নিজস্ব প্রতিবেদক : বাহরাইনের রাজতান্ত্রিক সরকার সেদেশে জন অসন্তোষ ও সরকার বিরোধী চলমান গণআন্দোলনের জন্য ইরানের কথিত হস্তক্ষেপকে দায়ী করেছেন। ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়ে সরকার যখন গণআন্দোলন দমনে ব্যর্থ হয়েছে তখন তারা বাস্তবতাকে মেনে না নিয়ে ইরান বিরোধী প্রচারণা শুরু করেছে।
ইরান বিরোধী প্রচারণার অংশ হিসেবে ‘আরব দেশগুলোর জননিরাপত্তার জন্য ইরান হুমকি’- শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বাহরাইনসহ অন্য আরব দেশগুলোতে ইরানের কথিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলে।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত আশ্ শারকুল আওসাতের ইন্টারনেট সংস্করণে বলা হয়েছে, ওই সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা আরব দেশগুলোতে ইরানের কথিত হস্তক্ষেপ বন্ধের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। একদিনের ওই সেমিনারে পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত আরব দেশগুলোর সংসদ সদস্যরা এবং এসব দেশের সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা তিনটি আলাদা আলাদা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় মিলিত হন। এ সম্মেলনে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, আরবদের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা, ছাত্র সমাজ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইরানের হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা একেবারেই অযৌক্তিক এবং ডাহা মিথ্যা। বহু বছর ধরে বাহরাইন ও সৌদি আরব ইরানের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ করে আসছে। এসব দেশের সরকার মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবৈধ স্বার্থ রক্ষার জন্য যে কোনো অন্যায় কাজ বা মিথ্যাচার করতে দ্বিধাবোধ করে না। রাজতান্ত্রিক আরব সরকারগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন দেয়া থেকে শুরু করে মানবাধিকার লঙ্ঘন, অন্য দেশের সঙ্গে অযৌক্তিক আচরণ, মধ্যপ্রাচ্যে গোত্র ও ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করা, ইরানের কথিত হস্তক্ষেপ মোকাবেলায় দখলদার ইসরাইলের সহযোগিতা নেয়াসহ মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ বিরোধী নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। আরব সরকারগুলো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে অশান্তির আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে এবং ইরানের হুমকির মিথ্যা দাবি তুলে এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে নিরাপত্তাহীনতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাজতান্ত্রিক আরব সরকারগুলো শুধু যে মধ্যপ্রাচ্যের প্রকৃত হুমকির ব্যাপারে উদাসীন রয়েছে তাই নয় একই সঙ্গে উগ্র ওয়াহাবি মতবাদের বিস্তার ঘটিয়ে এ অঞ্চলে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তারা ধর্মের নামে দায়েশের মতো উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গড়ে তুলে ইসলামের সত্যিকারের মূল্যবোধ ধ্বংস করার পাশাপাশি মুসলিম ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকৃত হুমকির বিষয়টি উপেক্ষা করে অন্য দেশকে অভিযুক্ত করার মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বরং মুসলিম দেশগুলোতে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও শক্তিসামর্থ্যকে কাজে লাগানো। কিন্তু আরব দেশগুলো বিশেষ করে বাহরাইন ও সৌদি আরব ভুল পথে হাঁটছে এবং তাদের আচরণ এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মোটেও সহায়ক নয়। এ অবস্থায় ইরান বিরোধী সেমিনারের আয়োজন করে আরব দেশগুলো নিরাপত্তা সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।