নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভারত ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দৌলতপুর উপজেলার চিলমারি ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে দাবি করেছে স্থানীয়রা। একই সঙ্গে শিবগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ভারত সরকার বিহার রাজ্যের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সামলাতে ফারাক্কার ১১৭টি গেটের মধ্যে ৯৯টি গেট খুলে দিয়েছে। এতে উজান থেকে নেমে আসা পানি পদ্মা ও পাগলা নদীতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতি তিন ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে।
এভাবে পানি বাড়ার গতি অব্যাহত থাকলে শনিবারের মধ্যে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পদ্মার পানির বিপদসীমা হচ্ছে ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। সেখানে শুক্রবার দুপুর ১২ টায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৪ দশমিক ০৬ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা থেকে মাত্র পয়েন্ট ১৯ সেন্টিমিটার দূরে।
গত ১৮ আগস্ট এ পানির মাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার। ১৯ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। ২৫ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। প্রতি তিন ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রধান শাখা গড়াই নদেও অব্যাহতভাবে পানি বাড়ছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নৈমূল হক জানান, বিহারে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ভারত তাদের ফারাক্কা বাধের দরজা খুলে দিয়েছে। তাতে পদ্মায় পানি বেড়ে যাচ্ছে। যে গতিতে পানি বাড়ছে তাতে শনিবারের মধ্যে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে। আমাদের টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
এদিকে পদ্মা ও গড়াই নদীতে অব্যাহতভাবে পানি বাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তারা সজাগ রয়েছে। নদী ও নদের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও বাঁধে সব সময় নজর রাখা হচ্ছে।
এদিকে হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বাড়ায় জেলার দৌলতপুর উপজেলার চিলমারি ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রতিটি ঘরেই পানি ঢুকে পড়েছে। ঘরের মধ্যে মজুদ রাখা পাট, ধান ও মরিচসহ সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এসব এলাকায় তীব্র খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে।
বাজুমারা গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, নলকূপ ডুবে যাওয়ায় পান করার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নৌকায় করে গ্রামবাসীকে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
দৌলতদিয়া উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ জানান, গত কয়েক দিন ধরে অব্যাহতভাবে পদ্মার পানি বাড়ায় চিলমারির ১৮ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ। তিনি দাবি করেন সাম্প্রতিক সময়ে বন্যায় এতো ক্ষতি আর কখনও হয়নি।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন জানান, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ১২ গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এখানকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এলাকায় তীব্র খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।