আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিএসপি নেত্রী মায়াবতী বলেছেন, ‘গো-রক্ষার নামে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যা হচ্ছে সেজন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে জবাব দিতে হবে।’
আজ (বুধবার) সংসদের কাজকর্ম শুরু হতেই বিএসপি সংসদ সদস্য মায়াবতী এ নিয়ে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি নারীদের প্রতি বিজেপির তথাকথিত ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
মায়াবতী বলেন, ‘বিজেপি স্লোগান দিয়ে থাকে ‘নারীদের সম্মানে, বিজেপি ময়দানে’, কিন্তু আজ বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা প্রভৃতি রাজ্যে কী হচ্ছে? গরু রক্ষার নামে মধ্যপ্রদেশে প্রকাশ্যে মুসলিম নারীদের পেটানো হয়েছে, পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে। সরকার এ নিয়ে কি বলবে? এটা বরদাস্ত করার যোগ্য নয়। গো-মাতার নামে, গরু রক্ষার নামে গতকাল যে মহিলাদের নির্যাতন করা হয়েছে তা কি ঠিক? এ জন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষ করে মি. নাকভিকে (কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি) জিজ্ঞেস করতে চাই, ওখানে আপনাদের সমাজের মহিলাদের নির্যাতন করা হয়েছে। আপনি দাঁড়িয়ে বলুন। মধ্যপ্রদেশে মহিলাদের যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা কি বরদাস্ত করার যোগ্য?’
তিনি গরু রক্ষার নামে গুজরাটের উনাতে দলিতদের ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছে সে প্রসঙ্গও সংসদে তুলে ধরেন।
মায়াবতীর ঝটিকা আক্রমণের মুখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি সরকার পক্ষে সাফাই দিতে উঠে বলেন, ‘বোন মায়াবতী যে ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন, সরকার এ জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে মামলা দায়ের করেছে। আমরা দেশে বিশ্বাস এবং উন্নয়নের পরিবেশ কায়েম করতে চাই। সমস্ত অংশের উন্নয়নের জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আজ রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের গুলাম নবী আজাদ এই ইস্যুতে বলেন, ‘গরু রক্ষা হোক, কিন্তু আমরা ওই অজুহাতে দলিত এবং মুসলিমদের টার্গেট করার বিরোধী।’
সম্প্রতি বিজেপি শাসিত গুজরাটের উনাতে মরা গরুর চামড়া ছাড়ানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে ৪ দলিত যুবককে একটি গাড়ির পেছনে বেঁধে নির্মমভাবে পেটানো হয়। ওই ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের এক রেল স্টেশনে গরুর গোশত বহন করার গুজব তুলে দুই মুসলিম মহিলাকে প্রকাশ্যে ব্যাপক মারধর করে হিন্দুত্ববাদী একটি গ্রুপ। যদিও তদন্তে প্রকাশ, ওই মুসলিম মহিলাদের কাছে মহিষের গোশত ছিল।
আজ সংসদে বিএসপি নেত্রী মায়াবতী এবং তার সহযোগীরা এসব নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে ক্যুরিয়েন মায়াবতীকে বসে পড়তে বলেন। যদিও মায়াবতী এবং বিরোধী অন্য সদস্যরা এ সময় ‘দলিত বিরোধী ইয়ে সরকার, নেহি চলেগি, নেহি চলেগি’, ‘মহিলা বিরোধী ইয়ে সরকার, নেহি চলেগি’ বলে স্লোগান দিতে দিতে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান।
তুমুল বিক্ষোভের জেরে ডেপুটি চেয়ারম্যান রাজ্যসভার কাজকর্ম বেলা দু’টা পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেন।