Monday , 23 December 2024
নিউজ টপ লাইন
তারেকের পাশে নেই বিএনপি!

তারেকের পাশে নেই বিএনপি!

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির ভবিষ্যৎ কান্ডারি দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে খালাস হওয়া মামলায় উচ্চ আদালত সাজা প্রদান করেছে। এর প্রতিবাদে অব্যহতভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়ে আসছে দলটি। তবে দলটির ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আদালত কর্তৃক তারেক রহমানকে সাজা দেয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে জাতীয়তাবাদী যুবদল। গত ২৩ জুলাই (শনিবার) দেশের সব জেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ পালনের ঘোষণা দিলেও রাজধানীতে কোথাও বিক্ষােভ মিছিলের চেষ্টাই করেনি সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

এর আগে ২১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

কর্মসূচি পালন না করার বিষয়ে রিজভী তখন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিবাদ সমাবেশ করার অনুমতি এখনো পাইনি। তবে বিক্ষোভ মিছিল কেন করেননি এ নিয়ে সদুত্তোর দেননি তিনি।

পরে প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সভা করার অনুমতি পায় বিএনপি। তবে ছোট মিলনায়তনে বড় একটি রাজনৈতিক দলের সভার আয়োজন হওয়ায় জায়গার সংকটে নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই প্রেসক্লাবে কিছুক্ষণ ঘুরোঘুরি করে চলে যান।

প্রতিবাদ সভায় আগত সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে মনোযোগ দিয়ে শুনতে দেখা যায়নি।

এদিকে তারেক রহমানের সাজার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ধর্মঘট পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। ধর্মঘটের দিন ক্যাম্পাসের কয়েকটি ভবনে তালাও লাগিয়ে দেন তারা। পাশাপাশি ঢাবি ক্যাম্পাসে ধর্মঘটের সমর্থনে বাংলা মোটর এলাকায় বিক্ষোভ করেন তারা। কিন্তু ঢাবি শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে পাঁচ শতাধিক নেতা থাকলেও ওই কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ ৫০ জন নেতা অংশ নেন।

একই দাবিতে ফের গত ২৭ জুলাই (বুধবার) বিক্ষােভ সমাবেশের ডাক দেয় জাতীয়তাবাদী যুবদল। অবশ্য সেদিন রাজধানীর দুটি স্থানে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেলেও দুই মিছিলে সব মিলিয়ে ১২০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া ২৬ জুলাই দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্রদলও। প্রথম দিনে ঢাকার সকল ইউনিটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং ২৭ জুলাই (বুধবার) দেশের সকল জেলা, মহানগর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।

অথচ কর্মসূচির সমর্থনে সেদিন কেন্দ্রীয় নেতারা বিক্ষোভ করার সময় ছাত্রদলের এক নেতাকে আটক করে পুলিশ। অবশ্য ৭৩৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির বিক্ষোভ মিছিলে সর্বোচ্চ ১শ` নেতাকে অংশ নিতে দেখা গেছে। ফলে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিলেও তা বাস্তবায়নে কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

এছাড়া মহানগরের কয়েকটি শাখার উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হলেও উপস্থিত ছিল কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাদের এক তৃতীয়াংশ।

সর্বশেষ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা প্রত্যাহারের দাবিতে ২৭ জুলাই বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয় বিএনপি। ঢাকা মহানগরসহ সকল মহানগরের থানায় থানায় এবং সকল জেলার উপজেলায় এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা বাস্তবে রূপ লাভ করেনি।

অথচ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজে ২৭ জুলাইয়ের কর্মসূচি যথাযথভাবে পালন করে সফল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন পত্রিকায় খবরও বেরিয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন পদ পাওয়া চল্লিশাের্ধ কোনো নেতাকেই সেদিন রাজধানীতে বিক্ষোভের চেষ্টাও করতে দেখা যায়নি।

বিএনপির একজন সমালোচক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো যখন মারা যান তখনও সরকার হার্ড লাইনে ছিল। কিন্তু সব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে লাখো জনতা তার জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক রহমানের খালাস পাওয়া একটা মামলায় উচ্চ আদালত কর্তৃক সাজা দেয়ার পর জনগণের মাঝে কর্মসূচিতে স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ দেখা যায়নি।

তিনি বলেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে- যে যার কাজে ব্যস্ত। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করলে সরকারের টনক নড়তো।

এ বিয়ষে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু জাগো নিউজকে বলেন, মহানগরে বিএনপি তেমন কার্যকর নয়, তাই হয়তো সেভাবে কর্মসূচি পালন হয়নি। তবে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কর্মসূচি পালন করেছে।

সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, কর্মসূচি পালন হয়নি তা ঠিক না। আমার জানা মতে কর্মসূচি পালন হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার বিরোধী নেতাকর্মীদের যেভাবে বাধা দিচ্ছে একারণে হয়তো বড় করে বেশি নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয় না।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাগো নিউজকে বলেন, কর্মসূচি ডাকার পর কেন বাস্তবায়ন হয় না তা তো বলতে পারবো না। নিশ্চয়ই হবে হয়তো।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী মনে করেন, বিএনপি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। রাজনীতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত বড় একটা ব্যাপার।

তিনি বলেন, গুলশানে হলি আর্টিসানে সন্ত্রাসী হামলার পর যদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বিএনপি মাঠে নামতে পারতো। সেই কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিতো না। বাধা দিলে সরকার বেকায়দায় পড়তো। পরে ওই আন্দােলনের সঙ্গে তারেক রহমানে ইস্যুতেও আন্দােলন করার সুযোগ পেত।

দেশের খ্যাতনামা এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, যখন গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো তখন তাৎক্ষণিকভাবে কর্মসূচির ডাক না দিয়ে সে সময় জিয়ার মাজার সরানোর বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনার প্রতিবাদে আলোচনায় জোর দিলো।

তিনি বলেন, বিএনপির জন্য জনগণের সমর্থন আছে। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় অনেকে ধরা পড়ে নতুন মামলার মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না। মামলায় জড়ানো মানে অনেক টাকা পয়সা খরচ করা। তাই হয়তো কর্মসূচি ডাকলেও সেভাবে উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না।

দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে কর্মসূচিগুলো সফল হতো বলেও মনে করেন প্রবীণ এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

August 2016
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
Scroll To Top