গত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে স্কুল শিক্ষার্থীদের হিসাব ১৫ লাখের ওপরে। গত মার্চে ছিল ১৪ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০টি অ্যাকাউন্ট। সে হিসাবে তিন মাসে এক লাখ ৫২ হাজার অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এসব হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ এক হাজার ৪শ কোটি টাকার বেশি।
হিসাবধারী অ্যাকাউন্টের প্রায় ৪০ শতাংশই ইসলামী ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী গ্রামীণ এলাকায় এখনো পিছিয়ে আছে এই ব্যাংকিংসেবা। স্কুল ব্যাংকিংয়ের মোট অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৬১ শতাংশই শহরে, মাত্র ৩৯ শতাংশ রয়েছে গ্রামাঞ্চলে। এ ছাড়া ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা পিছিয়ে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কুলের ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীদের সঞ্চয়ের অভ্যাসে উৎসাহিত করতে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মাত্র ১শ টাকা জমা দিয়ে নিজের নামে হিসাব খুলতে পারে শিক্ষার্থীরা। এতে একদিকে শিক্ষার্থীদের অর্থ জমা হচ্ছে, অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকেরও আমানত বাড়ছে। দেশে কার্যরত ৫৭টি
তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে বর্তমানে ৫৬টি ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক আবুল বশর বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যাংকমুখী করে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাপক ভ‚মিকা রাখছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন সময় প্রচারমূলক কর্মকাÐ চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব বাড়ছে। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মধ্যে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে ‘চাইল্ড এন্ড ইউথ ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনালের’ (সিওয়াইএফআই) ‘কান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভ‚ষিত হয় বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, সারা দেশে বিভিন্ন ব্যাংকে ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩৬টি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়েছে। যার মধ্যে শহরের ব্যাংক শাখাগুলোতে ৯ লাখ ৪২ হাজার ৩৮৮টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আর গ্রামীণ এলাকার শাখাগুলোতে অ্যাকাউন্ট রয়েছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪৪৮টি। শহরের অ্যাকাউন্টগুলোতে টাকার পরিমাণও বেশি।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলায় শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। আর আমানতের পরিমাণের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড।
সর্বোচ্চ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৬টি, যা মোট অ্যাকাউন্টের প্রায় ১৬ ভাগ। এ ছাড়া ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে দুই লাখ ১৪ হাজার ৭৬৪টি, অগ্রণী ব্যাংকে এক লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৬টি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে এক লাখ ২৭ হাজার ৯৫৭টি এবং উত্তরা ব্যাংকে ৮৫ হাজার ৩৮৭টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, জমানো টাকার দিক থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের স্কুল ব্যাংকিংয়ে জমা পড়েছে ৪২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা মোট জমার প্রায় ৩০ শতাংশ। এর বাইরে ইসলামী ব্যাংকে ১৩৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকে ১১৬ কোটি টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৭৫ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংকে ৬৮ কোটি টাকা জমা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে বিভিন্ন ব্যাংকে স্কুলের ১৪ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ জন শিক্ষার্থীর অ্যাকাউন্ট ছিল। তিন মাসে তাদের অ্যাকাউন্ট বেড়েছে প্রায় এক লাখ। জুন পর্যন্ত স্কুল শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ব্যাংকে এক হাজার ৪১৯ কোটি টাকা জমিয়েছে। মার্চে শিক্ষার্থীদের জমানো টাকার পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪৪১ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলের ব্যাংক শাখার মাধ্যমে খোলা স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের তুলনায় শহরাঞ্চলের ব্যাংক শাখার মাধ্যমে খোলা স্কুল ব্যাকিং হিসাবের সংখ্যা প্রায় ৫৭.৭৩ শতাংশ বেশি। ব্যাংকে জমার ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলের জমার পরিমাণ প্রায় ২ দশমিক ৩১ বেশি। এ বছরের জুন পর্যন্ত ৮ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯৩ জন স্কুলছাত্র তাদের ব্যাংক হিসাবে ৭৭৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা জমিয়েছে। আর ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪৩ জন স্কুলছাত্রী জমিয়েছে ৬৪৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। জুন পর্যন্ত গ্রামের পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ৪৪৮ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ব্যাংকে ৩২৯ কোটি টাকা জমা রেখেছে। শহরের ৯ লাখ ৪২ হাজার ৩৮৮ জন শিক্ষার্থী জমা করেছে এক হাজার ৯০ কোটি টাকা।