Monday , 23 December 2024
নিউজ টপ লাইন

‘আমাগো নামডা একটু লেইখ্যা নেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘বাবা, আমাগো নামডা একটু লেইখ্যা নেন। বন্যায় বাড়িঘর সব তলাইয়া গেছে। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউ এক মুঠো চাইল তো দূরের কথা কোন খোঁজখবরও নেয় নাই। তাই নাম লেইখ্যা নিয়্যা কিছু চাইল দেন।’

কথাগুলো মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীবেষ্টিত তেওতা ইউনিয়নের জাফরগঞ্জের রাজগঞ্জ এলাকার ৬০ বছরের বিধবা মহারানীর।

বন্যায় তার বাড়িঘর সব এখন পানির নিচে। অন্যের বাড়িতে বসবাস করে মানবেতর জীবনযাপন করছে অসহায় এই বৃদ্ধা। একই গ্রামের রোকেয়া কাঁদছেন। ঘরে খাবার নেই। যেখানেই ত্রাণের কথা শুনছেন সেখানেই যাচ্ছেন পানি সাঁতরিয়ে। জাফরগঞ্জ বাজারে কথা হয় তার সঙ্গে।

জানান, একটি মাত্র ছাপড়াঘর ছিল তাও পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু পেটের খাবার তুলে দেয়ার মতো সংসারে কেউ নেই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার নামডাও একটু লেইখো বাবা। সকাল থেকে কিছুই খাই নাই। কেউ রিলিফ না দিলে দুপুরটাও না খেয়েই থাকতে হইবো। বলেই চোখে পানি গড়িয়ে পড়লো এই নারীর।

জাফরগঞ্জ বাজারের এক কোনে বসে কাঁদছেন ৭০ বছরের মনোয়ারা বেগম। ধুবুলিয়া গ্রামের এই মানুষটি নদীর ভাঙনে ৭ বার বাড়িঘর হারিয়েছেন। স্বামী খালেক মিয়া মারা গেছেন প্রায় ২৫ বছর আগে। একমাত্র ছেলে মতিয়ারও হার্টঅ্যাটাক করে ৫ বছর আগে মারা যান। ছেলের ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বিধবা শেফালী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বন্যায় মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাঁধের ওপর বসবাস করছেন নাতি, নাতনি ও ছেলের বিধবা স্ত্রীকে নিয়ে।

শুধু বললেন, ‘বাজান ঘরে চাইল নাই। শুনছি এইহানে চাইল দিবো। তুমি একটু কইয়া দিলে আমারে কয়ডা চাইল দিতো। আমার নামডা নিয়া একটু চাইল দেয়ার ব্যবস্থা কইরা দেও।’ ঘিওর সদর ইউনিয়নের কুস্তা গ্রামের রহিমা বেগমের ঘরে-বাইরে পানি। ঘরে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন ৬৫ বছরের এই নারী। মাটি কেটে সংসার চালালেও এখন কোনো কাজ নেই। ঘিওরের ডিএন হাই স্কুলে ত্রাণ দিচ্ছে এমন কথা শুনে সেখানে হাজির হন তিনি। প্রখর রৌদ্রে বসে আছেন ত্রাণের আশায়।

জানালেন, কয়েক দিন ধরে ঘরের ভেতর কোমর পানি। কিন্তু কেউ খোঁজ নেয় না। খাবার নাই। অসুস্থ স্বামীর মুখেও দুই বেলা খাবার দিতে পারছেন না। একই ইউনিয়নের ঠাকুরকান্দি গ্রামের ময়না বেগম (৮০)। স্বামী গেদু মিয়া কত বছর  আগে মারা গেছে সেটা তার মনে পড়ছে না। ঘরে ৫ জন ছেলে ছিল। তাদের মধ্যে একে একে ৪জনই বিভিন্ন রোগে মারা গেছে। একমাত্র ছেলে থাকলেও মায়ের ভরণ পোষণ না করে আলাদা সংসার করছে।

ময়না বেগম আবেগাপ্লুত হয়ে বললেন, আমার কষ্টের সীমা নাই। আগে মাটি কাটতাম। এখন বয়স হওয়ায় তাও পারি না। বন্যায় বাড়িঘর সবকিছু তলিয়ে গেছে। সরকার যদি মাঝে মধ্যে চাল- ডাল দিতো তাহলে বন্যার এই সময় অন্তত দুই বেলা খেয়ে বাঁচতে পারতাম। বানভাসি মহারানী, রোকেয়া বেগম, মনোয়ারা বেগম, রহিমা ও ময়না বেগমের মতো শিবালয় উপজেলার তেওয়া ইউনিয়নের সহিতন, জহুরা, পারুল, জামেরুল, চম্পা, আলেয়া, পদ্মা, ফুলমতি, সালেহা সুন্দরীসহ বিভিন্ন এলাকার বানভাসি এই মানুষগুলো যেখানেই রিলিফের কথা শোনেন সেখানেই ছুটে যান এক মুঠো চাল-ডালের আশায়।
এদিকে দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন। ওই তিনটি উপজেলার চরাঞ্চলের দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ওই চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষের জন্য ৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় চার হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে চারটি উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ২৪৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়া, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের উথুলী মোড়ের সংযোগ সড়কে পানি উঠে পড়ায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।  জেলা শহরের সঙ্গে ঘিওর,  দৌলতপুর, হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলার যোগাযোগ চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

August 2016
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
Scroll To Top