নিজস্ব প্রতিবেদক :
অস্ত্র মামলায় বিচারাধীন থাকাকালে ফেনী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী কতদিন হাজতে ছিলেন তা জানতে তার নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে এই নথি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি ইকবাল কবির লিটনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে নিজাম উদ্দিন হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের রায়ের তারিখ পিছিয়েছে। আদালত মামলাসংশ্লিষ্ট একটি নথি তলব করে আগামী ২৩ আগস্ট রায়ের পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে এদিন নিজাম হাজারীর পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, নুরুল ইসলাম সুজন এমপি ও আইনজীবী কেএম হাফিজুল আলম। অপরদিকে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী।
পরে নিজাম হাজারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, অস্ত্র মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের আগে নিজাম হাজারী কত দিন হাজত বাস করেছিলেন, সে বিষয়ে জানতে ওই মামলার আপিল নিষ্পত্তির নথি দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে মামলার রায় এদিন ঘোষণার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২৩ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত। এর আগে রিটের বিষয়ে শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ১৭ আগস্ট নির্ধারণ করেন।
গত ৩ আগস্ট রিটের বিষয়ে শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ১৭ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেন। ‘আড়াই বছর সাজা কম খেটে বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় নিজাম হাজারীর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু ২ বছর ১০ মাস কম সাজা খেটে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত হোসেন ভূঁইয়া। আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে।
সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্যপদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ছিলেন না। অথচ তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৮ জুন হাইকোর্ট রুল দেন। এরপর হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ এই রুল শুনানিতে বিব্রতবোধ করেন। শেষ পর্যন্ত বিচারপতি মো. এমদাদুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে রিটটি শুনানির জন্য পাঠান প্রধান বিচারপতি। এই বেঞ্চে চলতি বছর ১৯ জানুয়ারি রুল শুনানি শুরু হয়।
নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্যপদ নিয়ে দেওয়া রুল শুনানিতে গত ২৬ মে হাইকোর্টের এই বেঞ্চ এক আদেশে বলেন, কারা কর্তৃপক্ষকে নিজাম হাজারীর সাজা ভোগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে হবে।
পরে কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১০ বছরের সাজার মধ্যে তিনি খেটেছেন ৫ বছর ৮ মাস ১৯ দিন। কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাজা রেয়াত পেয়েছেন ১ বছর ৮ মাস ২৫ দিন (৬২৫ দিন)। রেয়াতসহ মোট সাজা ভোগ করেছেন ৭ বছর ৫ মাস ১৪ দিন। এখনো সাজা খাটা বাকি ২ বছর ৬ মাস ১৬ দিন।