বিনোদন ডেস্ক : সময়টা ভালোই যাচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ড্যাশিং ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমানের। টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডের পর অভিষেক হয়ে গেছে সাদা জার্সিতেও। তবে শনিবার দিনটি তার মোটেও ভালো যায়নি। টেস্ট অভিষেকে মাত্র ১৯ রান করে বিদায় নিয়েছেন। আউটও হয়েছেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে। অনফিল্ডে যখন এ অবস্থা, তখন অফফিল্ডেও একটি দুঃসংবাদ রয়েছে তার জন্য। মল্ট বেভারেজ (কোমল পানীয়) অস্কারের সঙ্গে তার চুক্তি বাতিল করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এ মর্মে এক ই-মেইল বার্তায় সাব্বিরকে বিষয়টি জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
অস্কার পানীয় নিয়ে করা সাব্বিরের বিজ্ঞাপনটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে মিডিয়াপাড়ায়। অনেকেই বিজ্ঞাপনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তবে কেউ কেউ বিতর্কিত মডেল নায়লা নাঈমের সঙ্গে বিজ্ঞাপন করায় সমালোচনাও করেছেন। তবে সব মিলিয়ে বিজ্ঞাপনটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল দর্শকদের কাছে। যদিও এ বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না বিসিবি।
এ কারণে সব টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনটির প্রচার বন্ধ করারও নির্দেশ দেয় বিসিবি। এমনকি অস্কারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে সাব্বিরকে আদেশ দেয়া হয়েছে বিসিবির পক্ষ থেকে। বিসিবির তরফে বিষয়টি ই-মেইল করে জানানো হয় সাব্বিরকে। একই মেইল বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজন, মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস, মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম, ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান, ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির ম্যানেজার ও কমার্শিয়াল কমিটির চেয়ারম্যান সাব্বির খানকেও দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বেভারেজ কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, ‘আসলে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিজ্ঞাপন করতে গেলে আমাদের অনেক নিয়ম-কানুন মানতে হয়। এ অনুযায়ী আমরা সব নিয়ম মেনেই সাব্বিরকে বিজ্ঞাপনের জন্য মনোনয়ন করেছিলাম। তাকে বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট, বিপরীতে কে থাকছে সব জানিয়েছিলাম। তখন সাব্বির বিসিবির অনুমতি নিয়েই সবকিছু করতে রাজি হয়। আমাদের এ বিজ্ঞাপন আগস্টের শেষ কি সেপ্টেম্বরের প্রথমে প্রচার শুরু হয়। অথচ এতদিন চলার পর হঠাৎ করেই এটা বন্ধ করতে গতকাল আমাদের একটি ই-মেইল দেয়। তারা সাব্বিরকে ৫ তারিখ জানিয়েছে, তবে আমাদের দিয়েছে গতকালই। আমরা সাব্বিরের ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম; কিন্তু বিসিবি বলেছে এখনই বন্ধ করে দিতে। আমরা সেটা করেও দিয়েছি।’
এ চুক্তি বাতিল করলে বেশ বড় ধরনের ক্ষতিরও সম্মুখীন হবেন সাব্বির। জানা গেছে, বিজ্ঞাপনটি করতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি। এমনকি বিজ্ঞাপন তৈরি খরচ ছাড়াও অন্য সব খরচ মিলিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খরচ করেছে অস্কার। এখন দেখার বিষয়, সাব্বির এ বিষয়টি কীভাবে সামাল দেন।
পুরো বিষয়টি অস্কার থেকে সাব্বিরকে জানানো হয়েছে বলেও জানান আনিসুর। বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সাব্বিরকে ই-মেইল করে জানিয়েছি। সে এখন চট্টগ্রামে টেস্ট খেলছে। সে যেদিন আমাদের সঙ্গে বসবে তখন আমরা এ নিয়ে আলোচনা করবো। কারণ এ বিজ্ঞাপনে আমাদের সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এখন এটা কীভাবে কী হবে, সে কীভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে দেবে তা নিয়ে আলোচনা করবো।’
অস্কারের ওই বিজ্ঞাপনের শুরুতে দেখা যায়, টিভি-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে সাব্বিরকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় এক পুলিশ অফিসারকে (নায়লা নাঈম) দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে খুঁজে বের করার। পুলিশবেশে নায়লা নাঈম সাব্বিরের বাড়িতেই তাকে খুঁজে পায়। তবে সেখানে আপত্তিকর কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিসিবির মতে, বিজ্ঞাপনটি অমার্জিত ও কুরুচিপূর্ণ। বাংলাদেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী এখানে কিছু আপত্তিকর দৃশ্য রয়েছে। আর যেহেতু সাব্বির রহমান বিসিবির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার, তাই এখানে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তারা। পরবর্তীতে কোনো বিজ্ঞাপন করার আগে বিসিবির অনুমতি নিয়ে করার কথাও উল্লেখ রয়েছে তাতে।
বিসিবির ৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বিসিবির কোনো চুক্তিভিত্তিক খেলোয়াড়কে অবশ্যই কোনো বিজ্ঞাপন করার আগে তাদের অনুমতি নিতে হবে এবং সে বিজ্ঞাপনটিতে কোনো কুরুচিপূর্ণ, বর্ণবাদী, অবমাননাকর, হিংসাত্মক কিংবা অন্য কোনো আক্রমণাত্মক কিছু থাকতে পারবে না।
গুঞ্জন রয়েছে, বিজ্ঞাপনের চিত্র নয়, নায়লা নাঈমের সঙ্গে বিজ্ঞাপন করাটাকেই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না বিসিবি। কারণ অনেক আগেই নায়লা নিজেকে বাংলাদেশের সানি লিওন হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। আর এতেই ঘোর আপত্তি বিসিবির। সাব্বিরের বিপরীতে কেন নায়লাকে নেয়া হলো?
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেন, ‘এ বিজ্ঞাপনটা শোভন নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে জাতীয় দলের যে চরিত্র, তার সঙ্গে এটা মানানসই না। ক্রিকেট আজ বাংলাদেশের গণমানুষের খেলা। জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এ কারণে আমাদের মনে হয়েছে এই বিজ্ঞাপনের কারণে ক্রিকেটের ভাবমূর্তির ক্ষতি হতে পারে, তাই বিজ্ঞাপনটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি।’
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের সচেতনতা নিয়ে একটি বিজ্ঞাপন করেন নায়লা। আর সেটা করার পরই সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এরপর হঠাৎ করেই বিসিবির মনে হলো, সাব্বিরের সঙ্গে নায়লার বিজ্ঞাপনটি আপত্তিকর।