Monday , 23 December 2024
নিউজ টপ লাইন
ভাইরাস থেকে যায়, ভাইরাল হারিয়ে যায়

ভাইরাস থেকে যায়, ভাইরাল হারিয়ে যায়

কার্টারের ছবিতে মরণাপন্ন যে শিশুটিকে দেখা গিয়েছিল, তার সঙ্গে তুরস্কের সমুদ্রতটে হঠাৎ আবিষ্কার হওয়া শিশুর দেহের তফাত একটিই। একজন তখনো জীবিত ছিল, অন্যজন মৃত। আয়লান কুর্দির মৃতদেহ ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিতর্ক হয়েছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার শরণার্থীদের প্রতি মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের উদাসীনতা নিয়ে।

ভাইরাসটি চিনতে পেরেছিলেন কেভিন কার্টার। বুঝতে পেরেছিলেন, কোনো একটি ছবি বদলে দিতে পারে না পৃথিবীর ইতিহাস। কোনো কোনো ঘটনা, কোনো কোনো ছবি সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে মাত্র। উত্তেজনা ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা হয়। সমালোচনা হয়। বিতর্ক হয়। কখনো-সখনো মিলে যায় পুরস্কারও। ব্যস। ওই পর্যন্তই। ক্রমশ ভাইরাসের অভিঘাত প্রশমিত হয়। মানুষ ফিরে যায় পরিচিত উদাসীনতায়। সুদানের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ছবি তুলে পুলিৎজার সম্মান পেয়েছিলেন কার্টার। তার ফ্রেমে ধরা পড়েছিল বুভুক্ষু শিশুর মৃত্যুর অপেক্ষায় শকুন। ভাইরাল হয়েছিল সেই ছবি। আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু তাতে বদলায়নি আফ্রিকা বা মধ্যপ্রাচ্যের দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের চিরাচরিত ইতিহাস। কার্টারের ছবির পর বিশ্ববাসীর কাছে সাহারার দুর্ভিক্ষ বরং স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। সেটা বুঝতে পেরেছিলেন বলেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন কার্টার। আত্মহননের কারণ লিখে রেখে গিয়েছিলেন সুইসাইড নোটে।
কার্টারের ছবিতে মরণাপন্ন যে শিশুটিকে দেখা গিয়েছিল, তার সঙ্গে তুরস্কের সমুদ্রতটে হঠাৎ আবিষ্কার হওয়া শিশুর দেহের তফাত একটিই। একজন তখনো জীবিত ছিল, অন্যজন মৃত। আয়লান কুর্দির মৃতদেহ ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিতর্ক হয়েছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার শরণার্থীদের প্রতি মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের উদাসীনতা নিয়ে। আলোচনায় উঠে এসেছিল সিরিয়ার পরিস্থিতি, গৃহযুদ্ধের নেপথ্যে থাকা রাজনীতি। সমাজমাধ্যমে, গণমাধ্যমে মৃত আয়লানের ছবি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। প্রচুর নিউজ আওয়ার, নিউজ প্রিন্ট খরচ হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির বদল হয়নি। ইউরোপে শরণার্থী-নীতি সামান্য বদলালেও পরিবর্তন হয়নি মধ্যপ্রাচ্যের মানসিকতার। বদলায়নি সিরিয়ার পরিস্থিতি। আইএস’কে আগে যারা সাহায্য করছিল, এখনও তারাই মদত জোগাচ্ছে। আইএস-বিরোধী অভিযানে আগের মতোই ধ্বংসলীলায় মত্ত পৃথিবীর তথাকথিত সভ্য এবং শান্তিকামী শক্তি। বস্তুত ইতিহাসের চাকা আরেকটু পিছনের দিকে ঘোরালে দেখা যাবে, সিরিয়া-পরিস্থিতি নতুন কিছু নয়। জঙ্গিদমনের নামে ঠিক এভাবেই আফগানিস্তানকে ধূলিসাৎ করে দেয়া হয়েছিল। সভ্যতার নামে এভাবেই দিকে দিকে মরুভূমি তৈরি করেছে আধুনিকতা। আবার সেই আধুনিকতাই নিজেকে সভ্য প্রমাণ করতে কোনো কোনো ছবি, কোনো্ ঘটনাকে ভাইরাল করে তুলছে। আয়লানের পর তেমনই এক নতুন ভাইরাল ওমরান দাখনিশ।
সিরিয়ায় বোমারু বিমানের হানায় আহত ওমরান এখনো বেঁচে আছে। আয়ু অবশ্যপ্রার্থনীয়। কিন্তু সত্যিই কি বাঁচে ওমরানেরা? আফগানিস্তানে, সিরিয়ায়, ইরাকে, সাহারায়, বিশ্বের দিকে দিকে কতজন ওমরানের কথা জানে সোশ্যাল মিডিয়া! জানার কথাও নয়। কার্টারের ছবি ভাইরাল হয়েছিল; কারণ, বহু শিশুর মতো সেই শিশুটিকে তখনো ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়ে ফেলতে পারেনি শকুন। আয়লান ভাইরাল হয়েছিল; কারণ, আরো বহু শিশুর মতো ভূমধ্যসাগরে তলিয়ে যায়নি তার দেহ। ওমরান ভাইরাল হয়েছে; কারণ, বোমারু হামলায় তার দেহ শতছিন্ন হয়ে মাটিতে মিশে যায়নি। ইতিহাসে তারা ব্যতিক্রমই। আশ্চর্যে হলেও সত্যি, ইতিহাস চিরকালই ব্যতিক্রম নিয়ে হইচই করে। সমাজবিজ্ঞানীরা যাকে বাস্তবের ‘রিলিফ’ বলে বর্ণনা করেন। ভাইরাল তরঙ্গ আসে-যায়। কিন্তু সভ্যতার ভাইরাসগুলো থেকে যায় প্রথা মেনেই। কার্টার তা বুঝতে পেরেছিলেন!
(সূত্র : ইবেলা)

 

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

August 2016
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
Scroll To Top