Monday , 23 December 2024
নিউজ টপ লাইন
পিরোজপুরে মালটা চাষে বিপ্লব

পিরোজপুরে মালটা চাষে বিপ্লব

নিজস্ব প্রতিবেদক : পিরোজপুরের মাটি আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখানকার কৃষকরা চাষাবাদে যেমন এনেছেন বৈচিত্র, তেমনি এগিয়ে যাচ্ছেন নতুন নতুন প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি বিপ্লবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মালটার বিপ্লব। আর এই বিপ্লবকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়েছেন শেখ হুমায়ুন কবির নামে সদর উপজেলার বড় খলিশাখালী গ্রামের এক ব্যবসায়ী।

মালটা চাষি শেখ হুমায়ুন কবির (৪৫) জানান, ২০১৫ সালে নিজ গ্রামে ৭৫ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলেন তার মাল্টা বাগান। এটাই দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম মালটার বাগান বলে তার দাবি। তার বাগানে ২১ হাজার মালটা গাছের সঙ্গী ফসল হিসেবে রয়েছে আমসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় ফলের গাছ।

Pirojpur

গত বছর তিনি মালটার বাগান করলেও এ বছরই তার বাগানের প্রায় এক-চতুর্থাংশ গাছে মালটা ধরেছে। ফলে এ বছরই তার বাগানের খরচের অনেকটাই উঠবে বলে আশা করছেন তিনি। বিদেশি মালটার তুলনায় বেশ রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় বাজারে তার মালটার চাহিদাও অনেক।

তিনি জানান, মালটা গাছ থেকে গ্যাফতীয় এর মাধ্যমে এক থেকে দেড় লাখ চারা সংরক্ষণ করে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে সম্প্রসারিত হলে আমরা বিদেশেও মালটা চারা রফতানি করতে পারবো।

প্রতি কেজি মালটা পাইকারি ১২০-১৩০ টাকা দরে বিক্রি হলেও, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মালটা ১৪০-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কম্পিউটার সায়েন্স এ লেখাপড়া করা হুমায়ুনকে একটি ঘটনাই মালটা তথা দেশীয় ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করে। ২০১৪ সালে গ্যাস্ট্রোএন্টারলোজি (হজমজনিত সমস্যা) রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান তিনি। সেখানে কয়েক মাস চিকিৎসা চলাকালীন সময় সেদেশের বিষমুক্ত বিভিন্ন ফল খান। সেখান থেকেই তিনি ফল চাষের প্রতি উদ্বুদ্ধ হন।

Pirojpur

কৃষিতে হুমায়ুনের এই উদ্যোগ নেয়ার পেছনে তার স্ত্রী শামসুন্নাহারের রয়েছে বিশেষ অবদান। স্ত্রীর প্রেরণায়ই তিনি ফলের চাষের প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন বলে জানান হুমায়ুন।

স্ত্রী শামসুন্নাহার জানান, বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সময় তার স্বামী সেখানকার বিষমুক্ত ফল খেয়ে অধিক সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাই তিনিও স্বামীর সিদ্ধান্তে একমত হন ফল চাষের জন্য। সরকারি চাকরির পাশাপাশি তিনিও ফলের বাগান দেখশুনা করার জন্য সময় দেন।

এ অঞ্চলে মালটা চাষকে আরও ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এ বছরই টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এক লাখ মালটা চারা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে তার। বর্তমানে তার বাগানে তিনি ৩২ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন।

সম্প্রতি হুমায়ুনের মালটা বাগানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা হয় সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান এর সঙ্গে। তিনি জানান, অন্যান্য ফসল সর্বোচ্চ ডিএস ৪ মাত্রার লবণ সহ্য করতে পারে। কিন্তু মালটা গাছ সর্বোচ্চ ১২ ডিএস মাত্রার লবণ সহ্য করতে পারার কারণে লবণাক্ততার ঝুঁকিতে থাকা অন্যতম উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরে নিশ্চিন্তে মালটা চাষ করা সম্ভব।

পিরোজপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এমডি আবুল হোসেন তালুকদার জানান, বিগত কয়েক বছরে মালটার বিপ্লব ঘটায় জেলায় বর্তমানে ৪৫ হেক্টর জমিতে ৩১৯টি মালটার বাগান তৈরি হয়েছে। আর এই বিপ্লবের সঙ্গে যোগ হয়েছে হুমায়ুনের করা দেশের সবচেয়ে বড় মালটা বাগান।

Pirojpur

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মালটার কলম করা হয় বাতাবি লেবু গাছের সঙ্গে। আর বাতাবি লেবু দেশের সর্বত্র হওয়ায়, মালটার চাষও পিরোজপুরসহ সারা দেশে করা সম্ভব। এছাড়া নিচু ও পতিত জমি পাইপের মাধ্যমে খুব সহজেই লোকাল বালু দিয়ে ভরাট করার পর সেখানে খুব সহজে অন্যান্য গাছ না জন্মালেও, মালটা গাছ অতি সহজেই জন্মানো সম্ভব। তবে বালুর উপর কিছুটা মাটির আবরণ রাখতে হয়।

বর্তমানে হুমায়ুনের মালটা বাগানের খবর ঢাকা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরেও পৌঁছে গেছে। সম্প্রতি ওই দফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান হুমায়ুনের মালটা বাগান পরিদর্শন করেছেন।

তিনি জানান, পিরোজপুরে হুমায়ুনের মালটা বাগান সারা দেশের ফল চাষিদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত এবং এটি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় মালটা বাগান।

তিনি আরও জানান, পিরোজপুরে যেভাবে মালটার বিপ্লব ঘটছে, তা সারাদেশে সম্প্রসারিত হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও মালটা রফতানি করতে পারবো। এছাড়া দেশীয় মালটায় সহনীয় মাত্রায় সুগার থাকায় তা ডায়াবেটিক আক্রান্ত রোগীরাও খেতে পারেন।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

October 2016
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
Scroll To Top