নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ আর আনন্দে টালমাটাল চট্টগ্রাম নগর বিএনপি। নতুন কমিটিতে পদ পাওয়ায় কেউ আনন্দে আত্মহারা। পদবঞ্চিত হয়ে কেউ আবার জ্বলছেন ক্ষোভের আগুনে। একপক্ষ পদপ্রাপ্তিতে আনন্দ মিছিল করে মিষ্টি বিতরণের মাধ্যমে একে অপরকে বরণ করছে। আবার অপরপক্ষ পদ না পাওয়ার হতাশা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে।
নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে যোগ্যতা অনুযায়ী আবদুল্লাহ আল নোমানকে মূল্যায়ন না করার অভিযোগ করেছেন তার সমর্থকরা। এ জন্য তারা নগর বিএনপির কার্যালয়ে মিটিং করে তাকে কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটিতে অর্ন্তভূক্তির দাবি জানিয়েছেন।
নগর বিএনপির সভাপতি না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আবু সুফিয়ানও। তার সমর্থকরা এর প্রতিবাদে মিছিলও করেছেন। আবার নবগঠিত নগর কমিটির সভাপতি ডা. শাহাদাত ও সম্পাদক আবুল হাসেম বক্করকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে সংবর্ধিত করেছেন নেতাকর্মীরা।
নবগঠিত স্থায়ী কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় আবদুল্লাহ আল নোমান বিএনপি ছাড়ছেন বলে গুজব উঠেছে। বিএনপি ছেড়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারেন এমন কথাও শুনা যাচ্ছে। তার সঙ্গে নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান এবং উত্তর জেলা বিএনপির গোলাম আকবর খোন্দকারও রাজনীতি ছাড়ছেন বলে খবর শোনা যাচ্ছে।
এদিকে স্থায়ী কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় মন খারাপ বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের। চট্টগ্রামে তার সমর্থকরা বলছেন, রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়েও নিতে পারেন তিনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নোমানকে এবারো একই পদেই রেখেছেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তবে তাকে টপকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়েছে চট্টগ্রামের আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং কক্সবাজারের সালাহ উদ্দিন আহমেদকে। আমীর খসরু আগের কমিটিতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। সালাহ উদ্দিন ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব। খসরু আগে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন নোমান।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে নোমানের সঙ্গে চট্টগ্রামের দুই প্রভাবশালী নেতা সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও এম মোরশেদ খানও রয়েছেন। নোমানের মতো তারাও মন্ত্রী ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিতে যুক্ত নোমানকে নতুন কমিটিতে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি বলে মনে করেন তার সমর্থকরা। তারা কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে তাকে চাপও দিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, নোমান আশা করেছিলেন তাকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হবে। কিন্তু শনিবার ঘোষিত কমিটিতে নিজের স্থান দেখে হতাশ তিনি। নোমান সমর্থক এক নেতা বলেন, নোমান ভাই অনেক ত্যাগের বিনিময়ে চট্টগ্রামে বিএনপিকে গড়ে তুলেছেন, তার অবদান সবচেয়ে বেশি। একসময় যাদেরকে তিনি হাতে ধরে রাজনীতিতে এনেছেন, তারাই এখন গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন। অথচ তাকে মূল্যায়ন করা হল না।
নোমান সোমবার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। প্রত্যাশা ছিল যথাযোগ্য পদ পাবো। দলের নেতাকর্মীদের মতো আমারও মন কিছুটা খারাপ।”
ভাইস চেয়ারম্যান পদ ছাড়ছেন কি-না জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে নোমান বলেন, “সমর্থক, নেতাকর্মীরা ফোন করছে, বলছে পদ ছেড়ে দিতে। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করছি, ভাবছি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছি না।”
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম চট্টগ্রামের আহ্বায়ক আবদুস সাত্তার বলেন, “তিনি (নোমান) দল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ত্যাগ শিকার করে রাজনীতি করে যাচ্ছেন। তাকে যথাযোগ্য পদ নিয়ে সম্মান করা উচিত ছিল।”
ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসা নোমান ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ (ভাসানী) হয়ে গত শতকের ৮০ এর দশকে বিএনপিতে যুক্ত হন। তার ভাই আবদুল্লাহ আল হারুন ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা।
এদিকে সভাপতি পদ পাওয়ার ‘আশ্বাস’ পেলেও তা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ বিএনপির নবগঠিত চট্টগ্রাম নগর কমিটির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান।
নতুন পাওয়া সহ-সভাপতি ‘পদ ছাড়তে’ তার উপর নেতাকর্মীদের চাপ রয়েছে দাবি করে তিনি বলেছেন, দুয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকায় গিয়ে দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
কমিটি ঘোষণার দুদিন পর সোমবার সকালে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে চান্দগাঁও বিএনপির নামে আবু সুফিয়ানের অনুসারী যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাকে সভাপতি পদ না দেয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করে। এরপর বিকালে নগর বিএনপির নতুন কমিটির গণসংবর্ধনায়ও যাননি সুফিয়ান।
সুফিয়ান বলেন, গত জুনে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করি। সেখানে আবদুল্লাহ আল নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে ম্যাডাম আমাকে বলেন, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দিলে পারবো কি না। আমি বলেছি- পারবো। তারপর আমি চলে আসি। এখন দেখি ভাইস-প্রেসিডেন্ট দিয়েছে। এখন সহ-সভাপতির পদ ছাড়তে অনুসারীদের পক্ষ থেকে চাপ আছে বলে জানান সুফিয়ান।
এদিকে বর্তমান সংকটকালে দেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণে আবদুল্লাহ আল নোমানের বিকল্প নেই বলে মনে করেন মহানগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।
নগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এমএ সবুর বলেন, চট্টগ্রামের দায়িত্বশীল অনেক নেতা যেখানে আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছেন সেখানে নোমান ভাই দলের হাল ধরে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস ছাত্তার বলেন, নেতাকর্মী বেষ্টিত থেকে সারাজীবন নোমান দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন অতিক্রম করেছেন। কর্মীদের আবেগ-অনুভূতির কথা বিবেচনা করে বেগম জিয়া তাকে জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করবেন বলে আশা রাখি।