ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিমে বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড থেকে জসীমউদ্দীন মোড় পর্যন্ত ফুটপাতে থাকা তিন শতাধিক গাছ কাটা হচ্ছে। বিপুলসংখ্যক এই গাছ কাটার কাজ শুরু হলেও গাছগুলো কেন বা কারা কাটাচ্ছেন, এ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর ঢাকা বিভাগ উভয় পক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই বলছেন, ‘আমরা গাছ কাটছি না।’ ডিএনসিসি বলছে, গাছ কাটছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। আর সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, ডিএনসিসি ইউটার্নের জন্য গাছগুলো কাটছে।
তবে গাছ কাটার জন্য একাংশের ইজারা পাওয়া ইস্কান্দার টিম্বার্সের মালিক ফিরোজ ইস্কান্দার বলেছেন, তাঁরা সামাজিক বন বিভাগ ঢাকা অঞ্চলের মহাখালী কার্যালয় থেকে গাছ কাটার কার্যাদেশ পেয়েছেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সড়ক সম্প্রসারণকাজের প্রয়োজনে গাছ কাটা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে কথা বলতে সামাজিক বন ঢাকা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. রকিবুল হাসান ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা উম্মে হাবিবার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। মুঠোফোন নম্বরে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও এর কোনো উত্তর তাঁরা দেননি।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ডের কিছুদূর সামনে থেকে উত্তরার জসীমউদ্দীন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়ক ও সার্ভিস সড়কের মাঝে ফুটপাতে থাকা গাছগুলো কাটা হচ্ছে। ফুটপাতে থাকা ছোট-বড় নারকেল, মেহগনিসহ সব ধরনের গাছ কাটছেন শ্রমিকেরা। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১০০ গাছ কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকেরা। কাটা গাছগুলোর বেশির ভাগই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বাকি গাছগুলোও কাটার জন্য ডালপালা ছেঁটে প্রস্তুত করতে দেখা গেছে।
ইজারাদার ইস্কান্দার টিম্বার্সের মালিক মো. ফিরোজ বলেন, তিনি জসীমউদ্দীন বাসস্ট্যান্ডের আগে স্কলাস্টিকা স্কুল-সংলগ্ন পদচারী-সেতু পর্যন্ত অংশের গাছ কাটার কার্যাদেশ পেয়েছেন। এই অংশে প্রায় দুই শ গাছ। সড়ক সম্প্রসারণের জন্য গাছগুলো কাটা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, কয়েক দিন আগে মাত্র নতুন করে ওই ফুটপাতে সড়কবাতি বসানোর জন্য লোহার খুঁটি বসানো হয়েছে। যদি সড়ক সম্প্রসারণ হয়, তাহলে সার্ভিস সড়ক ও মূল সড়কের মাঝে আর ফুটপাত থাকবে না। তা ছাড়া সড়ক বড় করার পরিকল্পনা আগে থেকে থাকলে সেখানে নতুন করে সড়কবাতির জন্য লোহার খুঁটি বসানো হয়েছে কেন? এমন প্রশ্নও এখন স্থানীয় ব্যক্তিদের মনে।
উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, সড়ক বড় করার জন্য গাছ কাটা হলে ফুটপাতে থাকা সড়কবাতির খুঁটিও সরাতে হবে। কিন্তু কিছুদিন হলো, খুঁটিগুলো এখানে বসানো হয়েছে। গাছ ও খুঁটি—সব কটিই একই ফুটপাতে আছে।
আরেকজন পথচারী বলেন, উন্নয়নের অজুহাতে সব গাছ একে একে কেটে ফেলা হচ্ছে। জসীমউদ্দীনের গাছগুলোই পুরো উত্তরায় অবশিষ্ট ছিল। এগুলো কাটা হয়ে গেলে সড়কের পাশে আর ছায়া মিলবে না বলেও তিনি জানান।
গাছ কাটার বিষয়ে জানতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ইউটার্ন প্রকল্পের পরিচালক নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাছ কেন কাটা হচ্ছে, আমি জানি না। ইউটার্ন নির্মাণের জন্য যেসব গাছ কাটার প্রয়োজন ছিল, সেগুলো আগেই বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। যথারীতি সেখানে নির্মাণকাজ শুরুও হয়েছে।’ সড়ক ও জনপথ বিভাগ গাছগুলো তাদের প্রয়োজনে কাটতে পারে বলেও তিনি জানান। তবে ‘সওজের কোনো প্রয়োজনে গাছ কাটা হচ্ছে না’ বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো গাছ কাটছি না। সিটি করপোরেশন ইউটার্ন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য গাছ কাটছে। ইজারাদারের বিষয়টি জানানো হলেও তিনি বলেন, ইজারাদার ভুল বলতে পারে। সড়ক সম্প্রসারণের জন্য কোনো গাছ কাটা হচ্ছে না।