স্পোর্টস ডেস্ক : পঞ্চম ও শেষ দিনের রোমাঞ্চের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম টেস্ট।
জিততে শেষ দিনে বাংলাদেশের চাই আরো ৩৩ রান। আর ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ২ উইকেট।
৫৯ রানে অপরাজিত থেকে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছেন সাব্বির রহমান। তার সঙ্গে ১১ রান নিয়ে দিন শুরু করবেন তাইজুল ইসলাম।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২৮৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ততটা ভালো করতে পরেনি তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। ৯ ওভারে দুজন স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৩৪ রান। দশম ওভারে ভাঙে ৩৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানের ইনিংস খেলা তামিম আউট হন মঈন আলীর বলে শর্ট লেগে গ্যারি ব্যালান্সকে ক্যাচ দিয়ে।
এরপর মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে ইংলিশ বোলারদের ভালোই সামাল দিচ্ছিলেন ইমরুল। দুজন সচল রাখছিলেন রানের চাকাও। কিন্তু ২১তম ওভারে দলীয় ৮১ রানে আদিল রশিদের বলে জো রুটকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইমরুল। ৬১ বলে ৬টি চারে তার ব্যাট থেকে আসে ৪৩ রান।
এরপর মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহ লাঞ্চের আগে আর কোনো উইকেট পড়তে দেননি। কিন্তু লাঞ্চ থেকে ফিরে গ্যারেথ ব্যাটির পরপর দুই ওভারে দুজনই সাজঘরে ফিরে গেলে চাপে পড়ে যায় স্বাগতিকরা।
মুমিনুলের আউটটি ছিল দুর্ভাগ্যজনক। ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা আবেদন করেছিলেন ক্যাচের, তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। রিভিউ নেয় ইংল্যান্ড। রিপ্লেতে দেখা যায়, মুমিনুলে ব্যাট স্পর্শ করেনি ব্যাটির বল। কিন্তু ক্যাচ না হলেও এলবিডব্লিউ হয়ে যান মুমিনুল (৪৭ বলে ২৭)।
ব্যাটির পরের ওভারে মাহমুদউল্লাহও ফিরে যান এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ (৩৬ বলে ১৭)। তখন বাংলাদেশের স্কোর ৪ উইকেটে ১০৮ রান।
দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। দেখেশুনেই খেলছিলেন দুজন। কিন্তু মইন আলী আক্রমণে ফিরেই বিদায় করেন সাকিবকে। ইংলিশ অফ স্পিনারের বলে জনি বেয়ারস্টোকে ক্যাচ দেন সাকিব (৩৯ বলে ২৪)। তখন ১৪০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ।
তবে ষষ্ঠ উইকেটে সাব্বির রহমানকে সঙ্গে নিয়ে দারুণভাবে প্রতিরোধ গড়েন অধিনায়ক মুশফিক। দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে লক্ষ্য ১০০ রানের নিচে নামিয়ে আনে স্বাগতিকরা। কিন্তু ব্যাটির লাফিয়ে ওঠা একটি বলে মুশফিক ব্যালান্সকে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ভেঙে যায় ৮৭ রানের বড় জুটি। ১২৪ বলে ৩টি চারে ৩৯ রান করেন মুশফিক।
মুশফিক ফিরলেও প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ফিফটি তুলে নিয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখেন সাব্বির। কিন্তু তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। বল হাতে আলো ছড়ানো মিরাজ ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ দ্বিতীয় ইনিংসেও। স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তিনি (১)। দ্রুত ফিরে যান কামরুল ইসলাম রাব্বিও। তখনও জয়ের জন্য ২ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশের দরকার ৪৮ রান।
এরপর তাইজুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন সাব্বির। আলোকসল্পতার কারণে অবশ্য পাঁচ ওভার বাকি থাকতেই দিনের খেলা সমাপ্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। সাব্বির-তাইজুলের অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেট জুটিতে এসেছে ১৫ রান। বাংলাদেশের আশা-ভরসা সব নির্ভর করছে এখন এই জুটির ওপরই। শেষ দিনে দুজন পারবেন বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক জয় এনে দিতে?
চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২১৫ রান তাড়া করে জিততে পেরেছে বাংলাদেশ, ২০০৯ সালে গ্রানাডায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। চতুর্থ ইনিংসে ২৮৬-এর বেশি রান তিনবার করেছে বাংলাদেশ, কিন্তু হেরেছে তিনবারই। এই মাঠে ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১৩ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ করেছিল ৩৩১।
এর আগে তৃতীয় দিনের ৮ উইকেটে ২২৮ রান নিয়ে রোববার চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে ইংল্যান্ড। তবে এদিন ২০ মিনিটের মধ্যে ১২ রানে ইংল্যান্ডের শেষ ২ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ১০৫.৫ ওভারে ২৯৩ (মঈন ৬৮, বেয়ারস্টো ৫২, রুট ৪০, ওকস ৩৬; মিরাজ ৬/৮০, সাকিব ২/৪৬, তাইজুল ২/৪৭)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৮৬ ওভারে ২৪৮ (তামিম ৭৮, মুশফিক ৪৮, মাহমুদউল্লাহ ৩৮, সাকিব ৩১, ইমরুল ২১, সাব্বির ১৯; স্টোকস ৪/২৬, মঈন ৩/৭৫, রশিদ ২/৫৮, ব্যাটি ১/৫১)।
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: ৮০.২ ওভারে ২৪০ (স্টোকস ৮৫, বেয়ারস্টো ৪৭, ওকস ১৯*; সাকিব ৫/৮৫, তাইজুল ২/৪১, রাব্বি ১/২৪ মিরাজ ১/৫৮)।