বিশেষ প্রতিবেদক : অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় অসন্তোষ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্যদিকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ সরকারের বিপুল পরিমান অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে। এ অবস্থায় যে কোন মূল্যে রাজস্ব আদায় বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মুহিত বলেন, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অভ্যন্তরীণ বিরোধই এর জন্য দায়ী। এর ফলে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
আমাদের এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এ মূহুর্তে সরকারের অর্থের খুবই প্রয়োজন। রাজস্ব আদায় ঠিকমত না হলে তা উন্নয়ন কর্মকা-ে ব্যঘাত ঘটাতে পারে। উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে এনবিআরকে সর্বশক্তি দিয়ে এবং ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এনবিআরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এনবিআরের চেয়ারম্যান পরিবর্তন নিয়ে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। নতুন চেয়ারম্যানকে এক গ্রুপ মেনে নিলে অন্য গ্রুপ তার বিরোধিতা করে। ব্যুরোক্রেসির এমন সমস্যা সব সময়ই দেখা দেয়। এবারও তা হয়েছে। আমি তাদের সব দ্বিধা ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে বলেছি।
রাজস্ব আদায়ে বছরের শুরুতেই বেশ পিছিয়ে গেল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের কাঁধে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের বিশাল লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু তা অর্জনে প্রথম প্রান্তিকেই হোঁচট খেল এনবিআর। প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আয়ে ঘাটতি ৫ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা।
এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক), আয়করসহ সব মিলিয়ে আদায় হয়েছে ৩০ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। এই সময়ে ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল এনবিআরের।
গত অর্থবছরের একই সময়ে ২৮ হাজার ২১৯ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। গত অর্থবছরের লক্ষ্য অর্জনের পর এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায় ‘অর্জনযোগ্য’ বলে মত দিয়েছিলেন।
গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে রাজস্ব আদায় বেশি হওয়ার মতো বেশ কিছু উপলক্ষ ছিল। এ সময়ে দুটি ঈদ উৎসব উদ্যাপিত হয়েছে। উৎসবে বেচাকেনা বেশি হয়, তাই রাজস্ব আদায়ের বেশি সুযোগ থাকে। আবার উৎপাদন পর্যায়েও বেশি রাজস্ব আদায় হয়।
গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুন-জুলাই সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। অথচ এ বছর ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্ব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক, রপ্তানি শুল্ক আদায়ের পরিমাণ ৯ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এ খাতে ঘাটতি ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে এ খাতে আদায় হয়েছিল ৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা।
স্থানীয় পর্যায়ে সাধারণত মূল্য সংযোজন কর, আবগারি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও টার্নওভার ট্যাক্স আদায় করা হয়। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এ খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। এ খাতে ঘাটতি ২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। গতবার একই সময়ে আদায় হয়েছিল ১০ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।
আয়কর, ভ্রমণ করসহ প্রত্যক্ষ কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ২ হাজার ২৬ কোটি টাকা। এ খাতে আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে আদায় হয় ৮ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি এখনো সময় আছে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করা হলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এনবিআরকে সেভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।