নিজস্ব প্রতিবেদক : দেড় যুগ আগে ট্রান্সকম গ্রুপের কর্ণধার লতিফুর রহমানের মেয়ে শাজনীন তাসনিম রহমানকে হত্যার দায়ে হাই কোর্টে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়া পাঁচ আসামির মধ্যে একজনের সাজা বহাল রেখে চারজনকে খালাস দিয়েছে আপিল বিভাগ। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল ও জেল আপিলের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ মঙ্গলবার এই রায় দেয়। চূড়ান্ত রায়ে আসামিদের মধ্যে কেবল শাজনীনদের বাড়ির পরিচারক শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। আর খালাস পেয়েছেন সেই সময় শাজনীনদের বাড়ির সংস্কার কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদার সৈয়দ সাজ্জাদ মইনুদ্দিন হাসান, হাসানের সহকারী বাদল এবং গৃহপরিচারিকা দুই বোন এস্তেমা খাতুন (মিনু) ও পারভীন। ২০০৩ সালে বিচারিক আদালত এ মামলায় মোট ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তিন বছর পর হাই কোর্ট পাঁচজনের সর্বোচ্চ সাজার রায় বহাল রেখে একজনকে খালাস দেয়। আপিল বিভাগ যে পাঁচজনের রায় দিয়েছে তাদের সবাই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুল মোবিন জানিয়েছেন। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে কি না- তা বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।” অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এসএম শাজাহান বলেন, “ন্যায়বিচার পেয়েছি। ওই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছিল। আপিল বিভাগ আজ একটি মামলার রায় দিয়েছেন। জজ আদালতে থাকা অন্য মামলাটি বাতিল হয়ে গেছে।” মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে গুলশানে লতিফুর রহমানের বাড়িতে খুন হন তার মেয়ে শাজনীন তাসনিম রহমান। শাজনীন তখন ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। ওই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে ২০০৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কাজী রহমতউল্লাহ রায় দেন। রায়ে শাজনীনকে ধর্ষণ ও খুনের পরিকল্পনা এবং সহযোগিতার দায়ে হাসান, শহীদ, বাদল, এস্তেমা খাতুন, পারভীন ও কাঠমিস্ত্রি শনিরাম মণ্ডলকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারক। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) ওই বছরই মামলাটি হাই কোর্টে আসে। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিলও করেন। ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০০৬ সালের ১০ জুলাই হাই কোর্ট হাসান, শহীদ, বাদল, মিনু ও পারভীনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে। অপর আসামি শনিরাম মণ্ডল খালাস পান। হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা চার আসামি মইনুদ্দিন হাসান, বাদল, মিনু ও পারভীন। ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল এই চার আসামিকে আপিলের অনুমতি দেয় সর্বোচ্চ আদালত। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অপর আসামি শহীদুল জেল আপিল করেন। সাত বছর পর ২৯ মার্চ আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়ে ১১ মে শেষ হয়। ওইদিন মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে আপিল বিভাগ। এছাড়া হাই কোর্টে শনিরাম মণ্ডলের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে তা আগেই খারিজ হয়ে যায়। আপিল বিভাগে আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান। বাদীপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নজরুল ইসলাম চৌধুরী, এ এম আমিন উদ্দিন ও এ এস এম আবদুল মোবিন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোন্দকার দিলীরুজ্জামান।