Monday , 23 December 2024
নিউজ টপ লাইন
ক্যানসার চিকিৎসায় অল্পতেই অনেক সময় বেশি ফল হতে পারে

ক্যানসার চিকিৎসায় অল্পতেই অনেক সময় বেশি ফল হতে পারে

টম মাগুআয়ার সব সময় ভাবতেন, তাঁর যদি ক্যানসার হয় কখনো, সবচেয়ে আগ্রাসী চিকিৎসাটাই করাবেন। ‘আপনি নিজেকে ধ্বংস করেন। তারপর ফিরে আসতে পারবেন,’ তিনি বললেন।

এ বছরের গোড়ার দিকে টম মাগুআয়ারের মূত্রথলিতে যখন ক্যানসার ধরা পড়ল, তখন পরীক্ষার মুখে পড়ল তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি। ক্যানসারটা মূত্রথলির দেয়াল অবধি থাবা বিস্তার করেছিল। প্রচলিত চিকিৎসায়, তিনি জানলেন, সাধারণত মূত্রথলি কেটে বাদ দেওয়া হয়। তাঁকে মূত্র জমা করার জন্য হয় স্থায়ীভাবে একটা ব্যাগ পরে থাকতে হবে, অথবা পাকস্থলী থেকে নতুন মূত্রথলি তৈরি করিয়ে নিতে এক জটিল অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। দুটি সম্ভাবনাই ৬৩ বছর বয়সী এই হাইকিং-পাগল, স্কুবা ডাইভারের পিলে চমকে দিল।

এরপর ফিলাডেলফিয়ার ফক্স চেইজ ক্যানসার সেন্টারের চিকিৎসকেরা একটা নতুন পদ্ধতির কথা জানালেন তাঁকে। এখনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল স্তরে আছে। নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটা রোগীদের নিবিড় পরিচর্যায় থেকে মূত্রথলি রেখে দেওয়ার সুযোগ দেয়।

কয়েক মাস আগে ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার পর থেকে, ‘আমি হাওয়ায় উড়ছি,’ ওয়াশিংটন পোস্টকে বললেন তিনি। ‘আমার মনে হয় সব সময়েই যে সব ব্যাপারে আপনাকে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে হবে, তার কোনো মনে নেই।’

ক্যানসারের চিকিৎসা বহুদিন ধরেই রোগী ও চিকিৎসকদের বিধ্বংসী সব পদ্ধতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। হুমকির প্রচণ্ডতার পাশাপাশি রোগ সম্পর্কে সীমিত ধারণা আর ক্যানসার বর্ণনায় ধ্বংসাত্মক ভাষার ব্যবহার স্থূল শক্তিপ্রয়োগের ধারণাকে যুক্তিসংগত করেছে।

‘ঐতিহাসিকভাবেই ‘‘ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’’ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির মূল সুরই ছিল যত কড়া তত ভালো এবং ধ্বংস করাই কাম্য,’ বললেন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট জাস্টিন বিকল্মান।

কিন্তু এখন ‘লড়াকু ক্যানসার রোগী’ অভিধাটি পাল্টেছে। কেননা, ‘লড়াইয়ে হার মানা’ রোগীদের এটা যেমন প্রচ্ছন্নভাবে দোষী করে, তেমনি কথাটা ক্যানসার চিকিৎসায় যুগান্তকারী নতুন জীবতাত্ত্বিক উপলব্ধি, উন্নত চিকিৎসা আর মলিক্যুলার টেস্টগুলো সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা দিতে পারে না।

নয়া দৃষ্টিভঙ্গির মোদ্দা কথা, সব ক্যানসার যে এক নয়, সেটি বুঝতে পারা। কিছু ক্যানসার সারাতে আঘাত হানতে হয়, কিন্তু অন্যগুলো চাহিদানির্ভর থেরাপি কিংবা নিছক পর্যবেক্ষণেই চিকিৎসা করা যায়। নতুন উপকরণ আর প্রমাণে সুসজ্জিত অনকোলজিস্টরা ভালোর চেয়ে ক্ষতি করতে পারে বেশি—এমন বিষাক্ত ওষুধ ও ব্যয়সাধ্য পদ্ধতি এড়িয়ে চলছেন। ‘কখন চিকিৎসা করতে নেই জানাটা একটা বিরাট ওষুধ,’ বলছেন বিকল্মান।

তবু অনেক রোগী, এমনকি কোনো কোনো ডাক্তারের জন্যও বিপদের মুখে সহজ ব্যবস্থা নেওয়া আবেগিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে কঠিন হয়ে পড়ে। ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট রেশমা জাগসি জানান, তিনি প্রতিদিন দেখেন, নারীরা প্রয়োজন না থাকলেও তাঁদের স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় জোরালো চিকিৎসা খোঁজেন। জাগসি বললেন, ‘ওরা বলে, “আমাকে আমার ছেলেমেয়েদের জন্য বেঁচে থাকতে হবে…”।’

সহজ পদ্ধতির পক্ষে জোরালো নজির ক্রমে সাংস্কৃতিক ভাবনা ও চিকিৎসারীতিতে পরিবর্তন আনছে। এই জুনে পরীক্ষামূলক চিকিৎসা নিয়ে এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, দুই-তৃতীয়াংশ নারী স্তন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে কেমোথেরাপি এড়াতে পারেন। অনেক পুরুষ কম ঝুঁকিপূর্ণ প্রোস্টেট ক্যানসারের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের বদলে এখন আরও বেশি করে ‘সক্রিয় নজরদারি’ ব্যবস্থা গ্রহণ করে যৌন অক্ষমতার মতো জটিলতা এড়াচ্ছেন। এ ছাড়া হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস থেকে গলায় যে ক্যানসার হয়, এখন জানেন চিকিৎসকেরা, এই রোগের ধরন অন্যগুলোর থেকে থেকে আলাদা। এটা নিষ্ঠুর চিকিৎসাপত্র কমিয়ে আনার পাশাপাশি বেদনাদায়ক চেহারা বিকৃতির সম্ভাবনা হ্রাসের সুযোগ দিচ্ছে।

ফুসফুসের ক্যানসারের বেলায় অনেক রোগীর জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ইমিউনোথেরাপির ব্যবহার শুরু হয়েছে। এটা কেমোথেরাপির চেয়ে কম বিষাক্ত। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, পরিণত কিডনি ক্যানসারের ক্ষেত্রে অনেকে সার্জারির বদলে ওষুধের চিকিৎসা করাতে পারছেন। ওষুধ খেয়েই অনেকের রোগ সারছে।

সব ধরনের ক্যানসার চিকিৎসায় অবশ্য ‘ডি-এস্কেলেশ’ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে না। সবচেয়ে পরিচিত ধরনের থাইরয়েড ক্যানসার কম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও প্রায়ই অযথা অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। অন্যদিকে, প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার এতটাই প্রাণঘাতী, চিকিৎসকেরা আরও জোরালো চিকিৎসার দিকে ঝুঁকছেন। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়, কোনো কোনো রোগী, যাঁরা চারটা ওষুধের মিশ্রণে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাঁরা এক ওষুধ গ্রহণ করা ব্যক্তিদের থেকে বেশি দিন বাঁচছেন।

কম নিবিড় চিকিৎসার জন্য ঠিক রোগী বেছে নেওয়াটাই আসল। একজন প্রোস্টেট ক্যানসার রোগীর বিআরসিএ জিন মিউটেশন শুরু হওয়ার মানে ক্যানসার সম্ভবত বাড়বে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। ফলে তাঁর চিকিৎসা দরকার পড়বে, নিছক পর্যবেক্ষণে চলবে না। লক্ষ্যনির্ভর চিকিৎসা ঠিক করার জন্য টিউমারের অভিমুখ এবং সেটা সুনির্দিষ্ট একটি চিকিৎসায় কেমন সাড়া দেবে, তা বলতে পারে—এমন জীবতাত্ত্বিক লক্ষণ বা ‘বায়োমার্কার’ খুঁজে বের করা জরুরি হয়।

‘এই অনকোলজির মূল ব্যাপার ঠিক চিকিৎসাটা বেছে নেওয়া,’ বলছেন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর নর্ম্যান ‘নেড শার্পলেস। ‘কেউ কেউ কেমোথেরাপি থেকে উপকৃত হবেন, কেউ কেউ হবেন না।’ যত বেশ মলিকিউলার টেস্ট বাজারে আসবে, তিনি বলেন, ক্যানসার ও রোগীদের তত ভালোভাবে যথাযথ গ্রুপে মেলানো সম্ভব হবে।

ক্যানসার মূত্রথলির পেশিতে থাবা বসিয়েছে জানার পর মাগুআয়ার ঠিক করেছিলেন থলিটা কেটেই ফেলবেন। ওটার জায়গায় তাঁর পাকস্থলী থেকে একটা ‘নয়া মূত্রথলি’ বানিয়ে দেবেন ডাক্তাররা, যাতে ছেলের সঙ্গে স্কুবা ডাইভিং করতে পারেন তিনি।

‘বেঁচে থাকার জন্য যদি এই দাম চুকাতে হতো, তাহলে সেটাই করতে যাচ্ছিলাম আমি,’ তিনি বললেন। কিন্তু ফক্স চেইজে তিন রাউন্ড কেমোথেরাপি নেওয়ার পর জানতে পারেন, মূত্রথলি রেখে দেওয়ার ট্রায়ালে অংশ নিতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজনীয় বায়োমার্কারগুলো তাঁর আছে। ‘খবরটা হতভম্ব করে দিয়েছিল আমাকে,’ মাগুআয়ার বলেন। ‘জীবনে কখনো এত সৌভাগ্যবান মনে হয়নি নিজেকে।’

সবচেয়ে বড় কথা, এখন এই চিকিৎসায় কাজ হয় কি না। ট্রায়ালের ফল আগামী দুই-তিন বছরের আগে জানা যাবে না, বলছেন ফক্স চেইজের ব্লাডার ক্যানসার ট্রায়ালের প্রধান অনকোলজিস্ট ড্যানিয়েল গেইনিসমান। ‘আসল প্রশ্ন হচ্ছে: এটা কি কাজ করে?’ বললেন তিনি। ‘যদি ছয় মাস কি এক বছর পর আবার ফিরে আসে ক্যানসার কিংবা শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তো লাভ হলো না।’

ফক্স চেইজ অবশ্য একাই ধারণা পরখ করছে না, আরও মেডিকেল সেন্টার বায়োমার্কার ব্যবহার করে চিকিৎসা দিতে চেষ্টা করছে। যদি নয়া কৌশল কাজ করে, বড় মাপের ট্রায়ালে প্রমাণিত হয়, তাহলে ‘প্রচলিত ক্যানসার চিকিৎসার ধরনটাই যাবে পাল্টে। আর সেটাই হবে সত্যিকারের ডি-এস্কেলেশন’।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

সর্বশেষ নিউজ

ফেসবুক পেইজ The Daily Neighbour

ডেইলি নেইবার আর্কাইভ

September 2018
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
Scroll To Top