নিজস্ব প্রতিবেদক:
সব বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বর্তমানে তিন জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে।
এরই মধ্যে ছয় জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। যাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তারা হলেন, জেএমবি নেতা জামালপুর সদরের বাসিন্দা শায়খ আবদুর রহমান। বগুড়ার গাবতলীর বাসিন্দা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই। জামালপুর সদরের আতাউর রহমান সানি, নাটোরের সিংড়া থানার আবদুল আউয়াল, রাজশাহীর মতিহার থানার ইফতেখার হাচান আল মামুন ও পিরোজপুরের কাউখালি উপজেলার আমজাদ ওরফে খালেদ সাইফুল্লাহ।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে দেশের বিচারিক আদালতে ৬২ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এসব জঙ্গির মধ্যে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে তিনজনের ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় আছে। বাকি ৫৩ জনের আপিল সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন।
সম্প্রতি গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় এবং ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদগাহের কাছে জঙ্গি হামলার পর নড়েচড়ে বসে সরকার সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন সূত্র জানায়, জঙ্গি সংক্রান্ত স্পর্শকাতর মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাব্বির ফয়েজ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘জঙ্গি মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্স দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কাজ করছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি জঙ্গি মামলা শুনানির জন্য বিভিন্ন বেঞ্চে পাঠানোও হয়েছে।’
রমনা বোমা হামলায় আট জঙ্গির বিচার হাইকোর্টে : রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আট জঙ্গির বিচার চলতি সপ্তাহেই হাইকোর্টে শুরু হচ্ছে এরা হলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত হুজি নেতা গোপালগঞ্জের মুফতি আবদুল হান্নান, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বাসিন্দা মাওলানা আকবর হোসেন ওরফে হেলাল উদ্দিন, ঢাকার মোহাম্মদপুরের আরিফ হাসান সুমন, টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার মাওলানা তাজউদ্দিন, ঢাকার দোহার থানার হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, বরিশাল কোতয়ালি থানার বাসিন্দা মাওলানা আবু বকর ওরফে মাওলানা হাফেজ সেলিম হাওলাদার, কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার মাওলানা আবদুল হাই ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানার মাওলানা শফিকুর রহমান।
এদের মধ্যে মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন ও মাওলানা আবু বকর ওরফে মাওলানা হাফেজ সেলিম হাওলাদার কারাগারে রয়েছেন এবং বাকিরা পলাতক।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মামলার আপিল শুনবেন। এই আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আশা করছি চলতি সপ্তাহেই রমনা বোমা হামলা মামলার আপিল শুনানি শুরু হবে। আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।’
নেত্রকোনার মামলায় দুই জঙ্গির চূড়ান্ত বিচারের অপেক্ষা : নেত্রকোনা মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার বাসিন্দা সালাউদ্দিন ওরফে সোহেল ওরফে সালেহীন এবং ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান ফকির ওরফে আসাদ চূড়ান্ত বিচারের মুখোমুখি। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালত তাদের ফাঁসির রায় দেন। এরপর হাইকোর্ট তাদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে এই দুজনের আপিল।
সিলেটে হামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল হাইকোর্টে : প্রাক্তন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি তিনজনের ফাঁসি বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এরা হলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা গোপালগঞ্জের মুফতি আবদুল হান্নান, সিলেটের শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও মৌলভীবাজারের দেলোয়ার হোসেন। এদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেছেন মুফতি আবদুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল। তাদের আপিল এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
গাজীপুরের আদালতে বোমা হামলায় ছয় জঙ্গির ফাঁসি বহাল : গাজীপুর আদালত এলাকায় আত্মঘাতী বোমা হামলার মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ জঙ্গির মধ্যে ছয়জনের ফাঁসি বহাল রাখেন হাইকোর্ট। বাকি চারজনের মধ্যে দুজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুজনকে খালাস দেন আদালত।
গত ২৮ জুলাই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ছয় জঙ্গি হলেন, এনায়েতুল্লাহ ওরফে ওয়ালিদ ওরফে জুয়েল, আরিফুর রহমান আরিফ ওরফে আকাশ ওরফে হাসিব, সাইদুর রহমান মুনসি ওরফে সাইদুর মুনশি ওরফে ইমন ওরফে পলাশ, আবদুল্লাহ আল সোহেল ওরফে জাহিদ ওরফে আকাশ, নিজামুদ্দিন নিজাম ও মো. তৈয়বুর রহমান। সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে মশিদুল ইসলাম মাসুদ ওরফে ভূট্টু ও জাহাঙ্গীর আলম ওরফে আদনান সামিকে। খালাস পেয়েছেন মো. আশরাফুল ইসলাম এবং মো. শফিউল্লাহ ওরফে তারেক ওরফে আবুল কালাম ওরফে আবুল কালাম মো. শফিউল্লাহ।
দুজনকে খালাস ও দুজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ডের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে।
এ ছাড়া গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার অপর একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত গাইবান্ধার সাঘাটা থানার মো. মামুনুর রশিদ ওরফে জাহিদের মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
শরীয়তপুরের দুই জঙ্গির আপিল : শরীয়তপুরের পালং থানার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শরীয়তপুরের ডামুড্যা থানার জঙ্গি মালেক হোসেন ওরফে মালেক জিহাদি ও ভেদরগঞ্জ থানার কামরুজ্জামান ওরফে স্বপনের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
এক জঙ্গির পুনর্বিচার : ২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর লক্ষ্মীপুর আদালতে বোমা হামলা মামলার আসামি শেরপুরের নকলা থানার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বাবুর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন বিচারিক আদালত। এ রায় হাইকোর্ট বহাল রাখেন। এরপর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিচারের জন্য পাঠিয়েছেন। বিচারিক আদালতে এ জঙ্গির আবারও বিচার হবে।
এ ছাড়া ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ঝিনাইদহ সদরে বোমা হামলার মামলায় ২১ জঙ্গিকে ফাঁসির আদেশ দেন বিচারিক আদালত। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ২১ জনের মধ্যে ১৪ জনকে যাবজ্জীবন এবং সাতজনকে খালাস দিয়েছেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে। বর্তমানে এ আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
জঙ্গিদের সর্বশেষ মামলার বিচার শেষ হয়েছে ৩১ মে। ওইদিন আশুলিয়ায় দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতির মামলায় ছয় জঙ্গিকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বোরহান উদ্দিন, সাইফুল ওরফে আল আমিন, মাহফুজুল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে জামিল, জসিমউদ্দিন, মিন্টু প্রধান ও পলাশ ওরফে সোহেল রানা। এদের মধ্যে পলাশ পলাতক। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যদের মধ্যে মিন্টু প্রধান বাদে বাকিরা জেএমবির সদস্য। ৩১ মে বিচারিক আদালত রায় ঘোষণার পরপরই মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে এ মামলাটিও হাইকোর্টে বিচারাধীন।