নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশার ঘাতক ওবায়দুলের বোন মোছা. খাদিজা বেগম (৩৬) ও দুলাভাই মো. খাদেমুল ইসলামকে (৪৬) আটক করেছে পুলিশ।
এসময় খাদেমুল ইসলামের মা খতেজা বেগমকে (৭৫) আটক করলেও পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
তবে একটুর জন্য পুলিশের হাতছাড়া হয়েছে ঘাতক ওবায়দুল। সোমবার দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় লাটেরহাট বাজারে তাকে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সোমবার সন্ধ্যায় রমনা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোশারফ হোসেন বীরগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় ঘাতক ওবায়দুলের নিজ বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মিরাটঙ্গী গ্রামে অভিযান চালায়। কিন্তু অভিযানের আগেই বাড়ি থেকে পালিয়েছে পরিবারের অপর সদস্যরা।
প্রতিবেশী মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ওবায়দুলের সঙ্গে তার দেখা হয়। তার সঙ্গে তেমন কোনো কথা হয়নি। তবে রোববার বিকেল পর্যন্ত আমি তাকে দেখেছি। তখন পর্যন্ত জানি না সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
ওবাইদুলের বোন মোছা. খাজিদা বেগম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় আমাদের বাড়ি আসে ওবায়দুল। সকালে আমাদের সঙ্গেই নাস্তা করে। বিশ্রাম নিয়ে দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। সে এমন একটি ঘটনা ঘটিয়েছে আমাদের কারো কাছে জানায়নি।
এ বিষয়ে মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ওবায়দুলের বাবা মো. আব্দুস সামাদ পেশায় শস্যের পাইকার ছিলেন। প্রথম স্ত্রী বুধিরন এক ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে মারা যাওয়ার পর মোছা. চন্দনী বেগমকে বিয়ে করেন। চন্দনীর ঘরে এক ছেলে ও চার মেয়ের জন্ম হয়।
একমাত্র ছেলে ওবায়দুল যখন চকদফর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র তখন তার মা চন্দনী বেগম মারা যান। এরপর পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাবা আব্দুস সামাদ তাকে ঠাকুরগাঁও ম্যাজিক কার্ট টেইলার্সে রেখে আসেন। অভাবের সংসারের কথা শুনে শিশু ওবায়দুলকে টেইলার্সে কাজের সুযোগ দেন টেইলার্সের মালিক গৌরাঙ্গ।
এদিকে আব্দুস সামাদ আবার বিয়ে করেন আখেলিমা নামে এক নারীকে। আনুমানিক ৫ বছর আগে মারা যান আব্দুস সামাদ। বাবার মৃত্যুর পরও ওবাইদুল প্রায়ই এখানে আসত। প্রতি ঈদ সে এখানে পালন করেছে। তাকে সর্বশেষ গত সোমবার দুপুরে লাটেরহাট বাজারে দেখা গেছে। তখন পর্যন্ত বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি জানার পর আমরা হতবাক হয়েছি।
মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মজিদুল ইসলাম মাস্টার জানান, এই ছেলে একটি মেয়েকেই শুধু হত্যা করেনি, আমাদের কলঙ্কিত করেছে। আমরা এই এলাকার মানুষ লজ্জিত এবং শোকাহত। ইতোমধ্যে এলাকার মানুষ তাকে আটক করতে সকল প্রকার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
এ বিষয়ে বীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আক্কাছ আহম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।