আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘সাফল্য’কে ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনার সঙ্গে তুলনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল (মঙ্গলবার) ভারতের হিমাচল প্রদেশে এক সমাবেশে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’–এর নাম উল্লেখ না করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এখন দেশে আমাদের সেনাদের বীরত্ব নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা আগে শুনেছি ইসরাইল এই কাজ করেছে। এখন দেশ দেখছে ভারতীয় সেনারা কারো থেকে কম যান না।’
গত রোববার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পার্রিকার বলেছিলেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়েছে ‘আরএসএস’-এর দেয়া শিক্ষার কারণেই। তার ওই মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেই বিতর্ক শেষ না হতেই বিশ্লেষক মহলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যকে ঘিরে নয়া বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখে কেন ইসরাইল প্রসঙ্গ উঠে এল তা নিয়ে জল্পনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম অধ্যুষিত ফিলিস্তিনকে লক্ষ্য করে যখন ঘন ঘন রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় যায়নবাদী ইসরাইল। বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ভেতরে ঢুকে হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা। ফিলিস্তিনের বিপুল জমিও দখল করে রেখেছে আগ্রাসী ইসরাইল। তাছাড়া ফিলিস্তিনের জনগণকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে মনে করে আধিপত্যবাদী ইসরাইলি শাসকরা। আন্তর্জাতিক শান্তি উদ্যোগকে পাঁচ দশক ধরে নস্যাৎ করে ফিলিস্তিনকে গুঁড়িয়ে দিতে একনাগাড়ে প্রচেষ্টাও চালাচ্ছে ইসরাইল। সেক্ষেত্রে বর্বর ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তুলনা করা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আরব দুনিয়াসহ কূটনৈতিক মহলে এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
২০১৪ সালের জুলাই-আগস্টে ৫১ দিন ধরে গাজায় ইসরাইলি বাহিনী একটানা সামরিক অভিযান চালিয়েছিল। অবরুদ্ধ গাজাকে ধ্বংস করতে মাটিতে এবং আকাশ থেকে ভয়ংকর বোমাবর্ষণ করা হয়। ২২০০ ফিলিস্তিন নিহত হন, এদের মধ্যে ৫৫০ জনই শিশু। ১৮ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। হাজার হাজার শিশু এতিম ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। প্রায় ৫ লাখ ফিলিস্তিনকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে হয়েছিল।
বিশ্বজুড়ে চরম নিন্দিত ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লি অবশ্য ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত ছিল। দীর্ঘকাল ধরে ফিলিস্তিনের প্রতি ভারত সহমর্মিতা দেখিয়ে এলেও নরেন্দ্র মোদি জামানা থেকে ইসরাইল প্রসঙ্গে সেই নীতি বিসর্জিত হয়েছে।
পশ্চিম এশিয়া বিশেষজ্ঞ কামার আগা’র মতে, ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা সবসময়ই ছিল কিন্তু তা লুকোনো শব্দে আবৃত ছিল। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সফরকেও উপেক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু বিজেপি এখন এসবের থেকে এগিয়ে গেছে। তারা বলতে চাচ্ছে ইসরাইলকে তারা ‘রোল মডেল’ হিসেবে দেখছে। ইসরাইল নিরাপত্তার জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা তারা ভারতের জন্যও সঠিক বলে মনে করছে।
কামার আগার অভিমত, বিজেপি এবং জনসঙ্ঘের দিকে দেখলে বোঝা যাবে তারা সবসময় ইসরাইলের প্রশংসা করেছে এবং তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শও এটাই যে ইসরাইলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। কামার আগার মতে, পররাষ্ট্রনীতিতে এই যে পরিবর্তন তা আগে থেকেই চলছিল। এবার বিজেপি ক্ষমতায় এসে তাকে স্পষ্ট করে দিয়েছে।