আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের বাজারে যাতে চীনের তৈরি পণ্য বয়কট করা শুরু হয়, সে জন্য ক্রমশই আন্দোলন জোরালো হচ্ছে।
কয়েকমাস আগে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সঙ্ঘ পরিবার প্রথম এই চীনা পণ্য বয়কটের ডাক দেয়, আর গত মাসে কাশ্মীরের উরি-তে জঙ্গী হামলার পর এই বয়কটের ডাক বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।কারণ ভারতীয়দের একাংশ মনে করছেন চীন যেভাবে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে তাতে চীনা পণ্য বয়কট করাই তাদের শাস্তি দেওয়ার একমাত্র পথ।
ভারত সরকার অবশ্য এই বয়কটের ডাককে প্রকাশ্যে সমর্থন করেনি – আর ভারতের বিশেষজ্ঞরাও বলছেন এটা বলা যত সহজ করা আদৌ ততটা সহজ নয়। রাজধানী দিল্লির সদর বাজারের দোকানি সুনীল আহুজা’র মতে বাজারে উপহারের জন্য চীনা জিনিসপত্রের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি।
“প্রথম কথা হলো চীনের তৈরি জিনিস সস্তা, দেখতে সুন্দর – দিতেও ভালো লাগে। সদর বাজারের সব ব্যবসায়ীই চীন থেকে জিনিস আনান। আমাদের এখানে যত খদ্দের আসেন চীনা জিনিস কিনে সবার মুখে একটাই কথা – একটা নতুন কিছু পেলাম, আর খুব সস্তায় পেলাম”-বলে দোকানদার সুনীল আহুজা।
কিন্তু এখন সেই ক্রেতাদের কারও কারও মুখে অন্য সুরও শোনা যাচ্ছে, তারা চীনা পণ্যের বদলে ভারতে তৈরি দেশি জিনিস দেখাতে বলছেন। সোশ্যাল মিডিয়া বা হোয়াটসঅ্যাপেও চলছে ভারতের বাজারে চীনা জিনিস বয়কট করার তুমুল প্রচারণা।
এ বছরের গোড়ার দিকে শাসক দল বিজেপির আদর্শগত অভিভাবক আরএসএস প্রথম এই ডাক দিয়েছিল, সম্প্রতি বিজেপির ঘনিষ্ঠ সন্ন্যাসী ও ৫০০০ কোটি রুপির দেশি শিল্পগোষ্ঠী পতঞ্জলির কর্ণধার বাবা রামদেবও একই আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “চীন যেভাবে ভারতের একতা ও অখন্ডতা বিপন্ন করার ঘৃণ্য খেলায় মেতেছে তাতে সব ভারতবাসীর উচিত তাদের জিনিস বর্জন করা। আমাদের ঘরে হনুমানজি-রামচন্দ্র-গণেশজির মূর্তিও এখন চীনে তৈরি হয়ে আসে, দিওয়ালির আলোকসজ্জাও চীনই তৈরি করে। এসব জিনিস কেনা বন্ধ করলে তবেই একমাত্র চীনকে বাগে আনা যাবে”।
ভারতে ব্যবসায়ীদের বৃহত্তম সংগঠন কনফেডারেশনস অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সও বলছে উরি-তে জঙ্গী হামলার পর ভারতে পাকিস্তান ও সেই সঙ্গে চীনের প্রতি বিদ্বেষ যেভাবে বেড়েছে তাতে দিওয়ালিতে চীনা জিনিস গতবারের তুলনায় অন্তত ৩০ শতাংশ কম বিক্রি হবে বলে তারা ধারণা করছেন।
তবে চীনা জিনিস কম বিক্রি হলেও আক্ষেপ নেই সমিতির প্রেসিডেন্ট প্রভিন খান্ডেলওয়ালের। তাঁর বক্তব্য, “উরিতে যেভাবে পাকিস্তান হামলা চালিয়েছে তা ভারতের দেশভক্তদের সরাসরি আঘাত করেছে। আর চীন সেই পাকিস্তানকে সমর্থন করছে।”
“সেই ভাবনা থেকেই কিন্তু এই ক্যাম্পেনের জন্ম যে যে সব দেশ ভারতের ভাল চায় না তাদেরকে এবার উচিত শিক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে”, বলছেন ব্যবসায়ী সংগঠনের এই নেতা। আধুনিক প্রজন্মের ক্রেতাদের মধ্যেও এমন ভাবনা রয়েছে।
দিল্লির অভিজাত কনট প্লেসে এক তরুণী বলছিলেন, “অন্য দেশে তৈরি জিনিস কিনে আমরা তাদের জিডিপি বাড়াতে সাহায্য করি। যারা পাকিস্তানকে সমর্থন করে তাদের তৈরি জিনিস কিনে আমরা কেমন দেশপ্রেম দেখাচ্ছি?”
এই বয়কটের ডাক ক্রমশ জনপ্রিয় হলেও ভারত সরকার এর সমর্থনে বা বিরোধিতায় এখনও প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি। তবে বিশ্লেষক ভারত ভূষণ বিবিসিকে বলছিলেন চীনা জিনিস বর্জন কিছুতেই সরকারি নীতি হতে পারে না।
মি: ভূষণের মতে, “এটা অত্যন্ত নির্বুদ্ধিতার কাজ, কারণ এই ধরনের বয়কট মানা সম্ভবই নয়। আর চীন যদি আমাদের পাল্টা একই ধরনের পদক্ষেপ নেয় তাতে ক্ষতি আমাদেরই – কারণ তারা ভারত থেকে যে সব জিনিস আমদানি করে সেগুলো অন্য দেশ থেকেও নিতে পারে”।
“আমাদের সরকার ভুলক্রমেও যদি বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়, তাতে চীন অবশ্যই ভারতকে ডব্লিউটিও-তে টেনে নিয়ে যাবে যেখানে আমাদের হার অবধারিত”, সতর্ক করে দিয়েছেন ভারত ভূষণ।
ফলে বয়কটের ডাক দেওয়াটা যত সহজ – বাজারে সেটা প্রয়োগ করা শেষ পর্যন্ত হয়তো তত সহজ নয়।
তবে তারপরও দীপাবলীর মৌসুমে অনেক ভারতীয় চীনা জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকছেন – কারণ তারা মনে করছেন দেশপ্রেমীদের এমনই করা উচিত।বিবিসি বাংলা