ৩’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলেছে, লোভনীয় সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর সহিংস সংঘর্ষে বাংলাদেশে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবারের এই সংঘর্ষে আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এর আগে, সোমবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ সহিংসতায় আরও ৪০০ জনের বেশি আহত হন।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে শতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদনটিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ‘কোটাবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উচ্চ-বেতনের সরকারি সিভিল সার্ভিসের চাকরিগুলোতে নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর জন্য অর্ধেকের বেশি কোটা সংরক্ষণ করা হয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। সুবিধাভোগী ওই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা পাওয়ার বিষয়টিও আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) শিরোনাম করেছে—‘বাংলাদেশে সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে সংঘর্ষে বাংলাদেশে অসংখ্য আহত’। প্রতিবেদনের শুরুতেই ছাত্রলীগ এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে পুলিশের টিয়ার গ্যাসের শেল এবং লাঠিপেটা করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এর প্রতিবাদে দেশজুড়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থী মঙ্গলবার রাজপথে বিক্ষোভ করছেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। কোটাবিরোধী বিক্ষোভকারীরা দেশের প্রধান প্রধান মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন।
জানুয়ারিতে টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে এটিই প্রথম উল্লেখযোগ্য বিক্ষোভ। বর্তমানে দেশে বেকারত্বের উচ্চহারের মাঝে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দেশজুড়ে আন্দোলন করছেন।
এছাড়াও মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসি নিউজ, ভারতের ইকোনমিক টাইমস, সৌদি আরবের আরব নিউজ, ভারতের এনডিটিভি, দ্য গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের প্রভাবশালী অন্যান্য সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের কোটা-বিরোধী আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় খবর প্রকাশ করেছে।