আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নয়াদিল্লি: ভারতের গুজরাটের উনায় দলিত সম্প্রদায়ের উপর করা নির্যাতনের খবর চাউড় হয়ে গেছে দেশে বিদেশে। ছড়িয়ে গেছে ঘটনার পরে দলিত সম্প্রদায়ের করা প্রতিবাদের খবরও। তবে খবরের চেয়েও বেশি ছড়াচ্ছে যা, সেটা হল প্রচণ্ড দুর্গন্ধ।
সম্প্রতি মন্দিরে প্রবেশে বাধা পেয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তামিলনাড়ুর ২৫০টি দলিত পরিবার। তামিলনাড়ুর বেদারণ্যম ও কারুর জেলার ঘটনা এটি।
এবার মোদির নির্বাচনী এলাকায় গুজরাটে চলছে দলিত নির্যাতন। গরুর চামড়া ছাড়ানোর অপরাধে গত ১১ জুলাই দলিত সম্প্রদায়ের কয়েকজনের উপর নির্যাতন চালায় কট্টরপন্থী হীন্দু সংগঠন গো রক্ষা সমিতি।
গুজরাটের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় অন্তত ৫০০ মৃত গরু পড়ে রয়েছে। নির্যাতনের প্রতিবাদে এসব মৃতদেহ সরাচ্ছেন না দলিত সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা বলছেন- ‘গরু তোমাদের মা, তোমরাই মরা গরু পরিষ্কার করো। আমরা হাত দেবো না।’
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ নিয়ে ঘরে বাইরে মুখোমুখি হচ্ছেন নানান প্রশ্নের। রীতিমত সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
কেননা দলিত নিগ্রহের এই ঘটনার শুরু হয়েছে মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটেই। এর আগে একই রকম নিগ্রহের ঘটনায় হায়দরাবাদের এক দলিতছাত্র রোহিত ভেমুলা আত্মহত্যা করেন। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই উনায় ঘটে গেল নতুন করে ঘটে যাওয়া নিগ্রহের ঘটনা। দলিত নিগ্রহের ঘটনার জের ধরে রাজ্যে।
শুরু হয় এক অভূতপূর্ব ও চরম প্রতিবাদ। যে শূদ্রদের অচ্ছুত জেনে এতদিন চেহারা পর্যন্ত দেখতে চাননি সরকারের বড় কর্তারা, তারা এখন সেই দলিতদের পায়ে হাত দিয়ে ক্ষমা চাইলেও খুব বেশি অবাক হবার জো নেই। তাদের প্রতি নিগ্রহের বিচার না করা পর্যন্ত ময়লায় আর হাত দেবেন না দলিতরা।
দলিত সম্প্রদায়ের একজন হাসমুখ কারসানভাই চারভিয়া বলেন, আমরা সমাজের সবচেয়ে নোংরা কাজগুলো করি তারপরও আমাদের প্রহার করা হয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- একাজ আমরা আর করবো না।’
চারভিয়া বলেন, আমরা ২৫টি পরিবার আছি- যারা ঝাড়ুদারের কাজ করি এবং মরা গরু পরিস্কার করি। গত জুনে গরুর চামড়া ছাড়ানোর অপরাধে ১১ জন ঘাতক আমার পরিবারের ওপর আক্রমণ করে। তারা আমার স্ত্রী-পুত্র-ভাগনে-ভাতিজা এমনকি আমাকেও নির্যাতন করে।
‘তারা জানতো আমরা গরুর চামড়া পরিষ্কার করি, তারপরও আমাদের ওপর নির্যাতন করে। এরা উগ্রবাদি হিন্দু সংগঠন শিব সেনার নেতাকর্মী,’ বলছিলেন তিনি।
তাদের এই আন্দোলন গুজরাটের অন্য অঞ্চলগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
একটি মরা গরু সরালে ২০০ রুপি দেয়া হতো। এখন ঘোষণা করা হয়েছে একটি মরা গরু সরালে ৫০০ রুপি দেয়া হবে। তবুও আন্দোলন থেকে সরে আসছে না দলিত সম্প্রদায়।
‘তোমাদের ‘মা’, তোমরাই মরা গরু পরিষ্কার করো’
এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি মিনি ট্রাক এনে তাদের পরিষ্কারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এর ফল উল্টা হচ্ছে। দলিত লোকজন বলছে, ‘গরু তোমার মা, তুমিই অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করো।’
অথচ এ আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের যোগসাজসে হচ্ছে না যে কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষমা চেয়ে মিটমাট করা যাবে। কেউ কেউ অবশ্য বিকল্প রাস্তায় ভেবেছিলেন। টাকা দিয়ে মিটমাট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও দলিত সম্প্রদায়ের সদস্যদের সাফ কথা, ‘টাকা চাই না, অধিকার চাই।’
এদিকে ভারতের বুদ্ধিজীবীদের একাংশ দলিতদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন। তাদের বক্তব্য- ‘কাজ কাজই, শ্রম বিভাজন হল শ্রম বিভাজন, জাতপাতের দোহাই দিয়ে আর এত বড় সম্প্রদায়কে অচ্ছুত অশৌচ করে রাখা অমানবিক।’
দলিতদের একটি অংশ তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে গুজরাটের আহমেদাবাদে রবিবার সমাবেশ ডেকেছে। ধারণা করা হচ্ছে সেখানে অন্তত ১০ হাজার দলিত আসবেন যোগ দিতে।
সূত্র: এনডিটিভি