নিজস্ব প্রতিবেদক :
পদ্মা সেতু নির্মাণের পর এই সমুদ্র বন্দর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র বদলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শনিবার দুপুরে ঢাকায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনের অনুষ্ঠানে যুক্ত হন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
এর মধ্য দিয়ে নিরাপদ বাল্কপণ্য নদীপথে পরিবহনের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হলো বলে জানান পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মো. সাইদুর রহমান।
পদ্মা সেতুর পাথর নিয়ে আসা এমভি ফরচুন বার্ড থেকে পণ্য খালাসের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো পায়রার। গত ১ আগস্ট বিকালে ৫২ হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন পাথর নিয়ে নোঙ্গর করে বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ড।
ক্যাপ্টেন সাইদুর বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাস করে নৌপথে পরিবহন করা হবে। পণ্য খালাস ও পরিবহনের জন্য ইতোমধ্যে বন্দরে এসে পৌঁছেছে ১৫টি লাইটার জাহাজ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূলত দক্ষিনাঞ্চল অবহেলিত ছিল। এখানে যে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সে দিকে কেউ ফিরে তাকায়নি। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে আমার চেষ্টা এই দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করা। এর অংশ হিসেবেই আমার চেষ্টা রয়েছে দক্ষিনাঞ্চলকে উন্নয়নের আওতায় আনা। সে কারণেই পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। আজ চীন থেকে আসা পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য পাথর খালাসের মাধ্যমে এই বন্দরের কার্য্ক্রম শুরু হবে। আমি ওই খালাসের কার্য্ক্রম ও পায়রা বন্দরের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
তিনি বলেন, পায়রা শুধু সমূদ্র বন্দর নয় ভবিষ্যতে গভীর সমূদ্র বন্দর হবে। বাংলাদেশ মূল ব-দ্বীপ এই অঞ্চলে। তাই এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এখানে নৌ-বাহিনীর ঘাটি ও সেনা বাহনীর এক ক্যান্টনমেন্ট হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এখানে সমূদ্র বন্দরের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জাহাজ রিসাইক্লিং কেন্দ্র, পদ্মা সেতু হতে পায়রা পর্যন্ত রেল চালুসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড করা হচ্ছে। যেখানে এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। তাই এই অঞ্চলের মানুষ আর গরীব থাকবে না।
বন্দরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো যুক্ত ছিলেন, জাতীয় সংসদের চিফ হুইম আসম ফিরোজ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির প্রাক্তন সভাপতি নূরে আলম চৌধুরী, পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান, পায়রা বন্দরের প্রথম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ, অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানসহ বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মহাপরিকল্পনা নিয়ে ওই বছরের ৫ নভেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় `পায়রা সমুদ্রবন্দর` প্রকল্প। ওই বছরের ১৯ নভেম্বর বন্দরের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রামনাবাদ চ্যানেলের লালুয়া ও ধুলাসার থেকে প্রায় সাত হাজার একর জমি অধিগ্রহণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে ১৬ একর জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে জেটি, অত্যাধুনিক কনটেইনার ইয়ার্ড, শুল্ক স্টেশন ও নিরাপত্তা ভবন।
এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের তৃতীয় এই বন্দর নির্মাণ করে এ অঞ্চলকে বিশেষ একটি অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলতে হাতে নেওয়া হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী ও চতুর্মুখী পরিকল্পনা।
বন্দর উদ্বোধনের পর ২০১৮ সালে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরুর আগ পর্যন্ত কয়েকটি নির্দিষ্ট সেবা প্রদানের জন্য কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে বর্হিনোঙ্গরে জাহাজের মাল খালাস করা হবে। এ সকল পণ্য লাইটারেজ জাহাজে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছানো হবে।