আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হরমুযগান প্রদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ হলো ক্বেশম দ্বীপ। নীলাভ সাগরের কোলে জেগে ওঠা দ্বীপটি কেবল হরমুযগান প্রদেশেরই নয় বরং সমগ্র পারস্য উপসাগরীয় দ্বীপগুলোর মধ্যে অন্যতম বিশাল দ্বীপ। হরমুয প্রণালীর উৎসমুখে এই দ্বীপটির অবস্থান।
ক্বেশম দ্বীপের আয়তন দেড় হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশী। এই দ্বীপের প্রস্তরময় উপকূল প্রায় দুইশ দুই কিলোমিটার দীর্ঘ। ক্বেশম দ্বীপের আয়তন সিঙ্গাপুর বা বাহরাইনের তুলনায় আড়াইগুণ বড়। দৈর্ঘে ১২০ কিলোমিটার আর প্রস্থে স্থানবিশেষে ১০ থেকে পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার। এই দ্বীপে বেশ কয়েটি টিলাও আছে। তবে এসব টিলার উচ্চতা বেশী নয়। সবচেয়ে উচুঁ টিলাটির উচ্চতা হলো সাড়ে তিনশ’ মিটার।
এখানে প্রায় পঞ্চান্ন হাজার মানুস বসবাস করে। এদের সবাই মুসলমান। এরা ফার্সি ভাষার পাশাপাশি তাদের আঞ্চলিক ভাষাতেও কথা বলে।
১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে ক্বেশম দ্বীপ দ্বিতীয় মুক্ত বন্দর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৯০ সালে প্রথম এই বন্দরকে কাস্টমস বা শুল্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়। তবে ঐ বছরই পুনরায় ক্বেশমকে মুক্ত বাণিজ্য বন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কারণ এই বন্দরটি এখন ওমান সাগর এবং পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচে ব্যস্ত একটি বাণিজ্য বন্দর। আর এই ব্যস্ততাই প্রমাণ করে যে, বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান তার প্রতিবেশী দেশগুলোসহ মধ্যপ্রাচ্যের এমনকি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে কতো বেশী তৎপর।
সম্প্রতি দীর্ঘমেয়াদী কিছু প্রকল্প গ্রহণ করার কারণে ক্বেশম দ্বীপের চেহারাই যেন পাল্টে গেছে। মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল বলতে খুব স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায় যে, এ বন্দরে মালামাল আমদানী-রপ্তানী করতে কোনরকম আয়কর বা শুল্ক দেয়া লাগে না। ক্বেশম দ্বীপাঞ্চলে এ ধরনের মুক্ত শিল্পাঞ্চলও গড়ে উঠেছে। এটাকে আইনানুগ ভৌগোলিক অঞ্চলও বলা হয়। এ ধরনের এলাকায় সরকার দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে ভূমি ইজারা দেয়। অর্থশালীরা অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক কোনরকম সাংবিধানিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আয়কর মুক্ত সুবিধা নিয়ে এখানে বিনিয়োগ করতে পারে।
ক্বেশমের মুক্তাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুবিধা হলো এখানে তেল বা জ্বালানি বেশ সস্তা এবং প্রচুর পরিমাণে মেলে। হাতের নাগালেই রয়েছে এসব জ্বালানি। পরিবহন খরচ এখানে বেশ কম। ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার কারণে পারস্য উপসাগরীয় এবং মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মালামাল খুব সহজেই এই বন্দরের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন মার্কেটে পৌঁছানো যায়। তার মানে এখানে রয়েছে ট্রানজিট সুবিধা, শ্রমিক খরচও এখানে বেশ কম। মালামাল আমদানী রপ্তানীর ক্ষেত্রে আইনগত সহজতা এবং শুল্ক মুক্ত সুবিধা। এসব সুযোগ-সুবিধার কারণে ক্বেশম মুক্ত শিল্পাঞ্চলটি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।