২৪ ঘন্টা খবর : দল পুনর্গঠনের জন্য বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলের প্রস্তুতিতে সরকার বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। অতীতেও বিএনপির কাউন্সিলে সরকার বাধা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর আগেও যখন কাউন্সিলের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করেছিলাম, তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ অসংখ্য নেতাদের গ্রেফতার করা হলো। জেলা পর্যায়ের নেতাদের গ্রেফতার করা হলো। সম্মেলন করতে পারলাম না। এবারও আমরা সম্মেলনের চেষ্টা করছি। কিন্তু সারা দেশে কোথাও ১০-২০ জন নেতাকে একসঙ্গে একত্রে বসতে দেওয়া হয় না। পুলিশ এসে বাধা দেয়।’ ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও চতুর্থ সম্মেলন উপলক্ষে সোমবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক কাউন্সিল অনুষ্ঠানে নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে নজরুল ইসলাম খান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা বিরোধী রাজনীতি করছি, তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করছি না। কিন্তু যখন কোনো দাবি নিয়ে এগিয়ে যাই, আমাদের সামনে আওয়ামী লীগ আসে না, আসে তাদের সরকারি পুলিশ বাহিনী। জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র নিয়ে তারা আমাদের গণতান্ত্রিক পথকে রুদ্ধ করতে চায়।’ প্রায় ১৬ বছর পর ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির সর্বশেষ পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ‘নানান মানুষ নানান পথ, দেশ বাঁচাতে ঐকমত্য’ স্লোগানকে সামনে রেখে কাউন্সিলে ১৯ দফা তুলে ধরেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর কয়েক দফায় কাউন্সিলের উদ্যোগ নিলেও কাউন্সিল করতে পারেনি দলটি। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিল করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ জন্য জেলা ইউনিটগুলোকে পুনর্গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে। নির্যাতন-নিপীড়ন করে ‘জনগণের আন্দোলন’ বন্ধ করা যাবে না জানিয়ে সরকারকে উদ্দেশ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার কি মনে করে নিপীড়ন নির্যাতন করে জনগণের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে? যাবে না। কখনো যায়নি। এই সরকারই তো সবচেয়ে ভালো জানে। তাদের সব নেতাকে গ্রেফতার করার পর আমেনা বেগম নামের একজন অপরিচিত মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারপর নির্বাচনে আওয়ামী লীগই তো বিজয়ী হয়েছিল। একইভাবে এরশাদ আমলে বিএনপির অনেক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ৯১-তে ঠিকই বিএনপি সরকার গঠন করেছিল। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে। সে জন্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া উচিত। এটা তাদেরই (আওয়ামী লীগ) দাবি। এ জন্য তারা মাসের পর মাস হরতাল করেছে। গানপাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। কিন্তু এখন আর সেটা পছন্দ হচ্ছে না। বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, তার দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা কথা বলা হলেও সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য বারবার আলোচনার কথা বলেছে। কিন্তু আলোচনা করা হয়নি। বর্তমান সরকারকে ‘ভোটারবিহীন এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার লড়াই করছে। জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করছে। এই দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘অনেকে হতাশা ব্যক্ত করেন, আর কত দিন? আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছে। বাকশাল করে যে পাপ তারা করেছিল, তার মূল্য দিতে হয়েছে ২১ বছর। আজ বাকশাল না হলেও প্রায় ওই রকমই একটি ব্যবস্থা হয়েছে। কারণ এই সংসদে বিরোধী দল নেই। এমনই বিরোধী, যারা মন্ত্রিসভায়ও আছেন, আবার বিরোধী দলেও আছেন।’ এলডিপির সভাপতি অলি আহমদের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন সেলিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের প্রাক্তন হুইপ আবদুল করিম আব্বাসী, মাহমুদুর রহমান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান প্রমুখ।